জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত দুটি হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি হিসেবে পরিচিত মামুনুর রশিদ জুবিন সম্প্রতি বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগে কেবিন ক্রু হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে যে, তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ কেবিন ক্রু এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও।
জানা গেছে, জুবিনের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে বিমানের কেবিন ক্রুদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন ও বিভিন্ন অন্যায় কার্যক্রমে তার বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। এছাড়া, সাবেক ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নে তার সক্রিয় অংশগ্রহণের অভিযোগও উঠেছে।
বিমানের পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে নতুন পরিচালক (প্রশাসন) যোগদানের পর, জুবিনকে পুনরায় ফ্লাইটে বহাল করে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হত্যা মামলার বিষয়টি উপেক্ষা করে। এতে বিমানের কর্মী মহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিমানের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের পরিচালক আবদুর রফিক এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “কাকে কখন ফ্লাইট দেওয়া হবে, আমি জানি।” তবে, হত্যা মামলার আসামি কিভাবে ফ্লাইটে যাবে, এ বিষয়ে তার মন্তব্য ছিল বিভ্রান্তিকর এবং আক্রমণাত্মক।
জানা গেছে, এই ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে বিমানের শিডিউলিং নিয়ন্ত্রণ করে স্মাগলিংয়ের অভিযোগেও জড়িত। বিমানের ক্রুদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের সময়ে সে সরকারের বিভিন্ন উঁচু পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ফ্লাইটে যাতায়াত করতেন, এবং তাদের সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুকে আপলোড করে বিমানে ত্রাস সৃষ্টি করেন।
এছাড়া, জুবিনের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাকাণ্ডের মামলায় তার নাম রয়েছে, যেখানে সাবেক এমপি মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ ৬২ জনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি, তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার জন্য বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অবশ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বিমানের কর্তৃপক্ষ তাকে সব ধরনের ফ্লাইট ডিউটি থেকে অপসারণ করে। কিন্তু বিমানের প্রশাসন শাখার একটি সিন্ডিকেটের সহায়তায় তিনি গত সপ্তাহে সৌদি আরবের রিয়াদ স্টেশনে ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ে বিমানের অভ্যন্তরীণ তদন্ত এবং উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্টরা, যাতে এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসে এবং প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া যায়।