জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে জোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন। চলতি ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। দল ঘোষণার আগে জনমানুষের প্রত্যাশা যাচাই করতে তারা মাঠে নেমেছেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের মতামত সংগ্রহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলটি আত্মপ্রকাশ করবে। আহ্বায়ক কমিটির শর্টলিস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম রয়েছেন। এছাড়া, দল এবং অন্তর্বর্তী সরকার উভয় পক্ষের সুবিধা বিবেচনা করে আরও একজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করে নতুন দলে যোগ দিতে পারেন। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ভাই মাহবুব আলমের আসার সম্ভাবনাও রয়েছে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্যসচিব আরিফ সোহেল ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমা—এরা সকলেই আহ্বায়ক কমিটির সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী বিকল্প গড়ে তুলতে তারুণ্যনির্ভর রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।”

‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ কর্মসূচির আওতায় জনমত যাচাই করা হচ্ছে। প্রথম দিনের অনলাইন জরিপেই এক লক্ষ মানুষ মতামত জানিয়েছেন। পরবর্তী দিনগুলোতে অনলাইন ও অফলাইনে মিলিয়ে পাঁচ লক্ষ মানুষের মতামত সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

মতামত সংগ্রহের ফরমে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রাখা হয়েছে: ১. আপনার মতে কোন তিনটি কাজ করলে দেশ বদলে যাবে? ২. নতুন রাজনৈতিক দলের কাছে আপনার জীবনের কোন সমস্যার সমাধান চান? ৩. নতুন দলের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী? ৪. দলের নাম কী হতে পারে? ৫. দলের প্রতীক কী হওয়া উচিত?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম জনমত যাচাই করে রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রিকশাচালক, দোকানদার, দিনমজুর, গৃহকর্মী, শিক্ষক, ঝাড়ুদারসহ সর্বস্তরের মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে, যাতে নতুন দল জনগণের প্রকৃত চাহিদার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।

নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই আসতে পারে বলে নেতারা আশাবাদী।