ঢাকা , বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :

রাতভর বিক্ষোভ-ভাংচুর এজলাসে আগুন হলো না পিলখানার বিস্ফোরক মামলার শুনানি

পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতের এজলাস কক্ষ পুড়ে যাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার পিলখানার বিস্ফোরক মামলার শুনানি হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বোরহান উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আদালত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিচারকাজ করা সম্ভব নয়। “বিজ্ঞ বিচারক এসেছিলেন। তিনি পুড়ে যাওয়া ভবন পরিদর্শন করেছেন। এরপর চলে গেছেন।” মামলার শুনানির দিন পরে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাড়ে পনের বছর আগে পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় এদিন আলিয়া মাদ্রাসার বিশেষ আদালতে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালত বসানোর প্রতিবাদে রাতভর আন্দোলনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই রাতে আগুনে পুড়েছে অস্থায়ী আদালতের এজলাসসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পুড়ে যাওয়া এজলাস কক্ষ পরিদর্শন করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউশন টিম, আইনজীবী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। বিচারক রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামীপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ১২টা ১০ মিনিটে চলে যান।
প্রসিকিউশন টিমের প্রধান বোরহান উদ্দিন বলেন, “আজকের প্রেক্ষাপটে আদালত পরিচালনা করার মত পরিবেশ নাই। বিচারক এটা অবহিত হয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখটা কবে হবে- আমাদের ও আসামীপক্ষের আইনজীবীদের সাথে কথা বলে বিচারক ঠিক করবেন। “তারিখটা আজকেই জানিয়ে দেয়া হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তারিখ নির্ধারণ করা হবে। জামিন শুনানির বিষয় নিষ্পত্তি হোক- এটা নিয়ে আমরা সবাই আন্তরিক ছিলাম। তা তো হলো না।”

অস্থায়ী আদালতের আগুনের কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি লালবাগ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “ভোরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আগুনে এজলাস কক্ষের চেয়ার, টেবিল, এসিসহ সবকিছু পুড়ে গেছে।”
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, “ভোর ৪টা ২২ মিনিটে বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে আগুনের খবর পেয়ে আমাদের দুইটি ইউনিট পাঠানো হয়।
কিন্তু সেখানে গিয়ে লোকজনের বাধার মুখে আমাদের কর্মীরা ভেতরে ঢুকতে পারেনি। “পরে ভোর ৫টার পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভেতরে গেলেও কাজ করতে হয়নি। ততোক্ষণে এজলাস কক্ষ পুড়ে গেছে।”
বুধবার রাত থেকে শিক্ষার্থীরা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থান নেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার, বকশীবাজার অরফানেজ রোড ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেন। পরে পরিস্থিতে নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যায় সেনবাহিনী ও পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিচার কাজ চলমান থাকলে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘœ হয়। এর আগে বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরও সমাধান হয়নি। দুপুর সোয়া ১টার দিকে মাদ্রাসা মাঠের ফটক বন্ধ দেখা গেছে। ভেতরে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলছিল।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নবেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামীর মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।

হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামী মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামী আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামীর খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এই হত্যাকা- পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।
অস্থায়ী আদালতে আগুন দিল কে, কখন?
পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতের এজলাস কক্ষটি কারা পুড়িয়ে দিয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আগুনের কারণ নিয়ে মুখ খুলতে চায় না ফায়ার সার্ভিস। পুলিশ বলছে, ৫ আগস্টের পর সেই কক্ষে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে তারা শুনেছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, একদল ব্যক্তি বুধবার রাতে ওই আগুন দিয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে পিছিয়ে পড়া বাঙালি মুসলমানদের জন্য ১৭৮০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা। সার্ধশত বছর বাদে দেশভাগ হলে মাদ্রাসাটির নতুন ঠিকানা হয় লক্ষ্মীবাজারের ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ)। পরে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে সরিয়ে নেওয়া হয় বকশীবাজারের বর্তমান স্থানে।
অস্থায়ী আদালত বসানো মাঠটি নিয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সঙ্গে আলিয়া মাদ্রাসার দ্বন্দ্ব বহুদিনের। ২০০৯ সালের শুরুতে তাদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর আসামীদের বিচারে মাঠটিতে অস্থায়ী আদালত বসানো হয়। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও বিচার হয়েছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এজলাস কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। বিশাল কক্ষটিতে সারি সারি গ্রিলের খাচা বসানো, যেখানে একসঙ্গে হাজারখানেক আসামীকে বসানোর ব্যবস্থা ছিল। আদালত কক্ষের তাপ নিরোধক আচ্ছাদন, এসি, এজলাসের চেয়ার-টেবিল কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঘুলঘুলির কাঁচগুলোও ভেঙেচুরে রাখা হয়েছে। তবে কে করল এই কাজ, তার জবাবে সবাই লা জবাব। পুলিশ বলছে, তাদের কাছে আগুনের কোনো তথ্যই নেই। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের কাছে জানতে যাওয়া হয়েছিল, “অস্থায়ী আদালতে কে আগুন দিল?” তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “কখন আগুন দিয়েছে?” তাকে বলা হয়, বুধবার ভোররাতে এখানে আগুন লাগার তথ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
লালবাগের ডিসি বলেন, “এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি জানি না, আপনারা কোথা থেকে তথ্য পেলেন। “আমাকে আরো কয়েকজন সাংবাদিক ভাই ফোন দিয়েছিলেন। কারা আগুন দিল, কখন আগুন দিল- এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”
ডিসি জসীম বলেন, “সেখানে ধোঁয়ার খবর পেয়ে আমাদের লোক গিয়েছিল। সেখানে আজকের প্রোগ্রামের কিছু আয়োজন চলছিল, মাটির কিছু ঘাসলতা পুড়ছিল। আমাদের লোক আদালত ভবনে কোনো আগুন পায়নি।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আপনারা কি কাউকে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘এখানে কখন আগুন লেগেছে’?”
ছাত্রদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, বুধবার এখানে আগুন লাগার কথা তারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে।
তখন ডিসি জসীম বলেন, “আমাদেরকে অনেকে বলেছে, ওখানে আগুন দেওয়া হয়েছিল ৫ (আগস্ট) তারিখের ঘটনার পর।” তবে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা বলছেন, বুধবার রাতে তারা সেখানে আগুন দেখেছেন।
দুপুরে এজলাস কক্ষটিতে ছবি তোলার সময় আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, কাজ শেষ হয়েছে কি না। তিনি ওই কক্ষে তালা মেরে দেয়ার অপেক্ষায় আছেন বলে জানান। টিভি স্টেশনের সংবাদকর্মীরা তখন আশরাফুলকে জানান, ২টায় ‘লাইভ’ শেষ করে তারা চলে যাবেন।
তখন আলাপচারিতায় আশরাফুল বলেন, বুধবার মধ্যরাতে কয়েকজন লোক এসে ওই মাঠের ফটকে লাগানো তালা ভাঙা বা কাটার চেষ্টা করেন। ওই সময় ছাত্ররা মাঠে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীর আয়োজনে ব্যস্ত ছিল, যে অনুষ্ঠান গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হয়েছে।
এই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ফটকে তালা ভাঙা বা কাটার চেষ্টা দেখতে পেয়ে ওই লোকগুলোকে ধাওয়া দেয় ছাত্ররা। এরপর তারা নিজেদের মাঠ রক্ষার দাবিতে পাশের সড়কে ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ অবস্থান নেয়। স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তারাও সেখানেই ছিলেন। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ছাত্ররা সেখানে ছিল বলে আশরাফুল দাবি করেন।
ওই লোকগুলো কারা, এ প্রশ্নের উত্তরে আশরাফুল বলেন, “আমরা মনে করি, তারা সরকারি কোনো সংস্থার লোক।”
তাহলে আগুন কে দিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সেটা আমরা জানি না। আমরা যখন রাস্তায় ছিলাম, তখন হয়তো তৃতীয় কোনো পক্ষ এসে সুবিধা নিয়েছে।”
অস্থায়ী আদালতের আগুনের কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি লালবাগ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “ভোরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আগুনে এজলাস কক্ষের চেয়ার, টেবিল, এসিসহ সবকিছু পুড়ে গেছে।”
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, “ভোর ৪টা ২২ মিনিটে বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে আগুনের খবর পেয়ে আমাদের দুইটি ইউনিট পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে লোকজনের বাধার মুখে আমাদের কর্মীরা ভেতরে ঢুকতে পারেনি। “পরে ভোর ৫টার পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভেতরে গেলেও কাজ করতে হয়নি। ততোক্ষণে এজলাসকক্ষ পুড়ে গেছে।”
আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র মুক্তার হোসেনের সঙ্গে দেখা হল মাঠের কোণে। তিনিও বলছেন, ছাত্ররা রাস্তায় ছিল; এ সময় কে বা কারা এসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে- তারা সেটা জানেন না।
পুড়ে যাওয়া স্থাপনাটির পাহারায় পুলিশ বা সরকারি কোনো সংস্থার সদস্যদের দুপুরে দেখা যায়নি। তখন মাঠে মাদ্রাসার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানের পর একজন ছাত্র অস্থায়ী আদালত কক্ষটি তালা মেরে চলে যান।
মাঠের উল্টো পাশের চা দোকানি সবুজ মিয়া বলেন, “গেছে কাল রাইতে আগুন দিছিল বলে হুনছি। আমি আছিলাম না।”
পোড়া এজলাস কক্ষ দেখতে এসেছিলেন পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলার আসামীপক্ষের এক আইনজীবী। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেছেন, তার দুজন আসামীর শুনানি হওয়ার কথা ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। প্রথমে তাদের জানানো হয়েছিল, সেশন জজ আদালতে শুনানি হবে। পরে জানানো হয়, কেরানীগঞ্জে অস্থায়ী আদালতে শুনানি হবে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি জানতে পারেন, শুনানি হবে বকশীবাজারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারেন, আদালত কক্ষটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে অস্থায়ী বিশেষ আদালত সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে সড়ক অবরোধ করেন আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। ১০ ঘণ্টা পর গতকাল বেলা ১১টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যান। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত আদালতের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। অবরোধের কারণে আশপাশের রাস্তায় দেখা দেয় যানজট।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পুলিশের চকবাজার অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. মাহফুজার রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী বিশেষ আদালতের বিচারকের সঙ্গে দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের কথা বলতে দিতে হবে,এই শর্তে তারা রাস্তা থেকে সরে যান। এখন পরিস্থিতি শান্ত। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আদালত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। বিচারক আদালতে এসেছেন। মাহফুজার রহমান আরও বলেন, এর আগে বিভিন্ন সময় আদালতের এজলাস ভাঙচুর করা হয়েছিল।
গত ৩১ ডিসেম্বের সন্ধ্যায় একদল লোক মাঠের সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে অস্থায়ী বিশেষ আদালতের দরজা ভেঙে ফেলেছিলেন। তারা ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছিলেন। মাঠে থাকা একটি ফোম ও প্লাস্টিকের চেয়ারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
১৫ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। বর্তমানে এ বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।
পিলখানায় হত্যাকা-ের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যাকা-ের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে হওয়া মামলায় দণ্ডিত সাবেক বিডিআর সদস্যদের কারামুক্তি, মামলার পুনঃ তদন্ত, ন্যায়বিচার নিশ্চিত, চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল-পুনর্বাসনের দাবিতে বুধবার অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য-স্বজনেরা এই কর্মসূচি পালন করেন। গতকাল শাহবাগ ‘ব্লকেড’ করা হবে বলে জানিয়েছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা।

জনপ্রিয়

কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর হামলায় নিহত বেড়ে ২৬

রাতভর বিক্ষোভ-ভাংচুর এজলাসে আগুন হলো না পিলখানার বিস্ফোরক মামলার শুনানি

প্রকাশিত: ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতের এজলাস কক্ষ পুড়ে যাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার পিলখানার বিস্ফোরক মামলার শুনানি হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বোরহান উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আদালত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে বিচারকাজ করা সম্ভব নয়। “বিজ্ঞ বিচারক এসেছিলেন। তিনি পুড়ে যাওয়া ভবন পরিদর্শন করেছেন। এরপর চলে গেছেন।” মামলার শুনানির দিন পরে ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাড়ে পনের বছর আগে পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের মামলায় এদিন আলিয়া মাদ্রাসার বিশেষ আদালতে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালত বসানোর প্রতিবাদে রাতভর আন্দোলনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের মধ্যেই রাতে আগুনে পুড়েছে অস্থায়ী আদালতের এজলাসসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পুড়ে যাওয়া এজলাস কক্ষ পরিদর্শন করেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউশন টিম, আইনজীবী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। বিচারক রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামীপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ১২টা ১০ মিনিটে চলে যান।
প্রসিকিউশন টিমের প্রধান বোরহান উদ্দিন বলেন, “আজকের প্রেক্ষাপটে আদালত পরিচালনা করার মত পরিবেশ নাই। বিচারক এটা অবহিত হয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখটা কবে হবে- আমাদের ও আসামীপক্ষের আইনজীবীদের সাথে কথা বলে বিচারক ঠিক করবেন। “তারিখটা আজকেই জানিয়ে দেয়া হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তারিখ নির্ধারণ করা হবে। জামিন শুনানির বিষয় নিষ্পত্তি হোক- এটা নিয়ে আমরা সবাই আন্তরিক ছিলাম। তা তো হলো না।”

অস্থায়ী আদালতের আগুনের কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি লালবাগ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “ভোরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আগুনে এজলাস কক্ষের চেয়ার, টেবিল, এসিসহ সবকিছু পুড়ে গেছে।”
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, “ভোর ৪টা ২২ মিনিটে বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে আগুনের খবর পেয়ে আমাদের দুইটি ইউনিট পাঠানো হয়।
কিন্তু সেখানে গিয়ে লোকজনের বাধার মুখে আমাদের কর্মীরা ভেতরে ঢুকতে পারেনি। “পরে ভোর ৫টার পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভেতরে গেলেও কাজ করতে হয়নি। ততোক্ষণে এজলাস কক্ষ পুড়ে গেছে।”
বুধবার রাত থেকে শিক্ষার্থীরা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থান নেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড়, পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার, বকশীবাজার অরফানেজ রোড ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেন। পরে পরিস্থিতে নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে যায় সেনবাহিনী ও পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের দাবি, বিচার কাজ চলমান থাকলে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘœ হয়। এর আগে বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরও সমাধান হয়নি। দুপুর সোয়া ১টার দিকে মাদ্রাসা মাঠের ফটক বন্ধ দেখা গেছে। ভেতরে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলছিল।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নবেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামীর মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।

হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামী মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামী আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামীর খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামীর বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এই হত্যাকা- পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার।
অস্থায়ী আদালতে আগুন দিল কে, কখন?
পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতের এজলাস কক্ষটি কারা পুড়িয়ে দিয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আগুনের কারণ নিয়ে মুখ খুলতে চায় না ফায়ার সার্ভিস। পুলিশ বলছে, ৫ আগস্টের পর সেই কক্ষে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে তারা শুনেছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, একদল ব্যক্তি বুধবার রাতে ওই আগুন দিয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে পিছিয়ে পড়া বাঙালি মুসলমানদের জন্য ১৭৮০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা। সার্ধশত বছর বাদে দেশভাগ হলে মাদ্রাসাটির নতুন ঠিকানা হয় লক্ষ্মীবাজারের ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ)। পরে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে সরিয়ে নেওয়া হয় বকশীবাজারের বর্তমান স্থানে।
অস্থায়ী আদালত বসানো মাঠটি নিয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সঙ্গে আলিয়া মাদ্রাসার দ্বন্দ্ব বহুদিনের। ২০০৯ সালের শুরুতে তাদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর আসামীদের বিচারে মাঠটিতে অস্থায়ী আদালত বসানো হয়। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও বিচার হয়েছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এজলাস কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। বিশাল কক্ষটিতে সারি সারি গ্রিলের খাচা বসানো, যেখানে একসঙ্গে হাজারখানেক আসামীকে বসানোর ব্যবস্থা ছিল। আদালত কক্ষের তাপ নিরোধক আচ্ছাদন, এসি, এজলাসের চেয়ার-টেবিল কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঘুলঘুলির কাঁচগুলোও ভেঙেচুরে রাখা হয়েছে। তবে কে করল এই কাজ, তার জবাবে সবাই লা জবাব। পুলিশ বলছে, তাদের কাছে আগুনের কোনো তথ্যই নেই। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের কাছে জানতে যাওয়া হয়েছিল, “অস্থায়ী আদালতে কে আগুন দিল?” তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “কখন আগুন দিয়েছে?” তাকে বলা হয়, বুধবার ভোররাতে এখানে আগুন লাগার তথ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
লালবাগের ডিসি বলেন, “এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি জানি না, আপনারা কোথা থেকে তথ্য পেলেন। “আমাকে আরো কয়েকজন সাংবাদিক ভাই ফোন দিয়েছিলেন। কারা আগুন দিল, কখন আগুন দিল- এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”
ডিসি জসীম বলেন, “সেখানে ধোঁয়ার খবর পেয়ে আমাদের লোক গিয়েছিল। সেখানে আজকের প্রোগ্রামের কিছু আয়োজন চলছিল, মাটির কিছু ঘাসলতা পুড়ছিল। আমাদের লোক আদালত ভবনে কোনো আগুন পায়নি।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আপনারা কি কাউকে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘এখানে কখন আগুন লেগেছে’?”
ছাত্রদের উদ্ধৃত করে বলা হয়, বুধবার এখানে আগুন লাগার কথা তারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে।
তখন ডিসি জসীম বলেন, “আমাদেরকে অনেকে বলেছে, ওখানে আগুন দেওয়া হয়েছিল ৫ (আগস্ট) তারিখের ঘটনার পর।” তবে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা বলছেন, বুধবার রাতে তারা সেখানে আগুন দেখেছেন।
দুপুরে এজলাস কক্ষটিতে ছবি তোলার সময় আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, কাজ শেষ হয়েছে কি না। তিনি ওই কক্ষে তালা মেরে দেয়ার অপেক্ষায় আছেন বলে জানান। টিভি স্টেশনের সংবাদকর্মীরা তখন আশরাফুলকে জানান, ২টায় ‘লাইভ’ শেষ করে তারা চলে যাবেন।
তখন আলাপচারিতায় আশরাফুল বলেন, বুধবার মধ্যরাতে কয়েকজন লোক এসে ওই মাঠের ফটকে লাগানো তালা ভাঙা বা কাটার চেষ্টা করেন। ওই সময় ছাত্ররা মাঠে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণীর আয়োজনে ব্যস্ত ছিল, যে অনুষ্ঠান গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হয়েছে।
এই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ফটকে তালা ভাঙা বা কাটার চেষ্টা দেখতে পেয়ে ওই লোকগুলোকে ধাওয়া দেয় ছাত্ররা। এরপর তারা নিজেদের মাঠ রক্ষার দাবিতে পাশের সড়কে ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ অবস্থান নেয়। স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তারাও সেখানেই ছিলেন। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত ছাত্ররা সেখানে ছিল বলে আশরাফুল দাবি করেন।
ওই লোকগুলো কারা, এ প্রশ্নের উত্তরে আশরাফুল বলেন, “আমরা মনে করি, তারা সরকারি কোনো সংস্থার লোক।”
তাহলে আগুন কে দিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সেটা আমরা জানি না। আমরা যখন রাস্তায় ছিলাম, তখন হয়তো তৃতীয় কোনো পক্ষ এসে সুবিধা নিয়েছে।”
অস্থায়ী আদালতের আগুনের কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি লালবাগ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “ভোরে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। আগুনে এজলাস কক্ষের চেয়ার, টেবিল, এসিসহ সবকিছু পুড়ে গেছে।”
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, “ভোর ৪টা ২২ মিনিটে বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে আগুনের খবর পেয়ে আমাদের দুইটি ইউনিট পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে লোকজনের বাধার মুখে আমাদের কর্মীরা ভেতরে ঢুকতে পারেনি। “পরে ভোর ৫টার পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভেতরে গেলেও কাজ করতে হয়নি। ততোক্ষণে এজলাসকক্ষ পুড়ে গেছে।”
আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র মুক্তার হোসেনের সঙ্গে দেখা হল মাঠের কোণে। তিনিও বলছেন, ছাত্ররা রাস্তায় ছিল; এ সময় কে বা কারা এসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে- তারা সেটা জানেন না।
পুড়ে যাওয়া স্থাপনাটির পাহারায় পুলিশ বা সরকারি কোনো সংস্থার সদস্যদের দুপুরে দেখা যায়নি। তখন মাঠে মাদ্রাসার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানের পর একজন ছাত্র অস্থায়ী আদালত কক্ষটি তালা মেরে চলে যান।
মাঠের উল্টো পাশের চা দোকানি সবুজ মিয়া বলেন, “গেছে কাল রাইতে আগুন দিছিল বলে হুনছি। আমি আছিলাম না।”
পোড়া এজলাস কক্ষ দেখতে এসেছিলেন পিলখানা হত্যাকা-ের ঘটনায় বিস্ফোরক মামলার আসামীপক্ষের এক আইনজীবী। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেছেন, তার দুজন আসামীর শুনানি হওয়ার কথা ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। প্রথমে তাদের জানানো হয়েছিল, সেশন জজ আদালতে শুনানি হবে। পরে জানানো হয়, কেরানীগঞ্জে অস্থায়ী আদালতে শুনানি হবে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি জানতে পারেন, শুনানি হবে বকশীবাজারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারেন, আদালত কক্ষটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে অস্থায়ী বিশেষ আদালত সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে সড়ক অবরোধ করেন আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। ১০ ঘণ্টা পর গতকাল বেলা ১১টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যান। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে গতকাল বেলা ১১টা পর্যন্ত আদালতের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। অবরোধের কারণে আশপাশের রাস্তায় দেখা দেয় যানজট।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা পুলিশের চকবাজার অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. মাহফুজার রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী বিশেষ আদালতের বিচারকের সঙ্গে দাবিদাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের কথা বলতে দিতে হবে,এই শর্তে তারা রাস্তা থেকে সরে যান। এখন পরিস্থিতি শান্ত। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আদালত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। বিচারক আদালতে এসেছেন। মাহফুজার রহমান আরও বলেন, এর আগে বিভিন্ন সময় আদালতের এজলাস ভাঙচুর করা হয়েছিল।
গত ৩১ ডিসেম্বের সন্ধ্যায় একদল লোক মাঠের সীমানাপ্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে অস্থায়ী বিশেষ আদালতের দরজা ভেঙে ফেলেছিলেন। তারা ভেতরে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছিলেন। মাঠে থাকা একটি ফোম ও প্লাস্টিকের চেয়ারে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন।
১৫ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়। বর্তমানে এ বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।
পিলখানায় হত্যাকা-ের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যাকা-ের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। অন্যদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে হওয়া মামলায় দণ্ডিত সাবেক বিডিআর সদস্যদের কারামুক্তি, মামলার পুনঃ তদন্ত, ন্যায়বিচার নিশ্চিত, চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহাল-পুনর্বাসনের দাবিতে বুধবার অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য-স্বজনেরা এই কর্মসূচি পালন করেন। গতকাল শাহবাগ ‘ব্লকেড’ করা হবে বলে জানিয়েছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা।