ঢাকা ০৩:২৫:৩২ পিএম, শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তীব্র শীত আরো কয়েকদিন

জানুয়ারি মাসে নগরে দিনের বেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হচ্ছে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এ তাপমাত্রা থাকা স্বাভাবিক। মেঘ বা ঘন কুয়াশার কারণে যখন সূর্যের আলো পৌঁছুতে পারে না তখন কমতে থাকে স্বাভাবিক তাপমাত্রা। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যত কমবে শীতের অনুভূতি তত বাড়বে। গত চার দিনে নগরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। ফলে গত কয়েকদিন ধরে শীত অনুভূত হয়েছে নগরবাসীর। একইভাবে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ১০ ডিগ্রির নিচে এলে বাড়ে শীতের অনুভূতি। এ ব্যবধান যত কমবে শীতের অনুভূতিও তত তীব্র হয়। অর্থাৎ রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে শীত অনুভূতি। গত চার দিনে এ ব্যবধান ছিল ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। গত কয়েকদিনে নগরে শীত অনুভূতি বাড়ার এটিও একটি অন্যতম কারণ। এমন শীত আগামী চার–পাঁচদিন থাকতে পারে।

 

এদিকে গতকাল শনিবার ঘুন কুয়াশার কারণে দিনের সিংহভাগ সময় সূর্য দেখা যায়নি নগরে। দুপুরের পর দেখা মিলেছে সূর্যের। ফলে গতকালও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই এদিনও শীতের অনুভূতি ছিল বেশি। গতকাল বিকাল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। আবার গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ছিল ৫ দশমিক ৮৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কম হওয়ায় গতকালও শীত অনুভূত হয়েছে নগরে।

 

আবহাওয়াবিদের ভাষায়, সাধারণত মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের সময় ধরা হয়। এ সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করে। ফলে বাংলাদেশে সূর্যের রশ্মি পড়ে তির্যকভাবে। তাই কমতে থাকে তাপমাত্রা। জাঁকিয়ে বসে শীত। অবশ্য এ বছর ডিসেম্বর মাসে খুব বেশি শীত অনুভূত হয়নি নগরে। গত কয়েকদিন ধরে অর্থাৎ চলতি জানুয়ারি মাস থেকে শীতের তীব্রতা বাড়ছে।

 

এদিকে সাধারণ মানুষ বলছেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বিশেষ করে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট বেড়েছে। গতকাল সকালে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় মুজিব নামে এক ছিন্নমূল অধিবাসী আজাদীকে বলেন, আগে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত বাড়ত। গত কয়েকদিন ধরে সূর্য না ওঠায় দিনেও তীব্র শীতের কারণে কষ্টে আছি।

 

সন্ধ্যায় চেরাগী পাহাড় এলাকায় কায়সার নামে পথচারী আজাদীকে বলেন, আমবাগানে বস্তিতে থাকি। আমরা যারা বস্তিতে থাকি তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে শীত। প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে বাঁচতে বস্তির ছেলেমেয়েরা প্রতি রাতে খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে থাকে।

 

গতকাল সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নগরের মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, জিইসি, ওয়াসা, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, নিমতলা ও পতেঙ্গা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম। বেশিরভাগ দোকানপাট খোলেনি। অল্প কিছু দোকান খুললেও ক্রেতা নেই। নগরের বিমানবন্দর সড়ক, টানেল রোড, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়েতেও যানবাহনের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা।

 

আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ জানান, লম্বা সময় ধরে ঘন কুয়াশা পড়লে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পড়ার সুযোগ পায় না। ফলে তা ভূমিকে উত্তপ্ত করতে পারে না এবং শীত বেশি লাগে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাঈল ভূঁইয়া বলেন, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে আকাশে ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণ পৌঁছে না। এতে দিনের তাপমাত্রা কমে যায়। ফলে বাড়ে শীতের অনুভূতি।

 

তিনি বলেন, রাতের তাপমাত্রা যাই হোক না কেন, শীতকালে দিনের তাপমাত্রাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গত ৩০ বছরের গড় অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে দিনের বেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর চেয়ে যখন কমে তখন শীত অনুভূত হয়। অর্থাৎ দিনের বেলা যদি কুয়াশা বা ঘন কুয়াশার কারণে যদি যথাযথ তাপ পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে দিনের বেলা শীতের অনুভূতি থাকে। এ তাপমাত্রা যদি ২৭–২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তখন মানুষের খারাপ লাগে না, কম্ফোর্ট ফিল হয়। কিন্তু গত কয়েকদিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে গেছে।

 

তিনি জানান, শুক্রবারের চেয়ে আজ (শনিবার) সূর্য একটু দেখা গেছে। এতে সর্বোচ্চ বা দিনের তাপমাত্রা মোটামুটি বেড়েছে। এই যে সূর্যটা দেরিতে দেখা যাচ্ছে, আগামী চার–পাঁচদিন এ রকম পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। দিনের বেলা সূর্য দেখতে দেরি হচ্ছে সেটা কিছুটা কেটে যাবে। এরপর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

জনপ্রিয়

তীব্র শীত আরো কয়েকদিন

প্রকাশিত: ০৮:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

জানুয়ারি মাসে নগরে দিনের বেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হচ্ছে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এ তাপমাত্রা থাকা স্বাভাবিক। মেঘ বা ঘন কুয়াশার কারণে যখন সূর্যের আলো পৌঁছুতে পারে না তখন কমতে থাকে স্বাভাবিক তাপমাত্রা। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যত কমবে শীতের অনুভূতি তত বাড়বে। গত চার দিনে নগরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। ফলে গত কয়েকদিন ধরে শীত অনুভূত হয়েছে নগরবাসীর। একইভাবে সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ১০ ডিগ্রির নিচে এলে বাড়ে শীতের অনুভূতি। এ ব্যবধান যত কমবে শীতের অনুভূতিও তত তীব্র হয়। অর্থাৎ রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে শীত অনুভূতি। গত চার দিনে এ ব্যবধান ছিল ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। গত কয়েকদিনে নগরে শীত অনুভূতি বাড়ার এটিও একটি অন্যতম কারণ। এমন শীত আগামী চার–পাঁচদিন থাকতে পারে।

 

এদিকে গতকাল শনিবার ঘুন কুয়াশার কারণে দিনের সিংহভাগ সময় সূর্য দেখা যায়নি নগরে। দুপুরের পর দেখা মিলেছে সূর্যের। ফলে গতকালও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই এদিনও শীতের অনুভূতি ছিল বেশি। গতকাল বিকাল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। আবার গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ছিল ৫ দশমিক ৮৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কম হওয়ায় গতকালও শীত অনুভূত হয়েছে নগরে।

 

আবহাওয়াবিদের ভাষায়, সাধারণত মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের সময় ধরা হয়। এ সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করে। ফলে বাংলাদেশে সূর্যের রশ্মি পড়ে তির্যকভাবে। তাই কমতে থাকে তাপমাত্রা। জাঁকিয়ে বসে শীত। অবশ্য এ বছর ডিসেম্বর মাসে খুব বেশি শীত অনুভূত হয়নি নগরে। গত কয়েকদিন ধরে অর্থাৎ চলতি জানুয়ারি মাস থেকে শীতের তীব্রতা বাড়ছে।

 

এদিকে সাধারণ মানুষ বলছেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বিশেষ করে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট বেড়েছে। গতকাল সকালে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় মুজিব নামে এক ছিন্নমূল অধিবাসী আজাদীকে বলেন, আগে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীত বাড়ত। গত কয়েকদিন ধরে সূর্য না ওঠায় দিনেও তীব্র শীতের কারণে কষ্টে আছি।

 

সন্ধ্যায় চেরাগী পাহাড় এলাকায় কায়সার নামে পথচারী আজাদীকে বলেন, আমবাগানে বস্তিতে থাকি। আমরা যারা বস্তিতে থাকি তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে শীত। প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে বাঁচতে বস্তির ছেলেমেয়েরা প্রতি রাতে খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে থাকে।

 

গতকাল সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত নগরের মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, জিইসি, ওয়াসা, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, নিমতলা ও পতেঙ্গা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম। বেশিরভাগ দোকানপাট খোলেনি। অল্প কিছু দোকান খুললেও ক্রেতা নেই। নগরের বিমানবন্দর সড়ক, টানেল রোড, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়েতেও যানবাহনের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা।

 

আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ জানান, লম্বা সময় ধরে ঘন কুয়াশা পড়লে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পড়ার সুযোগ পায় না। ফলে তা ভূমিকে উত্তপ্ত করতে পারে না এবং শীত বেশি লাগে।

 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. ইসমাঈল ভূঁইয়া বলেন, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে আকাশে ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণ পৌঁছে না। এতে দিনের তাপমাত্রা কমে যায়। ফলে বাড়ে শীতের অনুভূতি।

 

তিনি বলেন, রাতের তাপমাত্রা যাই হোক না কেন, শীতকালে দিনের তাপমাত্রাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গত ৩০ বছরের গড় অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে দিনের বেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর চেয়ে যখন কমে তখন শীত অনুভূত হয়। অর্থাৎ দিনের বেলা যদি কুয়াশা বা ঘন কুয়াশার কারণে যদি যথাযথ তাপ পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে দিনের বেলা শীতের অনুভূতি থাকে। এ তাপমাত্রা যদি ২৭–২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তখন মানুষের খারাপ লাগে না, কম্ফোর্ট ফিল হয়। কিন্তু গত কয়েকদিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে গেছে।

 

তিনি জানান, শুক্রবারের চেয়ে আজ (শনিবার) সূর্য একটু দেখা গেছে। এতে সর্বোচ্চ বা দিনের তাপমাত্রা মোটামুটি বেড়েছে। এই যে সূর্যটা দেরিতে দেখা যাচ্ছে, আগামী চার–পাঁচদিন এ রকম পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। দিনের বেলা সূর্য দেখতে দেরি হচ্ছে সেটা কিছুটা কেটে যাবে। এরপর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে পারে।