প্রচণ্ড গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন জনজীবন স্থবির, ঠিক তখনই প্রকৃতি উপহার দিল এক বিস্ময়—বর্ষার আগেই ফুটেছে কদম ফুল। রাজশাহীর নগর ও গ্রামীণ অঞ্চলে এই সৌন্দর্যের সাক্ষী হয়ে উঠেছে পথচারীরা। কদম, যা সাধারণত বর্ষাকালে ফুটে, এবার সে রীতির ব্যতিক্রম ঘটিয়ে গ্রীষ্মেই তার আগমন জানাল।
নগরীর ফুলতলা, ভদ্রার মোড়, গ্রামীণ জনপদসহ নানা স্থানে গাছের ডালে ঝুলে থাকা সাদা ও হলুদের মিশ্রণে তৈরি গোলাকৃতি এই ফুল প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কেড়েছে। থোকায় থোকায় ফুটে থাকা ফুলগুলো যেন দাবদাহের মধ্যেও এক স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে।
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিয়া জামান সুহানা বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে ভদ্রার মোড়ে একটি কদম গাছ সবসময়ই চোখে পড়ে। এবার বর্ষা না আসতেই ফুল দেখে অবাক হয়েছি। কদম দেখলেই মনটা জুড়িয়ে যায়, শৈশবের কত স্মৃতি মনে পড়ে যায়।”
শুধু সৌন্দর্যই নয়, কদম ফুলের ঘ্রাণও মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ছোটবেলার খেলার সঙ্গী এই ফুল আজও অনেকের আবেগের অংশ। তরুণ-তরুণীদের প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া কিংবা মেয়েদের খোঁপায় গুঁজে নেওয়া—সব কিছুতেই কদমের আবেদন চিরন্তন।
রাজশাহীর প্রচ্ছদশিল্পী মো. সাদিতউজজামান বলেন,
“কদম ফুল আমার অনেক পছন্দের। মনে হয় যেন বর্ষা এসে গেছে। যদিও এখন শহরে কদম গাছের সংখ্যা কমে গেছে, তারপরও যাদের ভালোবাসা আছে, তাদের চোখ এড়ায় না। আমার আঁকার ক্যানভাসে কদম প্রায়ই ফিরে আসে। ঠিক যেমন বর্ষা ফিরে আসে বছর ঘুরে।”
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক গাছপালার ফুল ফোটার ঋতুচক্রে পরিবর্তন আসছে। গ্রীষ্মের প্রখরতা এবং হঠাৎ বৃষ্টি কদম গাছে অকাল ফুটন্তের একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কদম গাছের উপকারিতাও অনেক। এর কাঠ ব্যবহার হয় আসবাবপত্র ও জ্বালানিতে। গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে, পাতার রস কৃমিনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফল বাদুড় ও কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাদ্য, যারা এর বীজ বিস্তারে ভূমিকা রাখে।
গ্রীষ্মের ক্লান্তিকর দিনে কদম ফুল যেন প্রকৃতির পক্ষ থেকে এক শীতল আশ্বাস—বর্ষা আসছে, প্রকৃতি তার রূপে ফিরবে। আর সেই আগমনের বার্তাবাহক হয়ে কদম ফুটে উঠেছে রাজশাহীর গাছে গাছে।