ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ এপ্রিলের রাতের আকাশে দুর্লভ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চমক কিশোরগঞ্জে ভেজাল খাদ্য তৈরির দায়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে পুকুর থেকে ৩২৬ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি উদ্ধার গণ-অভ্যুত্থানের পর সমঝোতার সংস্কার দরকার: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভিসির প্রতীকী চেয়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ কুয়েট শিক্ষার্থীদের আবাসিকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে প্রতারণা: সতর্ক করলো তিতাস গ্যাস ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘শহীদ তুরাব স্ট্যান্ড’ নামকরণ চার বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে তিন লাখের বেশি
বিশেষ তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন,

গণঅভ্যুত্থানে হামলা: ঢাবির ১২২ শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার প্রমাণ

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এই প্রতিবেদন পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। কমিটির আহ্বায়ক কাজী মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি ফৌজদারি মামলা করতে পারে না, তবে কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেবে।’

 

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেশ কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থীও হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় তাদের একাডেমিক সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

 

কমিটি ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে আসা বেশ কয়েকজন আক্রমণকারীকে শনাক্ত করেছে। এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

 

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে সহিংস ঘটনাগুলো তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে:

  • নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
  • ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত আহতদের ওপর হামলা
  • সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

 

কমিটি ক্যাম্পাস পোর্টাল, সাধারণ শিক্ষার্থী ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত ভিডিও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে এই তদন্ত চালায়।

কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘নিরপরাধ কাউকে অভিযুক্ত করা না হয় তা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল ফ্যাক্ট-চেকিং টুল ব্যবহার করে ভিডিও প্রমাণ যাচাই করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণ ইঙ্গিত দেয়, এগুলো ছিল পূর্বপরিকল্পিত হামলা, শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ নয়।’

 

নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও যৌন হয়রানির অভিযোগেরপ্র তিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ছিল:

  • নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে আহতদের ওপর হামলা
  • হাসপাতালের ভেতরে আহতদের চিকিৎসায় বাধা দেওয়া

তবে, যৌন নিপীড়নের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যদিও অভিযোগগুলো প্রতিবেদনভুক্ত করা হয়েছে।

 

কমিটির সদস্যরা জানান, তদন্তের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি, কারণ কোনো হার্ডড্রাইভ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদন গ্রহণের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বরাতে, ‘গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসেই নয়, বরং পুরো দেশের ইতিহাসের একটি নৃশংস ঘটনা।’

জনপ্রিয়

রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ

বিশেষ তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন,

গণঅভ্যুত্থানে হামলা: ঢাবির ১২২ শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার প্রমাণ

প্রকাশিত: ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২২ শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এই প্রতিবেদন পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হবে। কমিটির আহ্বায়ক কাজী মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি ফৌজদারি মামলা করতে পারে না, তবে কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেবে।’

 

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেশ কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থীও হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় তাদের একাডেমিক সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

 

কমিটি ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে আসা বেশ কয়েকজন আক্রমণকারীকে শনাক্ত করেছে। এ বিষয়ে কমিটির আহ্বায়ক জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

 

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে সহিংস ঘটনাগুলো তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে:

  • নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
  • ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত আহতদের ওপর হামলা
  • সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

 

কমিটি ক্যাম্পাস পোর্টাল, সাধারণ শিক্ষার্থী ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত ভিডিও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে এই তদন্ত চালায়।

কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘নিরপরাধ কাউকে অভিযুক্ত করা না হয় তা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল ফ্যাক্ট-চেকিং টুল ব্যবহার করে ভিডিও প্রমাণ যাচাই করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণ ইঙ্গিত দেয়, এগুলো ছিল পূর্বপরিকল্পিত হামলা, শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ নয়।’

 

নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও যৌন হয়রানির অভিযোগেরপ্র তিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ছিল:

  • নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে আহতদের ওপর হামলা
  • হাসপাতালের ভেতরে আহতদের চিকিৎসায় বাধা দেওয়া

তবে, যৌন নিপীড়নের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যদিও অভিযোগগুলো প্রতিবেদনভুক্ত করা হয়েছে।

 

কমিটির সদস্যরা জানান, তদন্তের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি, কারণ কোনো হার্ডড্রাইভ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদন গ্রহণের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বরাতে, ‘গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসেই নয়, বরং পুরো দেশের ইতিহাসের একটি নৃশংস ঘটনা।’