পাকিস্তান সরকার অবৈধ আফগান শরণার্থীদের গ্রেফতার করে দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা বিশেষত ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডি অঞ্চলে বাস্তবায়িত হবে। পাশাপাশি, যেসব আফগান শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের জন্য অনুমোদন পাননি, তাদেরও ফেরত পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
পাকিস্তান গত নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিযানটির মাধ্যমে ৮১৫,০০০ এরও বেশি বিদেশিকে পুনর্বাসন বা প্রত্যাবর্তনের জন্য তাদের দেশে পাঠিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং বিভিন্ন বিদেশি সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কারণ তারা আশঙ্কা করছে যে, আফগান শরণার্থীদের তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হলে তারা অত্যাচারের শিকার হতে পারে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের কার্যালয় জানিয়েছে, আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডি থেকে আফগান নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর কাজ সম্পন্ন করা হবে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব শরণার্থী অন্য দেশে পুনর্বাসনের জন্য চুক্তি করেছে, তাদেরকে দ্রুত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায়, তারা আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে।
এডিএনের খবরে বলা হয়েছে, এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নকালে পাকিস্তান সরকার আফগান শরণার্থীদের উপর নির্যাতন এবং কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই গ্রেফতার করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮০০ জন শরণার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই জাতিসংঘের নিবন্ধিত শরণার্থী।
এদিকে, নিবন্ধিত আফগান শরণার্থীদের ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডি থেকে উচ্ছেদের পরিকল্পনা নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ৫ ফেব্রুয়ারি উভয় সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে পাকিস্তান সরকারকে আফগান শরণার্থীদের স্থানান্তরের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের শর্তসমূহ এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও পাকিস্তানে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান, হেনস্তা এবং বিশেষ করে নারী ও শিশুদের গ্রেফতারের ঘটনায় বৈষম্যমূলক নীতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং শরণার্থীদের প্রতি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে।
এই পরিস্থিতিতে, পাকিস্তান সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, এবং শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার রক্ষার আহ্বান উঠেছে।