ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
চট্টগ্রামে চলন্ত অটোরিকশায় মুখোশধারীদের পেট্রলবোমা হামলা, দগ্ধ ২ নারী হাতিরঝিলে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত যুবদলকর্মী, অবস্থা আশংকাজনক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ডা. সুমিত সাহা গ্রেফতার রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ এপ্রিলের রাতের আকাশে দুর্লভ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চমক কিশোরগঞ্জে ভেজাল খাদ্য তৈরির দায়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে পুকুর থেকে ৩২৬ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি উদ্ধার গণ-অভ্যুত্থানের পর সমঝোতার সংস্কার দরকার: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভিসির প্রতীকী চেয়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ কুয়েট শিক্ষার্থীদের আবাসিকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে প্রতারণা: সতর্ক করলো তিতাস গ্যাস

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরেও ওবায়দুল কাদের ৩মাস দেশেই লুকিয়ে ছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ১৫ দিনের মাঝে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পর থেকে তার দল আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের বেশিরভাগই লাপাত্তা হয়ে আছেন। বিশেষ করে গেলো ১৬ বছর ধরে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কোনো হদিসই পাওয়া যাচ্ছিলো না। তার অবস্থান নিয়েও ছিলো ধোঁয়াশা।
অবশেষে, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তিন মাস দেশে লুকিয়ে ছিলেন। তবে সরকার সে বিষয়ে অবগত ছিলো না। জানা থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতো।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানতে চেয়েছেন- গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিন মাস বাংলাদেশে লুকিয়ে থেকে কিভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন?

জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উনি কিভাবে জানলেন, তিনি (ওবায়দুল কাদের) তিন মাস লুকিয়ে ছিলেন। আমরা তো জানি না। আমরা যদি জানতাম ধরে ফেলতাম। ওই খবর যদি আমাদের দিতেন লুকিয়ে আছে, অবশ্যই ধরে ফেলতাম। আপনারা একটা উদাহরণ দেন যে কেউ লুকিয়ে আছে আমরা জেনেও তাকে ধরিনি। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।

এ সময় সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, অনেক পুলিশ কাজে যোগ দিয়েও মামলার আসামি হওয়ার কারণে পালিয়ে গেছেন?

জবাবে তিনি বলেন, ‘কাজে যোগ দেওয়ার পর পুলিশ পালিয়ে গেছে, এমন সংবাদ নেই। তারা কাজেই যোগ দেয়নি। আগের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন ১৬ জন সংসদ সদস্য ছিল। সবাইকে তিনি আগে ভাগিয়ে দিয়েছেন। এখানেও এমন কিছু ঘটেছে। যেসব পুলিশ সদস্য পালিয়ে আছে, তারা অপরাধী। তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে।’

উল্লেখ্য, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গণঅভ্যুত্থানের পর তিন মাস ৫ দিন তিনি দেশেই ছিলেন ওবায়দুল কাদের। এই সময়ে তিনি নিরাপদেই ছিলেন। দলের সভাপতির মতো তিনিও ভারতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছেন ওই সময়ে। যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন দলীয় সভাপতির সঙ্গে। সেখান থেকে সাড়া মিলেনি।

সূত্রের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যে যারপরনাই বিরক্ত ছিলেন শেখ হাসিনা। ‘ছাত্রদের আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যেই আন্দোলনে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিল বলেই দলটির নেতারা মনে করছেন।

ওবায়দুল কাদের গত ৮ নভেম্বর মেঘালয়ের রাজধানী শিলং হয়ে কলকাতায় পৌঁছান। তিনি এক বিশেষ স্থানে আয়েসেই দিন কাটাচ্ছিলেন। তবে কীভাবে দেশ ছাড়বেন তার ধান্দা করছিলেন।

সবুজ সংকেত আসার পর সড়কপথে তিনি বিশেষ ব্যবস্থায় পৌঁছান। সেখান থেকে যান কলকাতা। দিল্লি নয়, কলকাতাতেই তিনি অবস্থান করবেন এমনটাই জানা গেছে। ভারত সরকারের কাছে তার জন্য কেউ কেউ লবি করছিলেন। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা কোনো আগ্রহ দেখাননি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকার পরও কিভাবে দেশ ছেড়েছেন তা জানতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) ১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বাংলাদেশে তিন মাস ছিলেন। এরপরও তিনি কোথায়-কিভাবে ছিলেন এবং কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি, তিনি কিভাবে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করেছেন, এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে একটি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই ব্যাখ্যা যেন দেওয়া হয় সে ব্যাপারে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি জাতীয় ট্রাইব্যুনাল। এটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। এই ট্রাইব্যুনালের আদেশ-নির্দেশ যদি কোনো সংস্থা বা বাহিনী না মানেন তাহলে ধরে নেওয়া হবে তারা রাষ্ট্রের কাজে সহযোগিতা করছেন না এবং আইন অনুযায়ী কাজ করছেন না।

তাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম অবস্থায় তাদের শুধু এটুকু বলব, ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মানতে হবে। এটা আপনার আইনগত দায়িত্ব ও রাষ্ট্রের প্রতি আপনার আনুগত্যের প্রশ্ন। যদি কেউ আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরও কোনো আসামিকে পালাতে সহযোগিতা করে তাহলে ধরে নিতে হবে তারা আইন অনুযায়ী কাজ করছেন না। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী অগ্রসর হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে আমরা এখনই সেদিকে যাব না। সবার প্রতি আহ্বান জানাব, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য নয় বরং আপনারা আইন এবং বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি আপনাদের আনুগত্য দেখাবেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য নেওয়া উদ্যোগের অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ইন্টারপোলকে আমরা আবার রিমাইন্ডার দিয়েছি। আমরা সময়-সময় অবহিত করছি, তাড়াতাড়ি প্রকাশের জন্য।’

সারা দেশে ‘গায়েবি মামলা’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে আশ্বস্ত করতে চাই, যারা দোষী নয়, তাদের কিছুই হবে না। ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি আকারে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। নির্দোষ কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। হবেও না। তবে অন্য সন্দেহ থাকলে ভিন্ন কথা।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো আছে। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। এই হবে, ওই হবে বলেছিল। কিন্তু দুটি দিবস ভালোভাবে শেষ হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন ও ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইটও ভালোভাবে শেষ হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের মনোবলে আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের মনোবল বেড়েছে। একটা বড় ঘটনা ঘটার পর দুই দিনে পরিবর্তন আসবে না। একটা ঝড় হয়ে গেলে ঘরবাড়ি সংস্কারে সময় লাগে। আমাদের সময় দিতে হবে। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) অধৈর্য হয়ে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।

জনপ্রিয়

চট্টগ্রামে চলন্ত অটোরিকশায় মুখোশধারীদের পেট্রলবোমা হামলা, দগ্ধ ২ নারী

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরেও ওবায়দুল কাদের ৩মাস দেশেই লুকিয়ে ছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ১৫ দিনের মাঝে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৯:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পর থেকে তার দল আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের বেশিরভাগই লাপাত্তা হয়ে আছেন। বিশেষ করে গেলো ১৬ বছর ধরে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কোনো হদিসই পাওয়া যাচ্ছিলো না। তার অবস্থান নিয়েও ছিলো ধোঁয়াশা।
অবশেষে, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তিন মাস দেশে লুকিয়ে ছিলেন। তবে সরকার সে বিষয়ে অবগত ছিলো না। জানা থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতো।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানতে চেয়েছেন- গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিন মাস বাংলাদেশে লুকিয়ে থেকে কিভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন?

জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উনি কিভাবে জানলেন, তিনি (ওবায়দুল কাদের) তিন মাস লুকিয়ে ছিলেন। আমরা তো জানি না। আমরা যদি জানতাম ধরে ফেলতাম। ওই খবর যদি আমাদের দিতেন লুকিয়ে আছে, অবশ্যই ধরে ফেলতাম। আপনারা একটা উদাহরণ দেন যে কেউ লুকিয়ে আছে আমরা জেনেও তাকে ধরিনি। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।

এ সময় সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, অনেক পুলিশ কাজে যোগ দিয়েও মামলার আসামি হওয়ার কারণে পালিয়ে গেছেন?

জবাবে তিনি বলেন, ‘কাজে যোগ দেওয়ার পর পুলিশ পালিয়ে গেছে, এমন সংবাদ নেই। তারা কাজেই যোগ দেয়নি। আগের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন ১৬ জন সংসদ সদস্য ছিল। সবাইকে তিনি আগে ভাগিয়ে দিয়েছেন। এখানেও এমন কিছু ঘটেছে। যেসব পুলিশ সদস্য পালিয়ে আছে, তারা অপরাধী। তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে।’

উল্লেখ্য, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গণঅভ্যুত্থানের পর তিন মাস ৫ দিন তিনি দেশেই ছিলেন ওবায়দুল কাদের। এই সময়ে তিনি নিরাপদেই ছিলেন। দলের সভাপতির মতো তিনিও ভারতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করেছেন ওই সময়ে। যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন দলীয় সভাপতির সঙ্গে। সেখান থেকে সাড়া মিলেনি।

সূত্রের দাবি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যে যারপরনাই বিরক্ত ছিলেন শেখ হাসিনা। ‘ছাত্রদের আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যেই আন্দোলনে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিল বলেই দলটির নেতারা মনে করছেন।

ওবায়দুল কাদের গত ৮ নভেম্বর মেঘালয়ের রাজধানী শিলং হয়ে কলকাতায় পৌঁছান। তিনি এক বিশেষ স্থানে আয়েসেই দিন কাটাচ্ছিলেন। তবে কীভাবে দেশ ছাড়বেন তার ধান্দা করছিলেন।

সবুজ সংকেত আসার পর সড়কপথে তিনি বিশেষ ব্যবস্থায় পৌঁছান। সেখান থেকে যান কলকাতা। দিল্লি নয়, কলকাতাতেই তিনি অবস্থান করবেন এমনটাই জানা গেছে। ভারত সরকারের কাছে তার জন্য কেউ কেউ লবি করছিলেন। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা কোনো আগ্রহ দেখাননি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকার পরও কিভাবে দেশ ছেড়েছেন তা জানতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) ১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ‘গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বাংলাদেশে তিন মাস ছিলেন। এরপরও তিনি কোথায়-কিভাবে ছিলেন এবং কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি, তিনি কিভাবে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করেছেন, এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে একটি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই ব্যাখ্যা যেন দেওয়া হয় সে ব্যাপারে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি জাতীয় ট্রাইব্যুনাল। এটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। এই ট্রাইব্যুনালের আদেশ-নির্দেশ যদি কোনো সংস্থা বা বাহিনী না মানেন তাহলে ধরে নেওয়া হবে তারা রাষ্ট্রের কাজে সহযোগিতা করছেন না এবং আইন অনুযায়ী কাজ করছেন না।

তাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম অবস্থায় তাদের শুধু এটুকু বলব, ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ মানতে হবে। এটা আপনার আইনগত দায়িত্ব ও রাষ্ট্রের প্রতি আপনার আনুগত্যের প্রশ্ন। যদি কেউ আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরও কোনো আসামিকে পালাতে সহযোগিতা করে তাহলে ধরে নিতে হবে তারা আইন অনুযায়ী কাজ করছেন না। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী অগ্রসর হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে আমরা এখনই সেদিকে যাব না। সবার প্রতি আহ্বান জানাব, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য নয় বরং আপনারা আইন এবং বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি আপনাদের আনুগত্য দেখাবেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য নেওয়া উদ্যোগের অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ইন্টারপোলকে আমরা আবার রিমাইন্ডার দিয়েছি। আমরা সময়-সময় অবহিত করছি, তাড়াতাড়ি প্রকাশের জন্য।’

সারা দেশে ‘গায়েবি মামলা’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে আশ্বস্ত করতে চাই, যারা দোষী নয়, তাদের কিছুই হবে না। ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি আকারে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। নির্দোষ কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। হবেও না। তবে অন্য সন্দেহ থাকলে ভিন্ন কথা।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো আছে। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। এই হবে, ওই হবে বলেছিল। কিন্তু দুটি দিবস ভালোভাবে শেষ হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন ও ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইটও ভালোভাবে শেষ হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের মনোবলে আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের মনোবল বেড়েছে। একটা বড় ঘটনা ঘটার পর দুই দিনে পরিবর্তন আসবে না। একটা ঝড় হয়ে গেলে ঘরবাড়ি সংস্কারে সময় লাগে। আমাদের সময় দিতে হবে। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) অধৈর্য হয়ে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।