ঢাকা , রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ এপ্রিলের রাতের আকাশে দুর্লভ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক চমক কিশোরগঞ্জে ভেজাল খাদ্য তৈরির দায়ে ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা মুন্সীগঞ্জে পুকুর থেকে ৩২৬ রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি উদ্ধার গণ-অভ্যুত্থানের পর সমঝোতার সংস্কার দরকার: এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভিসির প্রতীকী চেয়ারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ কুয়েট শিক্ষার্থীদের আবাসিকে গ্যাস সংযোগ নিয়ে প্রতারণা: সতর্ক করলো তিতাস গ্যাস ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি স্ট্যান্ড রিলিজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ‘শহীদ তুরাব স্ট্যান্ড’ নামকরণ চার বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে তিন লাখের বেশি

বেড়েই চলেছে মূল্যস্ফীতি, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ১২.৬৬ শতাংশে!

বেড়েই চলেছে মূল্যস্ফীতি, দিনকে দিন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছুই, এমনকি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যও এ তালিকার বাইরে থাকছে না। এ মাসে আবারো খাবারের মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ১২.৬৬% এ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের এ ঊর্ধ্বমুখিতা ঠেকানো যাচ্ছে না। এমনকি বেশ কয়েক ধাপে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়েও কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এটিকে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বলা হয়।

 

অক্টোবর মাসের সিপিআই তথ্যে দেখা যায়, এ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ১০.৮৭ শতাংশে। এটি আগের মাস সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমে ৯.৯২ শতাংশে পৌঁছেছিল। গড় মূল্যস্ফীতি ১০.৮৭ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৩ মাসের অক্টোবর মাসে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল এ বছরের অক্টোবরে তা কিনতে হয়েছে ১১০ টাকা ৮৭ পয়সায়।

 

আবার, অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১২.৬৬ শতাংশ। যদিও গত জুলাইয়ে ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ১৪.১ শতাংশে।

 

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানুষের কৃষি জমি ডুবে ফসল নষ্ট হয়েছে, খামারগুলো নষ্ট হয়ে হাঁস-মুরগির সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়াও দেশের সিন্ডিকেট ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় পণ্যের দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

 

অন্যদিকে,উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ক্রমশ বাড়ছে। ইতোমধ্যে সুদের হার প্রায় ১৬ শতাংশে উঠেছে। গত দেড় বছরের কম সময়ে সুদহার বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। এতে ছোট-বড় সব খাতের ব্যবসায়ীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

 

খাদ্য মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়িয়ে গেলেও বিবিএসের তথ্য বলছে, অক্টোবরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে ৯.৩৪ শতাংশে নেমেছে, যেটি আগের মাস সেপ্টেম্বরেও ছিল ৯.৫ শতাংশ।

 

মূল্যস্ফীতির ধকল শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের বেশি। তথ্য বলছে, অক্টোবরে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে। এ মাসে গ্রামাঞ্চলে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১.২৬ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৭৫ শতাংশ। একই সময়ে দেশের শহর এলাকাগুলোতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৪৪ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৩ শতাংশ।

 

শেখ হাসিনার সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে কারসাজি করা হতো বলে প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। জনগণের সামনে অসাধারণ অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স তুলে ধরে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়াতেই এসব করা হতো বলে জানিয়েছে কমিটি।

 

শ্বেতপত্র কমিটির এক সদস্য জানান, “বিবিএস এ ধরনের কারসাজির কারণে মনগড়া তথ্য প্রকাশ করত। শেখ হাসিনার আমলে বিবিএস প্রথমে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রস্তুত করে পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে জমা দিত। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজের ইচ্ছামতো কমিয়ে আনার নির্দেশ দিতেন। তার পছন্দমতো তথ্য সাজিয়ে পাঠালে তা অনুমোদন করতেন মন্ত্রী।

 

পরে তা অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হতো। তিনি আরেক দফায় তা কমিয়ে অনুমোদন করতেন। আর হাসিনা যে তথ্য অনুমোদন দিতেন, বিবিএস সেটিই প্রকাশ করতে বাধ্য হতো। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি হলে বা বেশি হলে পরিকল্পনামন্ত্রীরা তা কোনোমতেই অনুমোদন করতেন না, বরং অনেকটাই কমিয়ে দিতেন তারা।”

জনপ্রিয়

রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার নথি প্রকাশ

বেড়েই চলেছে মূল্যস্ফীতি, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ১২.৬৬ শতাংশে!

প্রকাশিত: ০৮:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

বেড়েই চলেছে মূল্যস্ফীতি, দিনকে দিন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছুই, এমনকি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যও এ তালিকার বাইরে থাকছে না। এ মাসে আবারো খাবারের মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ১২.৬৬% এ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের এ ঊর্ধ্বমুখিতা ঠেকানো যাচ্ছে না। এমনকি বেশ কয়েক ধাপে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়িয়েও কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এটিকে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বলা হয়।

 

অক্টোবর মাসের সিপিআই তথ্যে দেখা যায়, এ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ১০.৮৭ শতাংশে। এটি আগের মাস সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমে ৯.৯২ শতাংশে পৌঁছেছিল। গড় মূল্যস্ফীতি ১০.৮৭ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৩ মাসের অক্টোবর মাসে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল এ বছরের অক্টোবরে তা কিনতে হয়েছে ১১০ টাকা ৮৭ পয়সায়।

 

আবার, অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১২.৬৬ শতাংশ। যদিও গত জুলাইয়ে ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ১৪.১ শতাংশে।

 

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানুষের কৃষি জমি ডুবে ফসল নষ্ট হয়েছে, খামারগুলো নষ্ট হয়ে হাঁস-মুরগির সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়াও দেশের সিন্ডিকেট ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় পণ্যের দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

 

অন্যদিকে,উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ক্রমশ বাড়ছে। ইতোমধ্যে সুদের হার প্রায় ১৬ শতাংশে উঠেছে। গত দেড় বছরের কম সময়ে সুদহার বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। এতে ছোট-বড় সব খাতের ব্যবসায়ীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

 

খাদ্য মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়িয়ে গেলেও বিবিএসের তথ্য বলছে, অক্টোবরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে ৯.৩৪ শতাংশে নেমেছে, যেটি আগের মাস সেপ্টেম্বরেও ছিল ৯.৫ শতাংশ।

 

মূল্যস্ফীতির ধকল শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের বেশি। তথ্য বলছে, অক্টোবরে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে। এ মাসে গ্রামাঞ্চলে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১.২৬ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৭৫ শতাংশ। একই সময়ে দেশের শহর এলাকাগুলোতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৪৪ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৫৩ শতাংশ।

 

শেখ হাসিনার সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে কারসাজি করা হতো বলে প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। জনগণের সামনে অসাধারণ অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স তুলে ধরে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়াতেই এসব করা হতো বলে জানিয়েছে কমিটি।

 

শ্বেতপত্র কমিটির এক সদস্য জানান, “বিবিএস এ ধরনের কারসাজির কারণে মনগড়া তথ্য প্রকাশ করত। শেখ হাসিনার আমলে বিবিএস প্রথমে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রস্তুত করে পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে জমা দিত। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজের ইচ্ছামতো কমিয়ে আনার নির্দেশ দিতেন। তার পছন্দমতো তথ্য সাজিয়ে পাঠালে তা অনুমোদন করতেন মন্ত্রী।

 

পরে তা অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হতো। তিনি আরেক দফায় তা কমিয়ে অনুমোদন করতেন। আর হাসিনা যে তথ্য অনুমোদন দিতেন, বিবিএস সেটিই প্রকাশ করতে বাধ্য হতো। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি হলে বা বেশি হলে পরিকল্পনামন্ত্রীরা তা কোনোমতেই অনুমোদন করতেন না, বরং অনেকটাই কমিয়ে দিতেন তারা।”