আরাফা আরবি শব্দ, যার অর্থ “চেনা” বা “জানা”। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) পরস্পরের সঙ্গে এই স্থানেই মিলিত হোন। তাই এটি পরিচয়ের ও পুনর্মিলনের দিন। একই সাথে এটি তাওবার দিন, ক্ষমা চাওয়ার দিন।
আরাফাতের ময়দান আমাদের মনে করিয়ে দেয় কেয়ামতের দিনের হাশরের ময়দানের কথা, যেখানে সমগ্র মানবজাতি একত্রিত হবে মহান আল্লাহর সামনে জবাবদিহির জন্য। এই দিন আল্লাহর করুণা, রহমত ও ক্ষমা অবারিতভাবে বর্ষিত হয়।
২০২৫ সালের ২৮ মে বাংলাদেশের আকাশে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সে অনুযায়ী, পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে শনিবার, ৭ জুন। আর আরাফার রোজা পালিত হবে শুক্রবার, ৬ জুন।
আরাফার দিনের বিশেষ আমলসমূহ:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “আরাফার দিনের চেয়ে বেশি মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া আর কোনো দিনে হয় না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪৮)
এই মহিমান্বিত দিনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি:
১. আরাফার রোজা রাখা
রাসূল ﷺ বলেন, “আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি আরাফার রোজার বিনিময়ে আগের বছরের এবং পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।” (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
যেহেতু তারিখ নির্ধারণে কিছু মতভেদ আছে, তাই ৮ ও ৯ জিলহজ (বুধ ও বৃহস্পতিবার) উভয় দিন রোজা রাখা অধিকতর উত্তম।
২. তাসবীহ, তাহমিদ, তাকবীর ও তাহলীল বলা
এই দিনে বারবার বলা উচিত:
সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
রাসূল ﷺ ও সাহাবাগণ এ দিনসমূহে, অধিক পরিমাণে পাঠ করতেন।
৩. আয়াতুল কুরসি তিনবার পাঠ
শয়তান থেকে রক্ষা এবং সারা বছরের নিরাপত্তার জন্য এই আয়াত তিনবার পড়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
৪. আল্লাহর ৯৯টি নাম পাঠ
রাসূল ﷺ বলেন, “আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, একশো থেকে এক কম। যে এগুলো হৃদয়ে স্থান দেয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কোনো কিছু গণনার অর্থ হলো তা হৃদয়ে মুখস্থ রাখা।” (সহিহ বুখারী: ২৭৩৬)
৫. অন্তত একটি সহিহ হাদিস পাঠ
রাসূল ﷺ এর বাণী জানাও ইবাদত। অন্তত একটি সহিহ হাদিস পাঠ করে, তা আমলে আনা এই দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল।
৬. সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পাঠ
রাতের সময়ে এই আয়াতগুলো পাঠ করলে শয়তান থেকে হেফাজত পাওয়া যায়।
৭. কুরআনের তিলাওয়াত
এই দিনে সূরা কাহাফ, সূরা ইয়াসিনসহ যেকোনো সূরা পাঠ করলে, মন প্রশান্ত হয় ও হৃদয় নরম হয়।
৮. সদকা করা
একটি খেজুর সদকাও আল্লাহর কাছে— পাহাড়সম প্রতিদান লাভের উপযুক্ত হতে পারে।
৯. দরুদ ও ইস্তিগফার পাঠ
রাসূল ﷺ এর প্রতি দরুদ পাঠ ও ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলা এই দিনে আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
১০. দুআ ও জিকিরে নিমগ্ন থাকা
বিশেষত যোহর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টা দুআ কবুলের উত্তম সময়।
এই জিকিরটি বারবার বলা সবচেয়ে প্রিয় আমল:
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
এই দিন হাজিগণ আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে কাঁদেন, ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যারা সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি, তারাও ঘরে বসেই এই দিনের ফজিলত লাভ করতে পারেন নেক আমলের মাধ্যমে।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে এই পবিত্র দিনে রোজা রাখা ও আমল করার তাওফিক দিন।