বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে যুক্তরাজ্যকে ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে এক বক্তব্যে তিনি নতুন প্রতিরক্ষা কৌশল ঘোষণা করেন, যার আওতায় ১২টি আক্রমণাত্মক সাবমেরিন নির্মাণ, পারমাণবিক অস্ত্র এবং সাইবার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করা হবে।
স্টারমার বলেন, “আমরা এখন এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, তাৎক্ষণিক ও অনিশ্চিত হুমকির মুখোমুখি। ইউরোপে যুদ্ধ চলছে, পারমাণবিক ঝুঁকি বাড়ছে, সাইবার হামলা নিত্যদিনের ঘটনা, আর রাশিয়ার আগ্রাসন আমাদের জলসীমা ও আকাশসীমায় দেখা যাচ্ছে।”
তিনি যোগ করেন, “সংঘাত প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সেই সংঘাত মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকা।”
নতুন প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য:
১২টি আধুনিক সাবমেরিন নির্মাণ করবে,
পারমাণবিক সক্ষমতা ও ডিজিটাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করবে,
সাত হাজার দূরপাল্লার অস্ত্র সংগ্রহ করবে,
নতুন সাইবার কমান্ড গঠন করবে,
১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করবে সেনাসদস্যদের আবাসন উন্নয়নে।
এই পদক্ষেপগুলোর লক্ষ্য হলো সেনাবাহিনীর জনবল বৃদ্ধি এবং বর্তমান সদস্যদের ধরে রাখা, বিশেষত যখন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জনবল বর্তমানে নেপোলিয়নের সময় পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বৈশ্বিক উত্তেজনা তীব্রতর হওয়ায় এই ঘোষণা এসেছে। ড্রোন হামলায় রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্টারমার পরিকল্পনার রূপরেখা দেন।
নতুন প্রতিরক্ষা কৌশল পর্যালোচনার দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক ন্যাটো মহাসচিব জর্জ রবার্টসন। তিনি কৌশলগত বিনিয়োগ, ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং ড্রোন ব্যবস্থার উন্নয়নে মনোযোগ দিচ্ছেন।
স্টারমার বলেন, যুক্তরাজ্য নেটো ও ট্রান্স-আটলান্টিক অংশীদারিত্বে অটল থাকবে। তবে নতুন কৌশলে এমন কিছু প্রস্তাব রয়েছে—যেমন পারমাণবিক বোমাবাহী যুদ্ধবিমান কেনা, যা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ব্রিটেনের নির্ভরতা হ্রাস করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গঠিত ‘AUKUS’ জোটের অংশ হিসেবে তৈরি হবে এই নতুন সাবমেরিনগুলো। এগুলো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে, পাশাপাশি এটি ইউরো-আটলান্টিক নিরাপত্তা নীতিতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে।
লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাইক মার্টিন মন্তব্য করেন, “এই কৌশল দেখায়, যুক্তরাজ্য আর পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারছে না। পারমাণবিক বোমাবাহী যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব সেই অনির্ভরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্টারমারের এই ঘোষণা যুক্তরাজ্যের ভূরাজনৈতিক অবস্থান নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে এবং একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা কৌশল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, যা ভবিষ্যতের যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় ব্রিটেনকে অধিক প্রস্তুত করে তুলবে।