ঢাকা , বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
আগামী পাঁচ দিন ঝড়বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা, তাপমাত্রা থাকবে প্রায় অপরিবর্তিত কারাগারে নববর্ষ, তবু হাস্যোজ্জ্বল শাজাহান খান বললেন: ‘বাইরের চেয়ে ভিতরেই ভালো আছি’ দেশ-বিদেশে এস আলম গ্রুপের আরও জমি ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের সন্ধান গাইবান্ধায় পরিত্যক্ত কুপে মিলল অজ্ঞাত পরিচয় কিশোরের অর্ধগলিত লাশ নেত্রকোনায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ, মুদি দোকানি গ্রেফতার নোয়াখালীতে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ২ আউটসোর্সিং সেবা কর্মীদের জন্য ‘সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০২৫’ জারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির আবেদন শুরু সাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন: পাঁচটিতে বাদ পড়েছে নজরুল ইসলাম বাবুর নাম ‘প্রো-বাংলাদেশ’ নীতিই অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক অগ্রাধিকার: প্রেস সচিব

ওয়াক্‌ফ আইন: পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা, বিধায়ককে হেনস্থা, মুর্শিদাবাদে গ্রেপ্তার ১১৮

ওয়াকফ সংশোধিত আইন বাতিলের দাবিতে সবচেয়ে উত্তাল হয়েছে মুর্শিদাবাদ। তৃণমূল সাংসদের পর হেনস্থা হন বিধায়ক। জেলার বিভিন্ন স্থানে জারি হয় ১৪৪ ধারা।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ওয়াক্‌ফ (সংশোধিত) আইন বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ–বিক্ষোভ শুক্রবার সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। মুর্শিদাবাদে পরিস্থিতি হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে গুরুতর। সেখানে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ভারতীয় পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ওয়াকফ সংশোধিত আইন বাতিলের দাবিতে উত্তাল হয় মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর এলাকা। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি চলে। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো, যানবাহন ও বাইক ভাঙচুরের মতো একাধিক ঘটনায় অশান্তি ছড়িয়েছে শাজুরমোড় ও ধুলিয়ান সংলগ্ন এলাকায়।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ করে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভে সামিল হয়। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরানো হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে পাথর ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে।

এ ঘটনার মধ্যেই ধুলিয়ানে স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমানের কার্যালয়ে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। ভাঙচুর করা হয় কার্যালয়ে। ‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমস’ পত্রিকা জানায়, সাংসদের ওপর এই হামলার পর ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামকে ওয়াকফ সংশোধনী বিরোধীরা হেনস্থা করেছে।

সামশেরগঞ্জ থানার পাশে বিধায়কের দাদার বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন মনিরুল। মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়েছিল যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিএসএফের সাহায্য চেয়েছিল জেলা প্রশাসন।

ঘটনার পর মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন অংশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। মুর্শিদাবাদের জেলা শাসক রাজর্ষি মিত্র জানিয়েছেন, “প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে দেখা হচ্ছে।”

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে পুলিশ ‘মার খেয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিজেপি-র দাবি, আমতলা থেকে মুর্শিদাবাদ, সব খানেই পুলিশ ‘মার খাচ্ছে’। একারণে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দলটি।

ওদিকে, পুলিশও স্যোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছে, সহিংসতা ঠেকাতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের রোষের শিকার হয়েছে পুলিশ। জখম হন ফারাক্কার এসডিপিও। তবে শুক্রবার রাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে বলে জানায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।

শনিবার সকাল থেকে মুর্শিদবাদেরও সব এলাকায় মোটামুটি শান্ত অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। যদিও পরিস্থিতি এখনও থমথমে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।

ওদিকে, আসাম রাজ্যেও ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনে হয়েছে। তবে তেমন কোনও হাঙ্গামা হয়নি।

এ পরিস্থিতিতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পুলিশের প্রশংসা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছেন। পোস্টে তিনি লেখেন, পুলিশ খুব ভালো ভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে এবং শান্তি বজায় রেখেছে।

ভারতে মুসলিমদের দান করা সম্পত্তি, অর্থাৎ ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা নিয়ে গঠিত কয়েক দশকের পুরনো একটি আইন সংশোধনের ঘটনায় মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চার করেছে।

ভারতে মসজিদ, মাদ্রাসা, আশ্রয়কেন্দ্র এবং হাজার হাজার একর ওয়াকফ জমির ব্যবস্থাপনা একটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার বলছে, ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির মূলোৎপাটন এবং আইনটির সংস্কারে মুসলিমদের দাবির প্রেক্ষিতেই আইন সংশোধন করা হয়েছে।

তবে কয়েকটি মুসলিম গোষ্ঠী এবং বিরোধী দল এসব সংশোধনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করতে মোদীর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে।

গত সপ্তাহে ওয়াক্‌ফ সংশোধনী বিল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাস হয়। এরপর মুসলিমদের বিক্ষোভ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র আপত্তির মধ্যেই গত ৮ এপ্রিল বিতর্কিত এই ওয়াক্‌ফ আইন কার্যকর হয়।

জনপ্রিয়

আগামী পাঁচ দিন ঝড়বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা, তাপমাত্রা থাকবে প্রায় অপরিবর্তিত

ওয়াক্‌ফ আইন: পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা, বিধায়ককে হেনস্থা, মুর্শিদাবাদে গ্রেপ্তার ১১৮

প্রকাশিত: ০৪:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

ওয়াকফ সংশোধিত আইন বাতিলের দাবিতে সবচেয়ে উত্তাল হয়েছে মুর্শিদাবাদ। তৃণমূল সাংসদের পর হেনস্থা হন বিধায়ক। জেলার বিভিন্ন স্থানে জারি হয় ১৪৪ ধারা।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ওয়াক্‌ফ (সংশোধিত) আইন বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ–বিক্ষোভ শুক্রবার সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। মুর্শিদাবাদে পরিস্থিতি হয়ে উঠেছিল সবচেয়ে গুরুতর। সেখানে সহিংসতার ঘটনায় পুলিশ ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ভারতীয় পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ওয়াকফ সংশোধিত আইন বাতিলের দাবিতে উত্তাল হয় মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর এলাকা। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি চলে। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগানো, যানবাহন ও বাইক ভাঙচুরের মতো একাধিক ঘটনায় অশান্তি ছড়িয়েছে শাজুরমোড় ও ধুলিয়ান সংলগ্ন এলাকায়।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ করে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভে সামিল হয়। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরানো হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে পাথর ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার গ্যাস ছোড়ে।

এ ঘটনার মধ্যেই ধুলিয়ানে স্থানীয় তৃণমূল সাংসদ খলিলুর রহমানের কার্যালয়ে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। ভাঙচুর করা হয় কার্যালয়ে। ‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমস’ পত্রিকা জানায়, সাংসদের ওপর এই হামলার পর ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামকে ওয়াকফ সংশোধনী বিরোধীরা হেনস্থা করেছে।

সামশেরগঞ্জ থানার পাশে বিধায়কের দাদার বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন মনিরুল। মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়েছিল যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিএসএফের সাহায্য চেয়েছিল জেলা প্রশাসন।

ঘটনার পর মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন অংশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। মুর্শিদাবাদের জেলা শাসক রাজর্ষি মিত্র জানিয়েছেন, “প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে দেখা হচ্ছে।”

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে পুলিশ ‘মার খেয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিজেপি-র দাবি, আমতলা থেকে মুর্শিদাবাদ, সব খানেই পুলিশ ‘মার খাচ্ছে’। একারণে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দলটি।

ওদিকে, পুলিশও স্যোশাল মিডিয়ায় জানিয়েছে, সহিংসতা ঠেকাতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের রোষের শিকার হয়েছে পুলিশ। জখম হন ফারাক্কার এসডিপিও। তবে শুক্রবার রাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে বলে জানায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।

শনিবার সকাল থেকে মুর্শিদবাদেরও সব এলাকায় মোটামুটি শান্ত অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। যদিও পরিস্থিতি এখনও থমথমে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।

ওদিকে, আসাম রাজ্যেও ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনে হয়েছে। তবে তেমন কোনও হাঙ্গামা হয়নি।

এ পরিস্থিতিতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পুলিশের প্রশংসা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছেন। পোস্টে তিনি লেখেন, পুলিশ খুব ভালো ভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছে এবং শান্তি বজায় রেখেছে।

ভারতে মুসলিমদের দান করা সম্পত্তি, অর্থাৎ ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা নিয়ে গঠিত কয়েক দশকের পুরনো একটি আইন সংশোধনের ঘটনায় মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চার করেছে।

ভারতে মসজিদ, মাদ্রাসা, আশ্রয়কেন্দ্র এবং হাজার হাজার একর ওয়াকফ জমির ব্যবস্থাপনা একটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার বলছে, ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির মূলোৎপাটন এবং আইনটির সংস্কারে মুসলিমদের দাবির প্রেক্ষিতেই আইন সংশোধন করা হয়েছে।

তবে কয়েকটি মুসলিম গোষ্ঠী এবং বিরোধী দল এসব সংশোধনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করতে মোদীর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে।

গত সপ্তাহে ওয়াক্‌ফ সংশোধনী বিল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাস হয়। এরপর মুসলিমদের বিক্ষোভ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র আপত্তির মধ্যেই গত ৮ এপ্রিল বিতর্কিত এই ওয়াক্‌ফ আইন কার্যকর হয়।