যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছেন, যা অনেক দেশ ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ হিসেবে দেখছে। নতুন এই নীতির ফলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বেড়ে ৩৭ শতাংশ হয়েছে, যেখানে এতদিন গড় শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের প্রধান দুটি রপ্তানি বাজারের একটি হলো যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে তৈরি পোশাকের বড় একটি অংশ রপ্তানি করা হয়। দেশটিতে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৮.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার বেশিরভাগই তৈরি পোশাক। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭.৩৪ বিলিয়ন ডলার।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উচ্চ শুল্ক হার বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ২টা) হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, “আজকের দিনটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুব ভালো একটি দিন।”
ট্রাম্প এই নতুন শুল্ক নীতিকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “এদিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরে অপেক্ষা করেছে।”
বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশের পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
ভারত ২৬%, পাকিস্তান ২৯%, চীন ৩৪%, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০%, ভিয়েতনাম ৪৬%, শ্রীলঙ্কা ৪৪%, জাপান ২৪%, দক্ষিণ কোরিয়া ২৫%, থাইল্যান্ড ৩৬%, কম্বোডিয়া ৪৯%, যুক্তরাজ্য ১০%, অস্ট্রেলিয়া ১০%। এছাড়া, মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪%, লাওসের পণ্যে ৪৮% এবং মাদাগাস্কারের পণ্যে ৪৭% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন যে, সব ধরনের বিদেশি গাড়ির ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করা হবে, যা মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্প বিদেশি প্রতিযোগিতার চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ট্রাম্প বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি ৮০% গাড়ি সেখানেই বিক্রি হয়, জাপানের ক্ষেত্রে এ হার ৯০%। কিন্তু এসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি খুব কম বিক্রি হয়।”
ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতিফলন, যা দেশটির শিল্পকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্য নিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আজকের দিনটিকে আমেরিকার অর্থনৈতিক পুনর্জন্ম হিসেবে স্মরণ করা হবে।”
তবে, অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উত্তেজনা বাড়াবে এবং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর রপ্তানি খাত ক্ষতির মুখে পড়বে।