ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাস ঈসা বন্দরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০, আহত ১৭১ দিলীপ ঘোষের বিয়ে ঘিরে প্রশ্ন: আরএসএস প্রচারকেরা কি বিয়ে করতে পারেন? সংগঠনটির প্রচারক ছিলেন মোদিও নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর চট্টগ্রামে শিশুর লাশ উদ্ধার টাঙ্গাইলে অবৈধ ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু শায়েস্তাগঞ্জে আগুনে পুড়ল ১৫ টি দোকান বিডিআর হত্যাকাণ্ড: সহায়ক তথ্য আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫০৬ জন অভিবাসী আটক ইভ্যালির অর্থ আত্মসাৎ: গ্রাহকদের মানববন্ধন ও রাসেলের গ্রেফতারের দাবি কক্সবাজার-মহেশখালী রুটে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো সি-ট্রাক

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ‘মিথ্যা’ : টিউলিপ

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁকে ‘নিশানা করে ভিত্তিহীন’ অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক’ বলেও দাবি করেছেন তিনি।

 

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির একজন পার্লামেন্ট সদস্য। তিনি দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’–এর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

 

বাংলাদেশ সরকার সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করে কেন সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ করছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দেওয়া একটি চিঠিতে টিউলিপের আইনজীবী বলেছেন, দুদকের এই কর্মপদ্ধতি ‘যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের একটি অগ্রহণযোগ্য চেষ্টা’।

 

দুদক শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করছে। এগুলোর মধ্যে তিনটিতে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে। সেগুলো হলো রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি থেকে লাভবান হওয়া, ঢাকায় জমি দখল ও মুদ্রা পাচার।

 

লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড ও হাইগেট এলাকার এমপি টিউলিপ কোনো ধরনের অনিয়ম করার কথা অস্বীকার করে আসছেন। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ ছাড়ার পর এই প্রথম দুদকে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন তিনি।

 

টিউলিপের আইনজীবী স্টিফেন হারউডের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘দুদক বা বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কোনো ক্ষেত্রেই সুষ্ঠুভাবে, সঠিক ও স্বচ্ছতার সঙ্গে আনেননি।’ অবিলম্বে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ অভিযোগ তৈরি বন্ধ এবং তাঁর ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের লক্ষ্যে’ আর কোনো মিডিয়া ব্রিফিং ও প্রকাশ্য মন্তব্য না করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

 

রাশিয়ার সঙ্গে ২০১৩ সালে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে টিউলিপ সিদ্দিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। সংস্থাটি বলছে, টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের সাত লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাটটি ওই অর্থ দিয়ে কেনা কি না, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

 

আইনজীবী স্টিফেন হারউড বলেছেন, লন্ডনের কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটটি টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৪ সালে তাঁর গডফাদার (ধর্মপিতা) আবদুল মোতালিফের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তিনি শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে কারণে যখন চুক্তি হয়নি, তার থেকে তছরুপ করা অর্থ দিয়ে ওই সম্পদ কেনার বিষয়টি ‘অসম্ভব’।

 

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিটি হয়েছিল এক দশক পরে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই চুক্তিতে টিউলিপ সিদ্দিকের ‘কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না’, যদিও তিনি মস্কো গিয়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে একটি ছবির জন্য পোজ দিয়েছিলেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারপ্রধানের রাষ্ট্রীয় সফরে পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। তিনি সেখানে গিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছিলেন এবং সরকারি পর্যায়ের কোনো আলোচনায় যুক্ত ছিলেন না।

 

এ ছাড়া ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় প্লট পাওয়ার জন্য প্রভাব খাটানোর অভিযোগও অস্বীকার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বলেছেন, সেখানে কখনো তাঁর জমি ছিল না। আর ঢাকার একটি জায়গায় বোনকে টিউলিপের ফ্ল্যাট হস্তান্তর বৈধ ও আইনসিদ্ধভাবে করা হয়েছে বলে এতে দাবি করা হয়েছে।

 

চিঠিতে বলা হয়েছে, একটি সরকারি সংস্থা তদন্তের ক্ষেত্রে ‘যথাযথ প্রক্রিয়া, কার্যক্রম এবং সত্য প্রতিষ্ঠার চর্চা করে’, দুদক তা করেনি। তবে দুদক বলছে, তারা নথি ও বাস্তবতার নিরিখে কাজ করছে।

 

দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ যুক্তরাজ্যের আদালতসহ যেকোনো আদালতে প্রমাণিত হবে।’

জনপ্রিয়

ক্রিমিয়া নিয়ে ছাড়? শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ব্লুমবার্গ

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ‘মিথ্যা’ : টিউলিপ

প্রকাশিত: ১২:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁকে ‘নিশানা করে ভিত্তিহীন’ অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন ও হয়রানিমূলক’ বলেও দাবি করেছেন তিনি।

 

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির একজন পার্লামেন্ট সদস্য। তিনি দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’–এর দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।

 

বাংলাদেশ সরকার সরাসরি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ না করে কেন সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ করছে, সে প্রশ্ন তুলেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দেওয়া একটি চিঠিতে টিউলিপের আইনজীবী বলেছেন, দুদকের এই কর্মপদ্ধতি ‘যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের একটি অগ্রহণযোগ্য চেষ্টা’।

 

দুদক শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করছে। এগুলোর মধ্যে তিনটিতে টিউলিপ সিদ্দিকের নাম এসেছে। সেগুলো হলো রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি থেকে লাভবান হওয়া, ঢাকায় জমি দখল ও মুদ্রা পাচার।

 

লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড ও হাইগেট এলাকার এমপি টিউলিপ কোনো ধরনের অনিয়ম করার কথা অস্বীকার করে আসছেন। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ ছাড়ার পর এই প্রথম দুদকে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন তিনি।

 

টিউলিপের আইনজীবী স্টিফেন হারউডের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘দুদক বা বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কোনো ক্ষেত্রেই সুষ্ঠুভাবে, সঠিক ও স্বচ্ছতার সঙ্গে আনেননি।’ অবিলম্বে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ অভিযোগ তৈরি বন্ধ এবং তাঁর ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের লক্ষ্যে’ আর কোনো মিডিয়া ব্রিফিং ও প্রকাশ্য মন্তব্য না করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।

 

রাশিয়ার সঙ্গে ২০১৩ সালে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে টিউলিপ সিদ্দিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। সংস্থাটি বলছে, টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের সাত লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাটটি ওই অর্থ দিয়ে কেনা কি না, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

 

আইনজীবী স্টিফেন হারউড বলেছেন, লন্ডনের কিংস ক্রসের ফ্ল্যাটটি টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৪ সালে তাঁর গডফাদার (ধর্মপিতা) আবদুল মোতালিফের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তিনি শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে কারণে যখন চুক্তি হয়নি, তার থেকে তছরুপ করা অর্থ দিয়ে ওই সম্পদ কেনার বিষয়টি ‘অসম্ভব’।

 

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিটি হয়েছিল এক দশক পরে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই চুক্তিতে টিউলিপ সিদ্দিকের ‘কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না’, যদিও তিনি মস্কো গিয়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে একটি ছবির জন্য পোজ দিয়েছিলেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারপ্রধানের রাষ্ট্রীয় সফরে পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। তিনি সেখানে গিয়ে দিনের বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছিলেন এবং সরকারি পর্যায়ের কোনো আলোচনায় যুক্ত ছিলেন না।

 

এ ছাড়া ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় প্লট পাওয়ার জন্য প্রভাব খাটানোর অভিযোগও অস্বীকার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বলেছেন, সেখানে কখনো তাঁর জমি ছিল না। আর ঢাকার একটি জায়গায় বোনকে টিউলিপের ফ্ল্যাট হস্তান্তর বৈধ ও আইনসিদ্ধভাবে করা হয়েছে বলে এতে দাবি করা হয়েছে।

 

চিঠিতে বলা হয়েছে, একটি সরকারি সংস্থা তদন্তের ক্ষেত্রে ‘যথাযথ প্রক্রিয়া, কার্যক্রম এবং সত্য প্রতিষ্ঠার চর্চা করে’, দুদক তা করেনি। তবে দুদক বলছে, তারা নথি ও বাস্তবতার নিরিখে কাজ করছে।

 

দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সব অভিযোগ যুক্তরাজ্যের আদালতসহ যেকোনো আদালতে প্রমাণিত হবে।’