বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। বিশেষ করে ভ্যাপসা গরমের সাথে এক পশলা বৃষ্টি কিংবা থেমে থেমে বৃষ্টি এডিস মশার বংশবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গত মাসে শীত পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে। আগামী এপ্রিলের মাঝামাঝি শুরু হবে গ্রীষ্ম মৌসুম। গ্রীষ্মের খরতাপে যদি বৃষ্টি হয়, তবে ডেঙ্গু নিয়ে গত বছরের আবারও নগরবাসীর মাথাব্যথার কারণ হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাতেগোনা লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে আগামী মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হতে পারে–এই আশঙ্কা নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ জন পুরুষ ও ১ জন নারী। দুজনই বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১১২ জন। এর মধ্যে নগরীতে ৪৭ জন এবং উপজেলায় ৬৫ জন। মারা গেছেন ১ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। অনেক রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষার (এনএসওয়ান) রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এর দরকার নেই। ডেঙ্গুর প্লাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন কেবল রোগীর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। তখন জরুরি চিকিৎসা কিংবা নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। অন্যদিকে রক্তের প্লাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্লাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক থাকে। আসলে প্লাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। গত বছর বিশেষ করে ডেঙ্গুর ভ্যারিয়েন্ট ডেন–২ এর সাব– ভ্যারিয়েন্ট কসমোপলিটনে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হার বেশি ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিস মশার বংশ বিস্তার থামানো গেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এমনিতেই কমে যাবে। বিশেষ করে আমাদের চারপাশে যেসব জায়গায় এডিস মশা জন্মায় সেসব জায়গায় যাতে এডিস মশা জন্মাতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার ও বদ্ধ পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই বসতবাড়ির আশপাশে ডাবের খোসা, ফুলের টব, ছাদবাগান ও ফ্রিজের নিচের ট্রেতে তিন দিনের বেশি পানি যাতে জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসাবাড়ি, ছাদ ও আঙিনা নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার রাখতে হবে। এটি সবার দায়িত্ব।
চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই। তবে আগামী মাস থেকে ডেঙ্গুর বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ আমাদেরকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ গরমের সাথে থেমে থেমে বৃষ্টি হলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর পরিমাণ বাড়ে। গত কয়েক বছর ধরে আমরা এটি দেখে আসছি। তবে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
উল্লেখ্য, গত বছর চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩২৩ জন। মারা যান ৪৫ জন। ২০২৩ সালে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮৭ জন। এর মধ্যে মারা যান ১০৭ জন। ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জন। ২০২১ সালে আক্রান্ত হন ২২১ জন এবং মারা যান ৫ জন।