ঢাকা , সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
সরাসরি ঢাকা-রিয়াদ ফ্লাইট চালু করল ইউএস-বাংলা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ভবনের স্বীকৃতি পেল মসজিদুল হারাম মসজিদে নববীর ইমামকে মালদ্বীপে লালগালিচা অভ্যর্থনা হজ্বের নতুন বিধিমালা প্রকাশ করল সৌদি আফগানিস্তানের বাগলান প্রদেশে বিগত বছরে ৬ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি গাজায় ৩০ হাজার তরুণ যোদ্ধা নিয়োগ: প্রতিরোধ শক্তির নতুন দিগন্ত আফগান বিমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন তালিবানের ১০ জন পাইলট কালবৈশাখী ঝড়ে মীরসরাইয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হাটহাজারীতে গভীর রাতে ডাকাতি, গৃহকর্তাকে কুপিয়ে জখম বুরকিনায় ৪টি শত্রু শিবিরে মুজাহিদদের হামলা: অন্তত ১৭ জান্তা সেনা নিহত

নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব

রাজনীতিতে হঠাৎ করেই গণপরিষদ নির্বাচনের আলোচনা শীর্ষে উঠে এসেছে। ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের প্রতিষ্ঠা দিবসে গণপরিষদ নির্বাচন এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি তুলেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ বিষয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিএনপি এবং অন্যান্য দলগুলো গণপরিষদ নির্বাচনকে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে, যার ফলে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

এনসিপি’র দাবি: গণপরিষদ নির্বাচন একসঙ্গে জাতীয় নির্বাচনও হতে পারে

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দাবি করেছে যে, গণপরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে, এতে কোনো নির্বাচন পেছাতে হবে না। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল আসলাম আদিব জানান, “আমরা গণপরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করার পক্ষে। সরকারের প্রস্তুতি থাকলে, দুটি নির্বাচনই একই সময়ে আয়োজন সম্ভব। এতে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে না।”

এনসিপির পক্ষ থেকে এই দাবির উদ্দেশ্য হলো নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে সংবিধান সংশোধন এবং নতুন সংবিধান তৈরির ম্যান্ডেট দেওয়া, যাতে তারা পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসতে পারেন। তবে, দলটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তারা নির্বাচনের সময় পেছাতে চায় না।

বিএনপি’র বিরোধিতা: গণপরিষদ নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র

বিএনপি এই গণপরিষদ নির্বাচন দাবিকে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “গণপরিষদ নির্বাচন, সেকেন্ড রিপাবলিক কিংবা নতুন সংবিধান—এসব কিছুই নির্বাচন পেছানোর উদ্দেশ্য হতে পারে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত হওয়া উচিত, এটি একেবারেই পেছানো যায় না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য আমরা সময়ক্ষেপণ চাই না।”

বিএনপির দাবি, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণই একমাত্র কার্যকর পন্থা। তাই, গণপরিষদ নির্বাচন কিংবা নতুন সংবিধান প্রণয়ন যেন কোনোভাবেই নির্বাচনের সময়ের সাথে টানা না হয়, এমন একটি মত প্রকাশ করেছেন তারা।

নির্বাচন কমিশনের অবস্থান: জাতীয় নির্বাচন কবে?

এদিকে, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন যদি ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, তবে সে জন্য নির্বাচনী প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করা প্রয়োজন। মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, নির্বাচন কমিশনার, বলেন, “যদি আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করি, তাহলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে। আমাদের প্রস্তুতি জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে, তবে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য আমাদের।”

এছাড়া, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বিতর্কও চলছে। জামায়াতে ইসলামী স্থানীয় নির্বাচন দ্রুত করতে চাইছে, তাদের মতে, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে, যা উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

স্থানীয় নির্বাচন: বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচন দ্রুত হওয়া উচিত, কারণ বর্তমানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে উন্নয়ন কাজ থেমে গেছে এবং জনগণ তাদের সমস্যার সমাধান পায় না।” তবে বিএনপি এই দাবি নাকচ করে দিয়ে বলছে, “স্থানীয় নির্বাচন হলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, যা জনগণের জন্য ক্ষতিকর।”

নির্বাচন পেছানোর সন্দেহ: এনসিপি কি আসলেই নির্বাচনের সময় পেছাতে চায়?

এনসিপির দাবি এবং রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, তারা কি আসলে নির্বাচন পেছাতে চাইছে? এনসিপি এই অভিযোগ নাকচ করেছে এবং বলছে যে, তারা কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনের সময় পেছাতে চায় না। তবে বিএনপি এবং জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলো এসব দাবির মধ্যে ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছে, যা নির্বাচন পেছানোর লক্ষ্যে হতে পারে।

রাজনীতির ভবিষ্যৎ: কী সিদ্ধান্ত আসবে?

গণপরিষদ নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে চলমান বিতর্ক ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। একদিকে এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা বলছে, অন্যদিকে বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত করার দাবি জানাচ্ছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও কমিশনের কাছে পৌঁছায়নি।

আগামী দিনগুলোতে এই রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং নির্বাচন বিষয়ক সিদ্ধান্ত কীভাবে সামনে এগোয়, তা সময়ই বলে দেবে।

জনপ্রিয়

সরাসরি ঢাকা-রিয়াদ ফ্লাইট চালু করল ইউএস-বাংলা

নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ১১:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

রাজনীতিতে হঠাৎ করেই গণপরিষদ নির্বাচনের আলোচনা শীর্ষে উঠে এসেছে। ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের প্রতিষ্ঠা দিবসে গণপরিষদ নির্বাচন এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি তুলেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে এ বিষয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিএনপি এবং অন্যান্য দলগুলো গণপরিষদ নির্বাচনকে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে, যার ফলে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

এনসিপি’র দাবি: গণপরিষদ নির্বাচন একসঙ্গে জাতীয় নির্বাচনও হতে পারে

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দাবি করেছে যে, গণপরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে, এতে কোনো নির্বাচন পেছাতে হবে না। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল আসলাম আদিব জানান, “আমরা গণপরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে করার পক্ষে। সরকারের প্রস্তুতি থাকলে, দুটি নির্বাচনই একই সময়ে আয়োজন সম্ভব। এতে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে না।”

এনসিপির পক্ষ থেকে এই দাবির উদ্দেশ্য হলো নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে সংবিধান সংশোধন এবং নতুন সংবিধান তৈরির ম্যান্ডেট দেওয়া, যাতে তারা পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসতে পারেন। তবে, দলটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, তারা নির্বাচনের সময় পেছাতে চায় না।

বিএনপি’র বিরোধিতা: গণপরিষদ নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র

বিএনপি এই গণপরিষদ নির্বাচন দাবিকে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “গণপরিষদ নির্বাচন, সেকেন্ড রিপাবলিক কিংবা নতুন সংবিধান—এসব কিছুই নির্বাচন পেছানোর উদ্দেশ্য হতে পারে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত হওয়া উচিত, এটি একেবারেই পেছানো যায় না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য আমরা সময়ক্ষেপণ চাই না।”

বিএনপির দাবি, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণই একমাত্র কার্যকর পন্থা। তাই, গণপরিষদ নির্বাচন কিংবা নতুন সংবিধান প্রণয়ন যেন কোনোভাবেই নির্বাচনের সময়ের সাথে টানা না হয়, এমন একটি মত প্রকাশ করেছেন তারা।

নির্বাচন কমিশনের অবস্থান: জাতীয় নির্বাচন কবে?

এদিকে, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন যদি ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, তবে সে জন্য নির্বাচনী প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করা প্রয়োজন। মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, নির্বাচন কমিশনার, বলেন, “যদি আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করি, তাহলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে। আমাদের প্রস্তুতি জুনের মধ্যে শেষ করতে হবে, তবে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য আমাদের।”

এছাড়া, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে বিতর্কও চলছে। জামায়াতে ইসলামী স্থানীয় নির্বাচন দ্রুত করতে চাইছে, তাদের মতে, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে, যা উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

স্থানীয় নির্বাচন: বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচন দ্রুত হওয়া উচিত, কারণ বর্তমানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে উন্নয়ন কাজ থেমে গেছে এবং জনগণ তাদের সমস্যার সমাধান পায় না।” তবে বিএনপি এই দাবি নাকচ করে দিয়ে বলছে, “স্থানীয় নির্বাচন হলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, যা জনগণের জন্য ক্ষতিকর।”

নির্বাচন পেছানোর সন্দেহ: এনসিপি কি আসলেই নির্বাচনের সময় পেছাতে চায়?

এনসিপির দাবি এবং রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, তারা কি আসলে নির্বাচন পেছাতে চাইছে? এনসিপি এই অভিযোগ নাকচ করেছে এবং বলছে যে, তারা কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনের সময় পেছাতে চায় না। তবে বিএনপি এবং জামায়াতসহ অন্যান্য দলগুলো এসব দাবির মধ্যে ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছে, যা নির্বাচন পেছানোর লক্ষ্যে হতে পারে।

রাজনীতির ভবিষ্যৎ: কী সিদ্ধান্ত আসবে?

গণপরিষদ নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে চলমান বিতর্ক ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। একদিকে এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচন ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা বলছে, অন্যদিকে বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন দ্রুত করার দাবি জানাচ্ছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও কমিশনের কাছে পৌঁছায়নি।

আগামী দিনগুলোতে এই রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং নির্বাচন বিষয়ক সিদ্ধান্ত কীভাবে সামনে এগোয়, তা সময়ই বলে দেবে।