মুন্সীগঞ্জে চলতি বছর আলুর বাম্পার ফলন হলেও হিমাগারে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে মাঠেই পড়ে আছে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন আলু। জেলায় মোট উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৮২ হাজার ৫৩৮ মেট্রিক টন, কিন্তু ৫৮টি হিমাগারে সংরক্ষিত হয়েছে মাত্র ৫ লাখ ৬ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন। ফলে সংরক্ষণের উপযুক্ত স্থান না পেয়ে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে সস্তায় আলু বিক্রি করছেন।
এই সংকট মোকাবিলায় কৃষকদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছে বিদ্যুৎবিহীন ‘অহিমায়িত মডেল ঘর’। প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে নিজ বাড়িতে নির্মিত এই ঘরগুলো ১৫-২০ বছর পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য। উঁচু, খোলা ও আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে নির্মিত এসব ঘরে বিদ্যুৎ ছাড়াই চার মাস পর্যন্ত মানসম্মতভাবে আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব।
স্থানীয় এক কৃষক জানান, ‘ঘরটা কোল্ডস্টোরের মতো, কোনো বিদ্যুৎ লাগে না, যাতায়াত খরচও নেই। আলু শুকায় না, ওজনও কমে না।’ অন্য একজন বলেন, ‘মাত্র ৬-৭ টাকা খরচ হয়। বস্তা কেনা ও বদলির খরচও বাঁচে।’
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম জানান, এই ঘরে আলু সংরক্ষণ করলে কৃষক যে কোনো সময় বাজারে আলু বিক্রি করতে পারেন, কোল্ডস্টোরের মতো প্রিকুলিংয়ের ঝামেলা নেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার হেমন্ত মনে করেন, বড় কৃষকরা এই ঘর স্থাপন করলে তারা ন্যায্য মূল্য পাবেন এবং অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবেন। সরকারিভাবে জেলায় প্রান্তিক কৃষকদের জন্য এখন পর্যন্ত ২১টি অহিমায়িত মডেল ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। দেড় শতাংশ জমির ওপর বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি এসব ঘরে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ সম্ভব।
কৃষি বিভাগ বলছে, এই প্রযুক্তির মডেল ঘরের সংখ্যা আরও বাড়ানো গেলে হিমাগারনির্ভর সিন্ডিকেট ভাঙতে সহায়ক হবে এবং কৃষকরা অধিক স্বাধীনভাবে বাজারে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।