রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে আজ শনিবার। বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বক্তব্য রাখবেন।
গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে। এ জন্য গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশন এরই মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এ অবস্থায় সব পক্ষের ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে সরকার।
গত বুধবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজকে এই কমিশনের সহসভাপতি করা হয়েছে। কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনপ্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করবে। এই কমিশন আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং এ মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করবে এ কমিশন। কমিশনের মেয়াদ হবে কার্যক্রম শুরুর তারিখ থেকে ৬ মাস।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে। এ জন্য নবগঠিত এ কমিশন বিষয়ে আলোচনার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ বৈঠকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দল, জাতীয় নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। এই বৈঠকের পর দলগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠক হতে পারে।
পটপরিবর্তনের আগে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে এক বিন্দুতে থাকলেও এরই মধ্যে নির্বাচন ও সংস্কারসহ নানা বিষয়ে বিভাজন দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে। নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়ে বড় দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এ মুহূর্তে দুই মেরুতে অবস্থান করছে। ন্যূনতম সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায় বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে জামায়াতসহ আরও বেশ কয়েকটি দল।
এদিকে, গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশকে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার একটা পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হবে, ততই রাজনীতি সহজ হবে, বাংলাদেশের মানুষ স্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে আসবে।’
বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্রদের এমন বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্যের উদ্যোগ কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকলেও নির্বাচনের আগে ঐকমত্য গঠনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।