ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হিজাব খুলতে হচ্ছে: ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ইসরায়েলি অবরোধে গাজায় ৩৩০ জনের মৃত্যু, ৩ শতাধিক গর্ভপাত ঈদযাত্রা নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত ঈদের আগে বোনাসের সুখবর পেলেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মানবিক করিডর নিয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি, হবেও না: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারতীয় নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশের সর্বশেষ অবস্থান জানালো প্রেস উইং শিক্ষিত বেকারত্বে উদ্বেগ, সমাধানে দক্ষতা ও মানসিকতা বদলের তাগিদ ডিএনসিসিতে কাজ না পেয়ে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে উত্তপ্ত পরিস্থিতি

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হিজাব খুলতে হচ্ছে: ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

হিজাব পরিহিত কেউ আসলে তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি মাদ্রাজ আইটি। তাদের হাতেই বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স। হিজাব থাকলে সেটি খুলতে হবে না হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স হবে না-সাফ জানিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের।
অথচ বিআরটির ওয়েব সাইটে এরকম কোন নিয়মের কথা বলা নেই। অঘোষিত এই নিয়মে ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশী হিজাবি নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে একরকম অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। বিভিন্ন ড্রাইভিং স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিআরটিএ-তে লাইসেন্স করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন বেশ কয়েকজন নারী।
বুধবার (২১ মে) সরেজমিন মিরপুর ১২ নম্বর বিআরটিসির বাস ডিপোতে গিয়ে সরাসরি এমন ঘটনার প্রমাণ মিলেছে।
সেখানে বায়োমেট্রিক কক্ষে মাদ্রাজ আইটির লোকজন বসেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারী একজন নারী সেখানে একটি কাউন্টারে গেলে তাকে বলা হয় হিজাব খুলতে। এতে তিনি রাজি হননি। তখন তাকে ফিরিয়ে দেন মাদ্রাজ আইটির কর্মকর্তা। তাকে বলা হয় হিজাব না খুললে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স হবে না। এখানে এটাই নিয়ম- হিজাব খুলে কান বের করতে হবে।
মাদ্রাজ আইটির কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লাইসেন্স প্রত্যাশী ওই নারীকে হিজাব না খুললে চলে যেতে বলেন। কারণ হিসাবে বিআরটিএর নির্দেশনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
ঘটনাস্থলেই থাকা বিআরটিএ ইন্সপেক্টরের নির্দেশে পরে অন্য একটি বুথে হিজাব সহ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি তোলা হয়।
তখনই ভারতীয় কোম্পানি মাদ্রাজ আইটির সাদিয়া ইসলামের কাছে বিআরটিএর নির্দেশনা দেখতে চাইলে তিনি সেটি দেখাতে পারেননি। হিজাব ছাড়া কান খুলে ছবি তোলার বিষয়টি তার জানা রয়েছে বলে দাবি করেন।
হিজাব সহ ছবি তুলতে বিআরটিএর বাধা নেই – বিষয়টি সাদিয়া ইসলামকে জানানোর পরও তিনি ছবি তুলতে রাজি হননি। উল্টো সাংবাদিককে- “আসছে আমাকে শেখাতে, ভালোমতো শিখিয়ে দেবো -বলে হুমকি দেন।”
ড্রাইভিং লাইসেন্স বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বি আর টি এর প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (রোড সেফটি) শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। ভারতীয় কোম্পানি মাদ্রাজের সঙ্গে তাদের আর তিন মাসের চুক্তি রয়েছে বলে জানান তিনি। নতুন করে কে বিআরটিএর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নেবে সেটি এখনো ঠিক হয়নি। এমনকি টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। আলোচনা পর্যায়েও যায়নি।
মিরপুর ১২ নাম্বারে মাদ্রাজ আইটি হিজাব সহ ছবি না নিয়ে প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি জানানো হলে- তিনি খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান। তবে এ বিষয়ে তারও নির্দিষ্ট করে কিছু জানা নেই।
বিআরটিএর অন্য একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি তোলা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। বাংলাদেশের বাস্তবতায় হিজাবধারি অনেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স করবেন এটা স্বাভাবিক। এটাকে কেউ বাধা দিতে পারে না। বিআরটিএ-তে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
ওয়েবসাইটে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি তোলার বিষয়ে বলা হয়েছে মুখ মন্ডলে স্পষ্ট ছবি থাকতে হবে। ওয়েবসাইট সহ গুগল তথ্য বলছে, লাইসেন্সের ছবির জন্য সাধারণত এমন ছবি তোলা হয় যেখানে ব্যক্তির মুখমণ্ডল স্পষ্টভাবে দেখা যায়। যদিও সুনির্দিষ্টভাবে “কান দেখানো বাধ্যতামূলক” এমন কোনো কঠোর নিয়ম বিআরটিএ-এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ নেই, তবে পাসপোর্ট সাইজের ছবির ক্ষেত্রে সাধারণত কান দেখা যায় এমনভাবে ছবি তোলার একটি সাধারণ রীতি আছে।
দেশে ভালো মানের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক । ব্র্যাকের ড্রাইভিং স্কুলের ধানমন্ডি শাখার ইন্সট্রাক্টর এবাদত হোসেন জানান, তাদের এখান থেকে একাধিক নারী যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে যখন বি আর টি এতে পরীক্ষা দিতে গেছেন তখন হিজাব খুলে ছবি তুলতে বলা হয়। যে কারণে তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স না করেই ফিরে যান। এরকম বহু ঘটনা রয়েছে বলে জানান এই ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর।
বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাজ আইটির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা যিনি বিআরটিএ বনানী অফিসে বসেন তার কাছে জানতে চাইলে সাকিব নামের এই আইটি এক্সপার্ট বলেন, বাংলাদেশের হিজাব বা উড়না পরে ছবি তুলবে এটা স্বাভাবিক। বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া দরকার। এটা অপারেশন বিভাগে যারা থাকেন তাদের সঙ্গে পর্যালোচনা করতে হবে। তবে বিষয়গুলো দেখাশোনার জন্য মূল দায়িত্ব পরিচালক সিতাংশু শেখর ও উপ-পরিচালক ইব্রাহিমের।
হিজাব নিষিদ্ধ ছাড়াও মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (Madras Security Printers – MSP) বিআরটিএ-এর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিংয়ের কাজ পাওয়ার পর অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাদের আগে বিআরটিএর এই কাজ দেখতো টাইগার আইটি। (Tiger IT)-এর চুক্তি শেষ হওয়ার পর নতুন দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৯ ও ২০২০ সালের দরপত্র প্রক্রিয়ার পর ২০২১ সালের ২৯ জুলাই মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৪০ লাখ স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স সরবরাহের চুক্তি পায়।
অভিযোগ ওঠে যে, বিশেষ সুবিধা দিয়ে মাদ্রাজ প্রিন্টার্সকে কাজ দেওয়া হয়েছে, যদিও তাদের আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত ইতিহাস ছিল ।কেনিয়াতে জাল ট্যাক্স স্ট্যাম্প বিতরণের অভিযোগ। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী সময়ে কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি, যার ফলে লাখ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন আটকে থাকে। প্রায় ২ বছর পর্যন্ত মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাদের কার্ড সরবরাহের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, কারণ তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কার্ড সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অতীতে ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির অভিযোগ থাকায় বাংলাদেশের ড্রাইভারদের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।
এরপরও ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপে বিদেশি কোম্পানিকে পাশ কাটিয়ে ভারতীয় কোম্পানিটি বিআরটি-এর মত জন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসে যায়। জানা গেছে, তারাই নিয়ম করে রেখেছে- হিজাব পরে কেউ এলে তার কোন ছবি তুলবে না। যে কারণে হিজাব পরে অনেকেই এখানে এসে ড্রাইভিং লাইসেন্স না করে চলে গেছেন। কারণ তাদেরকে মাথার কাপড় খুলতে হবে। দেখাতে হবে কান। এরপর ছবি তুললে হবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের। আপত্তি জানিয়ে বহু নারী বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেননি। এখন সরকার পরিবর্তনের পরও ভারতীয় কোম্পানি সেই একই নিয়ম বহাল রেখেছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী জানিয়েছেন, দেশের বাইরে বিভিন্ন মুসলিম দেশে এমনকি ইউরোপ আমেরিকাতে কেউ হিজাব পড়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তার কান দেখাতে হয় না। হিজাব খুলতে হয় না। ‌

সূত্র: বাংলাদেশ টাইমস

জনপ্রিয়

ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হিজাব খুলতে হচ্ছে: ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

প্রকাশিত: ১৭ মিনিট আগে
হিজাব পরিহিত কেউ আসলে তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি মাদ্রাজ আইটি। তাদের হাতেই বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স। হিজাব থাকলে সেটি খুলতে হবে না হলে ড্রাইভিং লাইসেন্স হবে না-সাফ জানিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের।
অথচ বিআরটির ওয়েব সাইটে এরকম কোন নিয়মের কথা বলা নেই। অঘোষিত এই নিয়মে ভারতীয় কোম্পানি বাংলাদেশী হিজাবি নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে একরকম অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। বিভিন্ন ড্রাইভিং স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিআরটিএ-তে লাইসেন্স করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন বেশ কয়েকজন নারী।
বুধবার (২১ মে) সরেজমিন মিরপুর ১২ নম্বর বিআরটিসির বাস ডিপোতে গিয়ে সরাসরি এমন ঘটনার প্রমাণ মিলেছে।
সেখানে বায়োমেট্রিক কক্ষে মাদ্রাজ আইটির লোকজন বসেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারী একজন নারী সেখানে একটি কাউন্টারে গেলে তাকে বলা হয় হিজাব খুলতে। এতে তিনি রাজি হননি। তখন তাকে ফিরিয়ে দেন মাদ্রাজ আইটির কর্মকর্তা। তাকে বলা হয় হিজাব না খুললে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স হবে না। এখানে এটাই নিয়ম- হিজাব খুলে কান বের করতে হবে।
মাদ্রাজ আইটির কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম লাইসেন্স প্রত্যাশী ওই নারীকে হিজাব না খুললে চলে যেতে বলেন। কারণ হিসাবে বিআরটিএর নির্দেশনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
ঘটনাস্থলেই থাকা বিআরটিএ ইন্সপেক্টরের নির্দেশে পরে অন্য একটি বুথে হিজাব সহ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি তোলা হয়।
তখনই ভারতীয় কোম্পানি মাদ্রাজ আইটির সাদিয়া ইসলামের কাছে বিআরটিএর নির্দেশনা দেখতে চাইলে তিনি সেটি দেখাতে পারেননি। হিজাব ছাড়া কান খুলে ছবি তোলার বিষয়টি তার জানা রয়েছে বলে দাবি করেন।
হিজাব সহ ছবি তুলতে বিআরটিএর বাধা নেই – বিষয়টি সাদিয়া ইসলামকে জানানোর পরও তিনি ছবি তুলতে রাজি হননি। উল্টো সাংবাদিককে- “আসছে আমাকে শেখাতে, ভালোমতো শিখিয়ে দেবো -বলে হুমকি দেন।”
ড্রাইভিং লাইসেন্স বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বি আর টি এর প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক (রোড সেফটি) শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। ভারতীয় কোম্পানি মাদ্রাজের সঙ্গে তাদের আর তিন মাসের চুক্তি রয়েছে বলে জানান তিনি। নতুন করে কে বিআরটিএর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নেবে সেটি এখনো ঠিক হয়নি। এমনকি টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। আলোচনা পর্যায়েও যায়নি।
মিরপুর ১২ নাম্বারে মাদ্রাজ আইটি হিজাব সহ ছবি না নিয়ে প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি জানানো হলে- তিনি খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান। তবে এ বিষয়ে তারও নির্দিষ্ট করে কিছু জানা নেই।
বিআরটিএর অন্য একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি তোলা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। বাংলাদেশের বাস্তবতায় হিজাবধারি অনেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স করবেন এটা স্বাভাবিক। এটাকে কেউ বাধা দিতে পারে না। বিআরটিএ-তে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।
ওয়েবসাইটে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি তোলার বিষয়ে বলা হয়েছে মুখ মন্ডলে স্পষ্ট ছবি থাকতে হবে। ওয়েবসাইট সহ গুগল তথ্য বলছে, লাইসেন্সের ছবির জন্য সাধারণত এমন ছবি তোলা হয় যেখানে ব্যক্তির মুখমণ্ডল স্পষ্টভাবে দেখা যায়। যদিও সুনির্দিষ্টভাবে “কান দেখানো বাধ্যতামূলক” এমন কোনো কঠোর নিয়ম বিআরটিএ-এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ নেই, তবে পাসপোর্ট সাইজের ছবির ক্ষেত্রে সাধারণত কান দেখা যায় এমনভাবে ছবি তোলার একটি সাধারণ রীতি আছে।
দেশে ভালো মানের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক । ব্র্যাকের ড্রাইভিং স্কুলের ধানমন্ডি শাখার ইন্সট্রাক্টর এবাদত হোসেন জানান, তাদের এখান থেকে একাধিক নারী যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে যখন বি আর টি এতে পরীক্ষা দিতে গেছেন তখন হিজাব খুলে ছবি তুলতে বলা হয়। যে কারণে তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স না করেই ফিরে যান। এরকম বহু ঘটনা রয়েছে বলে জানান এই ড্রাইভিং ইন্সট্রাক্টর।
বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাজ আইটির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা যিনি বিআরটিএ বনানী অফিসে বসেন তার কাছে জানতে চাইলে সাকিব নামের এই আইটি এক্সপার্ট বলেন, বাংলাদেশের হিজাব বা উড়না পরে ছবি তুলবে এটা স্বাভাবিক। বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া দরকার। এটা অপারেশন বিভাগে যারা থাকেন তাদের সঙ্গে পর্যালোচনা করতে হবে। তবে বিষয়গুলো দেখাশোনার জন্য মূল দায়িত্ব পরিচালক সিতাংশু শেখর ও উপ-পরিচালক ইব্রাহিমের।
হিজাব নিষিদ্ধ ছাড়াও মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (Madras Security Printers – MSP) বিআরটিএ-এর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিংয়ের কাজ পাওয়ার পর অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাদের আগে বিআরটিএর এই কাজ দেখতো টাইগার আইটি। (Tiger IT)-এর চুক্তি শেষ হওয়ার পর নতুন দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৯ ও ২০২০ সালের দরপত্র প্রক্রিয়ার পর ২০২১ সালের ২৯ জুলাই মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ৪০ লাখ স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স সরবরাহের চুক্তি পায়।
অভিযোগ ওঠে যে, বিশেষ সুবিধা দিয়ে মাদ্রাজ প্রিন্টার্সকে কাজ দেওয়া হয়েছে, যদিও তাদের আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত ইতিহাস ছিল ।কেনিয়াতে জাল ট্যাক্স স্ট্যাম্প বিতরণের অভিযোগ। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী সময়ে কার্ড সরবরাহ করতে পারেনি, যার ফলে লাখ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন আটকে থাকে। প্রায় ২ বছর পর্যন্ত মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। তাদের কার্ড সরবরাহের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, কারণ তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কার্ড সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অতীতে ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রির অভিযোগ থাকায় বাংলাদেশের ড্রাইভারদের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।
এরপরও ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপে বিদেশি কোম্পানিকে পাশ কাটিয়ে ভারতীয় কোম্পানিটি বিআরটি-এর মত জন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসে যায়। জানা গেছে, তারাই নিয়ম করে রেখেছে- হিজাব পরে কেউ এলে তার কোন ছবি তুলবে না। যে কারণে হিজাব পরে অনেকেই এখানে এসে ড্রাইভিং লাইসেন্স না করে চলে গেছেন। কারণ তাদেরকে মাথার কাপড় খুলতে হবে। দেখাতে হবে কান। এরপর ছবি তুললে হবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের। আপত্তি জানিয়ে বহু নারী বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেননি। এখন সরকার পরিবর্তনের পরও ভারতীয় কোম্পানি সেই একই নিয়ম বহাল রেখেছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী জানিয়েছেন, দেশের বাইরে বিভিন্ন মুসলিম দেশে এমনকি ইউরোপ আমেরিকাতে কেউ হিজাব পড়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য তার কান দেখাতে হয় না। হিজাব খুলতে হয় না। ‌

সূত্র: বাংলাদেশ টাইমস