বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার প্রাথমিক সংকেত দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর ও নেত্রকোণা এবং সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে। পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দেশের নদনদীগুলোর পানি হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে, যার মধ্যে চেল্লাখালী নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
বেসরকারি আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট আবহাওয়া ডটকম-এর প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, “ভারতের মেঘালয় ও আসামে গত কয়েকদিন ধরে টানা ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ফলে পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি ঘটাচ্ছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “মঙ্গলবার থেকে বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে একনাগাড়ে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই মাত্রা সোমবার রাত ১০টায় ছিল ৩৯ সেন্টিমিটার ওপরে, অর্থাৎ মাত্র ১২ ঘণ্টায় পানির উচ্চতা বেড়েছে ৬৭ সেন্টিমিটার।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত চার দিন ধরে শেরপুরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে জেলার নদনদী এবং খালগুলো পানিতে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
শুধু চেল্লাখালী নয়, নেত্রকোণার সোমেশ্বরী, সুনামগঞ্জের সুরমা এবং সিলেটের কুশিয়ারা নদীতেও পানি বাড়ছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। এই নদীগুলো মূলত ভারতের পাহাড়ি ঢলের ওপর নির্ভরশীল, ফলে উজানে বৃষ্টি বাড়লেই নিম্নাঞ্চলে হঠাৎ পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৃষ্টিপাতের এই ধারা আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার এক কৃষক জানান, “সকালেই দেখি বাড়ির পেছনের পুকুরের পানি উপচে উঠছে। বিকেলে ঘরের উঠান পর্যন্ত চলে এসেছে। ধানের জমিও পানির নিচে চলে গেছে।”
নেত্রকোণার দুর্গাপুর এবং বারহাট্টা উপজেলাতে ইতোমধ্যে কয়েকটি গ্রামের নিচু অংশে পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানা গেছে। কৃষিজমি, পুকুর ও রাস্তা প্লাবিত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ইতোমধ্যে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে নিচু এলাকায় থাকা বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া যায়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, যদি আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল একসাথে ঘটে, তবে তা হঠাৎ বন্যায় রূপ নিতে পারে। তাই সকলকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।