পাই (π) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধ্রুবক, যা বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকে নির্দেশ করে। এর মান প্রায় ৩.১৪১৫৯২৬৫৩৫৮৯৭৯৩২৩৮৪৬২৬৪৩৩৮৩২৭৯৫০২৮৮৪১৯৭১৬৯৩৯৯৩৭৫১০৫৮২০৯৭৪৯৪৪৫৯২৩০৭৮১৬৪০৬২৮৬২০৮৯৯৮৬২৮০৩৪৮২৫৩৪২১১৭০৬৭৯…। এটি একটি অসীম ও পুনরাবৃত্তিহীন দশমিক সংখ্যা, যার শেষ নেই। পাইয়ের এই রহস্যময় ও অমীমাংসিত বৈশিষ্ট্য গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের কাছে এক চিরন্তন আকর্ষণের বিষয়।
প্রতি বছর ১৪ মার্চ পাই দিবস হিসেবে পালিত হয়। কারণ মার্চ মাসের ১৪ তারিখকে (৩/১৪) পাইয়ের মান ৩.১৪-এর সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। ১৯৮৮ সালে প্রথম পাই দিবস উদযাপনের ধারণাটি জনপ্রিয় হয়। এরপর থেকে সারা বিশ্বে গণিত ও বিজ্ঞানপ্রেমীরা এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করে থাকেন। ২০১৯ সালে ইউনেস্কো পাই দিবসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় এবং এটি আন্তর্জাতিক গণিত দিবস হিসেবেও পালিত হতে শুরু করে।
পাইয়ের প্রথম নির্ভুল গণনা করেন প্রাচীন গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস (২৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে)। তিনি পিথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যবহার করে পাইয়ের মান ৩.১৪২৮৫৭ ও ৩.১৪০৮৪৫-এর মধ্যে বলে নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে ১৭০৬ সালে গণিতবিদ উইলিয়াম জোনস প্রথমবারের মতো গ্রিক অক্ষর π (পাই) ব্যবহার করেন বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত বোঝানোর জন্য। তাঁর থিসিস “সিনোপসিস পালমারিওরাম ম্যাথেসিওসে” —তে এই চিহ্নটি ব্যবহৃত হয়।
পাইয়ের ব্যবহার শুধু বৃত্তের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিভিন্ন গাণিতিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
– জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি ও ক্যালকুলাসে পাইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম।
– পদার্থবিজ্ঞান, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে পাইয়ের ব্যবহার দেখা যায়।
– প্রাচীন ব্যাবিলন ও মিসরীয় সভ্যতায়ও পাইয়ের মান বিভিন্ন মাত্রার নির্ভুলতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে।
পাইয়ের মান অসীম ও পুনরাবৃত্তিহীন হওয়ায় এটি গণিতবিদদের কাছে এক চিরন্তন রহস্য। পাইয়ের মান কত দূর পর্যন্ত গণনা করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা এখনো চলছে। কম্পিউটার প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে পাইয়ের মানের লক্ষাধিক বা কোটি কোটি দশমিক স্থান পর্যন্ত গণনা করা সম্ভব হয়েছে। তবে এর শেষ কোথায়, তা আজও অজানা।
পাইয়ের এই রহস্যময়তা ও গাণিতিক গুরুত্বের কারণে এটি বিজ্ঞান ও গণিতের জগতে এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। প্রতি বছর পাই দিবসে এই অসাধারণ ধ্রুবকটির প্রতি সম্মান জানানো হয় এবং গণিতের সৌন্দর্য ও গুরুত্বকে উদযাপন করা হয়।