দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে এবং বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা কাজে লাগাতে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দিচ্ছে সরকার। অর্থনীতিসহ দেশের সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে সুসংহত করতেই অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে কাজে লাগানোর প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৫ আগস্ট দেশের পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ নতুন করে গড়তে এই মুহূর্তে সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতা করতে বিদেশি বন্ধুরা সম্মতি দিয়েছে এবং সবাই নির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছে কেমন সহযোগিতা প্রয়োজন। এরই মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতদের বিষয়ে চীন, তুরস্ক, ব্রিটেনসহ একাধিক রাষ্ট্রের কাছ থেকে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। মূলত নতুন করে বাংলাদেশ গড়ার এই সময়ে বিদেশি অংশীদারদের কাছ থেকে আরও সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ আছে এবং তারাও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু কোন খাতে কী সহযোগিতা লাগবে, কারিগরি নাকি বিশেষজ্ঞ সহায়তা অথবা কোন ধরনের সহযোগিতা তা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। এ জন্যই মূলত খাত সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে তা চিহ্নিত করা হবে। এ জন্য প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে আগামী ৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অর্থনৈতিক কূটনীতিকে তিনভাগে বিভক্ত করে এর সুফল নিতে চায় সরকার। এগুলো হচ্ছে দেশ ও আঞ্চলিক ফোরাম (যেমন আসিয়ান, সার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদি) ভিত্তিক, বহুপক্ষীয় ফোরাম (যেমন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘ ইত্যাদি) এবং থিমভিত্তিক (যেমন জলবায়ু ফোরাম ইত্যাদি)। এসব ক্ষেত্রগুলোকে ঢাকা এখনও কাজে লাগাচ্ছে কিন্তু ক্ষেত্রগুলোকে আরও সমন্বিতভাবে কাজে লাগাতে চায় ঢাকা। এ জন্যই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সংক্রান্ত বিশেষ দূতের সভাপতিত্বে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এরই মধ্যে শিল্প সচিব, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বিদ্যুৎ সচিব, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব, নৌপরিবহন সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক ১ ও ২ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরকে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এমন বৈঠক এখন থেকে প্রতি মাসেই অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাতে করে সবাই একসঙ্গে বসে কোন সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের কেমন সহযোগিতা প্রয়োজন এবং কে কাকে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারবে তা সহজেই চিহ্নিত করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়। একসঙ্গে বসে পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে চ্যালেঞ্জগুলো সহজেই অতিক্রম করা যাবে। এই বৈঠকগুলোর একেকটিতে একেকজন উপদেষ্টাকে (যখন যে পরিস্থিতিতে যে মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন) অতিথি বক্তা হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি খাত থেকেও উল্লেখযোগ্য একজন করে অতিথিকে এই বৈঠকগুলোতে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই বৈঠকগুলো সরাসরি অনুষ্ঠিত হবে। তবে কেউ (যারা আমন্ত্রিত) চাইলে অনলাইন জুমেও অংশ নিতে পারবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল হক বলেন, এই উদ্যোগটা ভালো। এতে নতুনত্ব আছে এবং বিশ্বাস করি যে এটি কাজে লাগবে। কারণ এর আগেও অর্থনৈতিক কূটনীতিকে কাজে লাগানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা সাপোর্ট ছিল না। এখন যেভাবে প্রতি মাসে এমন বৈঠকের সিদ্ধান্ত হচ্ছে এবং কোন খাতের জন্য কোথা থেকে কী সহযোগিতা প্রয়োজন সেগুলো সমন্বয়ের কথা ভাবা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এবার বিষয়টা কাজে লাগবে। তবে বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য নিয়মিত মনিটর করতে হবে। এ জন্য একটি মনিটরিং সেল থাকলে ভালো। মিশনগুলোতে প্রকৃতপক্ষে অনেক কাজ এবং অনেক সম্ভাবনা আছে কিন্তু প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। আবার লেবার বা কমার্শিয়াল কাউন্সিলর পদগুলো মিশনের কোনো কাজে লাগে না। এগুলোও দেখতে হবে।