উগ্রবাদিতার অভিযোগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে মাত্র ৫৮ বছর আগে যাত্রা শুরু করা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেসের (ইসকন) । সংগঠনটির বিরুদ্ধে শাস্ত্র প্রচারে এবং ধর্মীয় বই বিতরণে উগ্রতার অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে গত সত্তর ও আশির দশকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইসকন রাশিয়া এবং অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত রাজ্যে কাজ করতে সক্ষম হয়। চীনে ইসকনের কার্যক্রমের অনুমতি নেই। ইসকনকে কোনোরকম কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি দেশটিতে।
মালয়েশিয়ায়ও নিষিদ্ধ ইসকন। দেশটিতে ইসকনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ আছে। শিয়াশাসিত ইরানে ইসকনের ক্রিয়াকলাপের অনুমতি নেই। এ ছাড়া সৌদি আরব ও আফগানিস্তানে ইসকনের কর্মকাণ্ডের অনুমতি নেই। ইন্দোনেশিয়ায় আংশিক নিষিদ্ধ ইসকন। কিছু শর্ত মেনে দেশটিতে কার্যক্রম চালাতে পারে সংগঠনটি। এ ছাড়াও তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানে ইসকনের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারি জারি রয়েছে।
বাংলাদেশেও সংগঠনটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন আইনজীবী আল মামুন রাসেল। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশেও ইসকনের কার্যক্রম বেশ বিতর্কিত। তিনি এক সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দেওয়ার লক্ষ্যে ইসকন ধর্মীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা সাধারণ হিন্দুদের ওপর নিজেদের বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং নিম্ন শ্রেণিভুক্ত হিন্দুদের জোরপূর্বক সদস্য বানাচ্ছে।
এ ছাড়া ইসকন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির দখল ও মসজিদে সাম্প্রতিককালে হামলা চালাচ্ছে বলেও আইনি নোটিসে জানিয়েছেন তিনি। এতে তিনি ঢাকার স্বামীবাগের একটি মসজিদের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সেখানে ইসকনের সংগীত অনুষ্ঠানের কারণে মুসল্লিদের তারাবির নামাজ পড়তে সমস্যা হচ্ছিল। এ বিষয়টি তাদের জানালে তারা পুলিশকে খবর দেয়। এতে করে সেখানে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ১৯৬৬ সালের ১৩ জুলাই যাত্রা শুরু হয় ইসকনের। এটি মূলত ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলে গড়ে ওঠা একটি সংগঠন। ইসকনের দাবি করা প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে মন্দির নির্মাণ, ধর্মীয় উপদেশ দেওয়া, শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রচার, ভক্তি কার্যক্রম এবং দাতব্য সংস্থা পরিচালনা।
মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলনের পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চার অংশ হিসেবে যোগব্যায়াম ও শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম করে থাকে সংগঠনটি। ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা অভয়াচরণারবিন্দ ভাক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ।