ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
ঢাকার শেয়ারবাজারে লেনদেন আবার ৪০০ কোটি টাকা ছাড়াল দেশে এক লাখ ৮২২ জন শিক্ষক নিয়োগে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ইরানের সঙ্গে আকাশ ও স্থলপথ বন্ধ করল পাকিস্তান‍ সাইফুজ্জামান জাভেদের যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ২৫ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ: দুদক প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের চার রুটে বিশেষ রেয়াতি ভাড়া চালু করল বিমান বাংলাদেশ ৫ দেশে নতুন মিশন খুলছে বাংলাদেশ সরকার কারাগারে চালু করা হলো হটলাইন নম্বর তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সাঈদা মুনা তাসনিম ও স্বামীর বিরুদ্ধে ২ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান ইউজিসির নীতিমালা তৈরির আগেই পিএইচডি চালু ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে

তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে গত চারদিন ধরে সংঘাত চলমান রয়েছে। দুই পক্ষের আকাশ-যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সামরিক ও বেসামরিক বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইরানে দুই শতাধিক এবং ইসরায়েলে প্রায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে— ইরানে অবস্থিত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা। ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের বড় একটি লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে তেহরান এবং সেখানেই বাংলাদেশ দূতাবাসের অবস্থান। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী বাংলাদেশিও তেহরানে অবস্থান করছেন। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রদূত, দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের পরিবারসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের তেহরানের বাইরে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে নিরাপত্তা। তেহরানে থাকা বিপজ্জনক হলে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়াই সঙ্গত।’ তিনি বলেন, ‘তেহরানের অবস্থা বুঝে দূতাবাস এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।

ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আট জন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশির গত ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে তেহরানে শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন ।

ইরানের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সেদেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন সেকটরে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। প্রায় ২০০ এর মতো শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এছাড়া মানবপাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সব সময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

যেকোনও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে দূতাবাসে কর্মরতদের পরিবারগুলোকে প্রথমে অন্য জায়গায় নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে ইসরায়েলি হামলার কোনও আগাম সতর্কতা না থাকায় পরিবারগুলো সরানো হয়নি।

সরকারের একটি সূত্র জানায়, তেহরানে প্রায় শতাধিক দূতাবাস এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যার মানুষ কর্মরত আছেন। তাদের প্রায় কেউই পরিবার সরিয়ে নেওয়ার মতো সময় পায়নি।

তিনি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছিল। ওই মুহূর্তে ইসরায়েল হামলা করতে পারে, বিষয়টি তেহরান বিবেচনা করেনি। দূতাবাসগুলোর কাছেও এ বিষয়ে আগাম কোনও সতর্কবার্তা ছিলো না।’

তেহরানের বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলে আরেকটি সূত্র জানায়, ইরাক দূতাবাসের কাছে একটি ক্ষেপনাস্ত্র বিস্ফোরিত হয়েছে রবিবার (১৫ জুন)। এখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তেহরানে ক্ষেপনাস্ত্র হামলার কারণে কোনও গ্রামে বা অন্যকোনও নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কূটনীতিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্বাগতিক দেশের। কিন্তু আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপনাস্ত্র থেকে নিরাপত্তা দেওয়াটা দুষ্কর।’

দূতাবাসের লোকদেরকে নিজেদের উদ্যোগে সরে যেতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইরানের পক্ষেও বেশি কিছু করা সম্ভব কিনা, সেটি বলা দুষ্কর।’

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে পাকিস্তান, আর্মেনিয়া ও তুরস্কের সীমান্ত রয়েছে। আকাশপথ বন্ধ থাকায় একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থলপথ দিয়ে সরে যাওয়া। এরমধ্যে সবচেয়ে দূরে ও দুর্গম স্থলপথ হচ্ছে পাকিস্তান। আর্মেনিয়া ও তুরস্ক যেতে হলে ভিসা লাগবে এবং সেটি এখন যোগাড় করা মুশকিল।’

জনপ্রিয়

ঢাকার শেয়ারবাজারে লেনদেন আবার ৪০০ কোটি টাকা ছাড়াল

তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ৩ ঘন্টা আগে

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে গত চারদিন ধরে সংঘাত চলমান রয়েছে। দুই পক্ষের আকাশ-যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সামরিক ও বেসামরিক বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইরানে দুই শতাধিক এবং ইসরায়েলে প্রায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে— ইরানে অবস্থিত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা। ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের বড় একটি লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে তেহরান এবং সেখানেই বাংলাদেশ দূতাবাসের অবস্থান। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী বাংলাদেশিও তেহরানে অবস্থান করছেন। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রদূত, দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের পরিবারসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের তেহরানের বাইরে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে নিরাপত্তা। তেহরানে থাকা বিপজ্জনক হলে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়াই সঙ্গত।’ তিনি বলেন, ‘তেহরানের অবস্থা বুঝে দূতাবাস এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।

ইরানে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত, দুজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন রয়েছেন। রেডিও তেহরানে আট জন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারসহ রয়েছেন ২৭ জন। তেহরানে শিক্ষার্থী রয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। পেশাজীবী আছেন প্রায় ১০ জন। এছাড়া ২৮ জন বাংলাদেশির গত ১৩ জুন দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েছেন। সব মিলিয়ে তেহরানে শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন ।

ইরানের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি আছেন, তারা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সেদেশে বসবাস করছেন। সেখানে বিয়ে করে তারা স্থায়ী হয়েছেন। এর বাইরে আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধভাবে ইরানে অবস্থান করে বিভিন্ন সেকটরে চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। প্রায় ২০০ এর মতো শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন। এছাড়া মানবপাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ইরানে সব সময় ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন অন্য দেশে পাচার হওয়ার অপেক্ষায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

যেকোনও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে দূতাবাসে কর্মরতদের পরিবারগুলোকে প্রথমে অন্য জায়গায় নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে ইসরায়েলি হামলার কোনও আগাম সতর্কতা না থাকায় পরিবারগুলো সরানো হয়নি।

সরকারের একটি সূত্র জানায়, তেহরানে প্রায় শতাধিক দূতাবাস এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যার মানুষ কর্মরত আছেন। তাদের প্রায় কেউই পরিবার সরিয়ে নেওয়ার মতো সময় পায়নি।

তিনি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছিল। ওই মুহূর্তে ইসরায়েল হামলা করতে পারে, বিষয়টি তেহরান বিবেচনা করেনি। দূতাবাসগুলোর কাছেও এ বিষয়ে আগাম কোনও সতর্কবার্তা ছিলো না।’

তেহরানের বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলে আরেকটি সূত্র জানায়, ইরাক দূতাবাসের কাছে একটি ক্ষেপনাস্ত্র বিস্ফোরিত হয়েছে রবিবার (১৫ জুন)। এখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তেহরানে ক্ষেপনাস্ত্র হামলার কারণে কোনও গ্রামে বা অন্যকোনও নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কূটনীতিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্বাগতিক দেশের। কিন্তু আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপনাস্ত্র থেকে নিরাপত্তা দেওয়াটা দুষ্কর।’

দূতাবাসের লোকদেরকে নিজেদের উদ্যোগে সরে যেতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে ইরানের পক্ষেও বেশি কিছু করা সম্ভব কিনা, সেটি বলা দুষ্কর।’

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে পাকিস্তান, আর্মেনিয়া ও তুরস্কের সীমান্ত রয়েছে। আকাশপথ বন্ধ থাকায় একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থলপথ দিয়ে সরে যাওয়া। এরমধ্যে সবচেয়ে দূরে ও দুর্গম স্থলপথ হচ্ছে পাকিস্তান। আর্মেনিয়া ও তুরস্ক যেতে হলে ভিসা লাগবে এবং সেটি এখন যোগাড় করা মুশকিল।’