বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক অজানা স্বর্গ নিঝুম দ্বীপ যেন পর্যটকদের কাছে নতুন চমক হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দ্বীপে সম্প্রতি যোগ হয়েছে নতুন এক আকর্ষণ- নামার বাজার সমুদ্রসৈকতে তৈরি একটি ৮০০ মিটার দীর্ঘ কাঠের সেতু। এটি কেবল কাঠের একটি পথ নয়, এটি স্থানীয় যুবকদের স্বপ্ন, উদ্যোগ আর স্বেচ্ছাশ্রমে গড়া এক বাস্তব কল্পনার রূপ।
নিঝুম দ্বীপের স্থানীয় কয়েকজন যুবক স্বেচ্ছাশ্রমে এবং কিছু ব্যবসায়ীর আর্থিক সহযোগিতায় সেতুটি নির্মাণ করেন। সাগরের ঢেউয়ের তালে তালে গাছের খুঁটির ওপর বসানো হয় কাঠের পাটাতন। মাঝে-মাঝে ছাউনির ঘর, যেখানে ক্লান্ত ভ্রমণপিপাসুরা বিশ্রাম নিতে পারেন। রঙিন পতাকায় সেজে ওঠা সেতুটি যেন এক অনন্য পরিবেশ তৈরি করেছে সমুদ্রসৈকতের বুকে।
সেতুটির নির্মাণকাজে কোনো সরকারি অর্থায়ন ছিল না, ছিল না কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা। স্থানীয়দের ভালোবাসা, দ্বীপের প্রতি দায়বদ্ধতা, আর পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর আন্তরিক চেষ্টা থেকেই গড়ে উঠেছে এই কাঠের সেতু। এটি এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
সেতুর ওপর দাঁড়ালে একদিকে চোখে পড়ে নীল আকাশ, অন্যদিকে নিচে গড়িয়ে চলা স্বচ্ছ জলরাশি। শেষ বিকালে, যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে লাল আভা ছড়িয়ে অস্ত যায়, তখন সেতুর শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের সে দৃশ্য যেন মন ছুঁয়ে যায়। এ যেন এক জীবন্ত পেইন্টিং, যেখানে প্রকৃতি নিজেই তুলির ছোয়ায় রাঙিয়ে চলেছে চারপাশ।
ঘুরতে আসা এক পর্যটক ইসমাইল হোসেন বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সেতুর ছবি দেখে ঘুরতে এসেছি। বাস্তবে এসে দেখি, ছবির চেয়েও সুন্দর। এখানে এসে প্রকৃতির এ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি। এই সেতু যেন পুরো নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্যের দরজা খুলে দিয়েছে।
এই কাঠের সেতু নিঝুম দ্বীপে পর্যটনের সম্ভাবনাকে নতুনভাবে উন্মোচন করেছে। স্থানীয় মাতবর হাজি মোস্তফা মিয়া বলেন, আমরা চাই এই দ্বীপে পর্যটকরা আরও বেশি আসুক, দ্বীপের সৌন্দর্যকে উপভোগ করুক।
যদিও এখন ৩০ টাকার টিকিটের মাধ্যমে সেতুতে ওঠার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, তবে আয়কৃত অর্থ সৈকতের উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি টেকসই ব্যবস্থাপনার উদাহরণ। যদি এই উদ্যোগ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে আরও বিস্তৃত করা যায়, তাহলে নিঝুম দ্বীপ হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইকো-ট্যুরিজম গন্তব্য।
নিঝুম দ্বীপের কাঠের সেতু কেবল একটি কাঠের নির্মাণ নয়, এটি মানুষের ভালোবাসা, উদ্যোগ আর প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সহাবস্থানের এক অনন্য উদাহরণ। ইচ্ছা আর উদ্যোগ থাকলে, ছোট পরিসরেও সৃষ্টি করা যায় বড় কিছু।