বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে সদ্যসমাপ্ত ৪ দিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে। ৭ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ৪২টিরও বেশি দেশের ৪২৫ জন বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশ নেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিলেন চীনের উদ্যোক্তা। দেশি উদ্যোক্তার সংখ্যা ছিল ২ হাজারেরও বেশি।
সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও পুঁজির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। জানানো হয়, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে খুব শিগগিরই নতুন জ্বালানি নীতি প্রকাশ করা হবে। এই নীতিতে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের নানা প্রশ্নের উত্তর থাকবে বলে জানায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
প্রশাসনিক জটিলতা ও দুর্নীতির সমাধানে কাজ চলছে
বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ ছিল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি ও লাইসেন্স পেতে দীর্ঘসূত্রতা। বিডা জানিয়েছে, এসব সমস্যার সমাধানে দেশের রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে এবং প্রায় সবকিছুই অটোমেশন করা হচ্ছে। এর ফলে আমলাতান্ত্রিক বাধা কমে আসবে এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
নীতির ধারাবাহিকতার আশ্বাস রাজনৈতিক দলগুলোর
শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নীতি পরিবর্তনের শঙ্কা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের। এবারের সম্মেলনে সেই উদ্বেগ দূর করতে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল—বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দলগুলো প্রতিশ্রুতি দেয়, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলেও বিনিয়োগবান্ধব নীতিতে পরিবর্তন আনা হবে না।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে নতুন দিগন্ত
বিনিয়োগকারীরা সরাসরি জানিয়েছেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘাটতি ব্যবসা পরিচালনায় বড় বাধা। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ সরকার গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। নতুন জ্বালানি নীতির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান আসছে।”
বাংলাদেশের বাজার ও জনশক্তি বড় আকর্ষণ
বিডা জানিয়েছে, বাংলাদেশে রয়েছে ১৮ কোটি মানুষের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং ১১ কোটির বেশি শ্রমশক্তি। ২৫ বছরের নিচে জনগণের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটিরও বেশি, যা মালয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। এতে করে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য সহজেই দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ঘোষণা ও আগ্রহ
সম্মেলনে একাধিক খ্যাতনামা কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চীনের হান্ডা ইন্ডাস্ট্রিজ ১৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবাও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। গ্রামীণফোন, লাফার্জ হোলসিম, জিওডারনো, ডিপি ওয়ার্ল্ড, এক্সিলারের এনার্জি এবং স্পেনের পোশাক প্রতিষ্ঠান ইনডিটেক্স বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে।
এছাড়া স্টারলিংক বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে এবং নাসার সঙ্গে মহাকাশ গবেষণায় চুক্তি হয়েছে।
সেবা আরও সহজ করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস
বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ও কার্যকর সেবা দিতে বিডা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের পরিধি বাড়াচ্ছে। বিডার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান বলেন, “বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে এবং বিনিয়োগ বাস্তবায়নে ধারাবাহিক মনিটরিং চলবে।”
এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের এক নতুন যুগে প্রবেশ করল বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। সরকারের নীতিগত প্রতিশ্রুতি ও বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে অভাবনীয় অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে।