ইসলামে জাকাত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোকন এবং ঈমানের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হিসেবে বিবেচিত। কুরআন মজীদে বহু স্থানে সালাত এবং জাকাতের আদেশ দেওয়া হয়েছে, এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অশেষ ছওয়াব, রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধি ও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে সালাত ও জাকাতের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। যেমন, সূরা বাকারা-১১০-এ আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা সালাত আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো আল্লাহ তা দেখছেন।” (সূরা বাকারা-১১০)
এছাড়া, সূরা নূর-৫৬-এ আল্লাহ বলেন, “তোমরা সালাত আদায় করো, জাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য করো যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।”
কুরআনের এই আয়াতগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, সালাত ও জাকাতের আদায় ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কোনো সম্ভাবনা নেই। জাকাত শুধুমাত্র একজন মুসলিমের আত্মশুদ্ধির উপায় নয়, এটি সমাজে অর্থনৈতিক সমতা এবং দরিদ্রদের সাহায্যের মাধ্যমে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
অপর একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুআ করবেন। আপনার দুআ তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা তাওবা-১০৩)
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাকাত না দেওয়া শুধু আল্লাহর আদেশ অমান্য করা নয়, এটি এক ধরনের আত্মহননও। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন, যারা তাদের সম্পদের একাংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করেন না, কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। যেমন, সূরা আলইমরান-১৮০-এ বলা হয়েছে, “আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদেরকে দিয়েছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে, এটা তাদের জন্য মঙ্গল। না, এটা তাদের জন্য অমঙ্গল। যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে কিয়ামতের দিন তা-ই তাদের গলায় বেড়ি হবে।”
হাদিস শরীফেও এসেছে, “যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি কিয়ামতের দিন তা বিষধর স্বর্পরূপে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধরপ্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ওই ধন, আমিই তোমরা পুঞ্জিভূত সম্পদ।” (সহিহ বুখারী)
এছাড়া, ইসলামের দৃষ্টিতে সালাত ও জাকাত ব্যতীত প্রকৃত ঈমান এবং দ্বীনের মৌলিক পরিচয় অসম্পূর্ণ। এক কথায়, সালাত ও জাকাত না থাকলে একজন মুসলিমের ঈমান এবং দ্বীনের পূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়। সুতরাং, মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্যকে তাদের সম্পদের একাংশ জাকাত হিসেবে প্রদান করা উচিত, যাতে সমাজে ন্যায় এবং সমতা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ব্যক্তিগত আত্মশুদ্ধি সম্ভব হয়।