গাজীপুর মহানগরের কাশেমপুর চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থিত বেক্সিমকো পার্কের শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে শনিবার আন্দোলন শুরু করেছেন। সকাল থেকে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করলে, কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। তবুও তারা সন্তুষ্ট হননি। দুপুরের দিকে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন।
শ্রমিকদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচির ফলে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে ইচ্ছুক বিভিন্ন কর্মস্থলের শ্রমিকরা মহাসড়কে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এতে যাত্রী এবং পথচারীদের ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়।
প্রতিবাদ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্প পুলিশ, এপিবিএন ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা করে।
এদিকে, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চক্রবর্তী এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশে টায়ার জ্বালিয়ে আন্দোলনকে তীব্র করে তোলেন।
শ্রমিকদের নেতৃবৃন্দ কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং দীর্ঘ আলোচনার পর তারা ১৭ তারিখের মধ্যে সব বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস পান। এর পর আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়।
তবে, সন্ধ্যা ৬টার দিকে কিছু শ্রমিক আবারো আন্দোলন শুরু করেন এবং অন্য শ্রমিকদের আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন। তারা পুনরায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন।
এখন শ্রমিকরা তাদের দাবি পূরণের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি চাপ বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা চললেও শ্রমিকদের সমস্যা ও দাবি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।
এই আন্দোলন শ্রমিকদের অধিকার ও কর্মস্থলের পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে এবং এটি শ্রমিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
শ্রমিকের ক্ষোভ প্রকাশ:
বেক্সিমকো গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক শ্রমিক তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন আর আমরা ধৈর্য ধরতে পারছি না! আমাদের বকেয়া বেতন নিয়ে কর্তৃপক্ষের অসংখ্য তালবাহানা শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত। আমরা প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করি, অথচ আমাদের প্রাপ্য বেতন দিতে তারা বারবার টালবাহানা করছে। আমাদের পরিশ্রমের মূল্য নেই, আমাদের কথা শুনতে তারা রাজি নয়।’
‘আমরা সারা মাস কাজ করে বেতন পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি, কিন্তু প্রতিবারই শুনতে হয় কিছুদিন পর। এই কথাগুলো শুনতে শুনতে আমাদের রাগ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা জানাচ্ছি, আমাদের বেতন দিলেই আমরা মহাসড়ক ছাড়বো। আমাদের অধিকার আদায়ে আমরা একসঙ্গে আছি, এবং যতদিন না আমাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়, ততদিন আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে,’ যোগ করেন ওই শ্রমিক।
চন্দ্রা থেকে ঢাকা চলাচলরত গাড়ির চালক তাহের মিয়া তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সকালে শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য অবরোধ করেছে, আবার রাতে একবার আরো অবরোধ করছে। আজকে ঠিকমতো গাড়ি চালাতেও পারছি না। একদিকে আতঙ্ক, অন্যদিকে যানজট মহাসড়কে অবরোধ তো রয়েই গেছে। আমরা কি দিনরাত শুধু এই ভোগান্তির মধ্যেই থাকবো?’
‘আমাদের আয় রুজি কমে যাচ্ছে। যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, তবে আমরা কিভাবে সংসার চালাব? আমাদের তো কোনো বিকল্প নেই। আমাদেরও তো জীবিকা আছে, আমাদেরও পরিবার আছে। আমরা কার দিকে তাকিয়ে থাকবো? আমাদেরকেও তো কিছু ভাবতে হবে,’ বলেন তাহের মিয়া।
বিদেশি মালিকানাধীন এক কারখানার শ্রমিক নাসিমা আক্তার তার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা এই রুটে প্রতিদিন যাতায়াত করি কোম্পানির গাড়িতে, কিন্তু আজকের সকালে সঠিক সময়ে কারখানায় পৌঁছাতে পারিনি। এ জন্য আমাদের কথা শুনতে হয়েছে, যা অত্যন্ত অমানবিক। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করার পর এখন বাসায় ফিরতে পারছি না। গাড়িতে বসে আছি, একদিকে অতিষ্ঠ গরম, অন্যদিকে কাল সকালে আবার কারখানায় যেতে হবে।’