ঢাকা , সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
পটুয়াখালী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন আবারও শাস্তির মুখে তাওহিদ হৃদয়, চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ডে সামরিক রাডার স্থাপন করলো সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত আন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জনগণের আস্থা এখনো অটুট: আলজাজিরাকে ড. ইউনূস উখিয়ায় স্ত্রীর মরদেহ হাসপাতালে রেখে পালালো স্বামী বাঁশখালীতে অগ্নিকাণ্ডে গোয়ালঘর ও গবাদি পশু পুড়ে ছাই রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে আগামীকাল পুলিশের উপর রিকশাচালকদের হামলায় আরও ৪জন গ্রেপ্তার বাঁশখালীতে এস আলমের হাজার কোটি টাকার জমি জব্দের আদেশ

অপ্রদর্শিত অর্থ-সম্পদ রাখার সন্দেহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লকার তল্লাশি চায় দুদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট কক্ষে রয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। এই কক্ষে রাষ্ট্রের মজুত স্বর্ণ, চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা স্বর্ণ, ছাপানো টাকা ও বাজার থেকে প্রত্যাহার করা পুরোনো টাকা রাখা হয়। এখানে সাবেক ডেপুটি গভর্নরের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর গোপন লকার খুলে দেখতে চাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ নিরাপদ ভল্ট কক্ষে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিশেষ লকার দেখেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সব লকারে কোটি কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ মজুত রয়েছে। দুদক মনে করছে, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ-সম্পদ লকারে রাখা হয়েছে। লকার মালিকদের নামের তালিকাও দেখেছেন এই পরিচালক।

এস কে সুরের অর্থ-সম্পদ উদ্ধারের পর সেগুলো আপাতত বাংলাদেশ ব্যাংকের হেফাজতে রাখা হয়েছে। অন্যদের সম্পদের বিষয়টি জানানো হলে লকারের সম্পদ কীভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, তা অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গোপন লকারগুলোতে সংশ্লিষ্টরা বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত আয় মজুত রেখেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়। এ মুহূর্তে লকারে রাখা অর্থ-সম্পদ তুলে নেওয়া বন্ধ না করা হলে তাদের আইনের আওতায় আনা কঠিন হবে। লকারের কোনো অর্থ-সম্পদ যাতে সরিয়ে না নেওয়া হয়, সে জন্য দুদক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবে। এ বিষয়ে দুদক স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবে।

লকারের সম্পদ সংরক্ষণ করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় যেন বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে জানায়, সে জন্য চিঠি দেবে দুদক। ভল্টের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আর যাতে কোনো ব্যক্তির অর্থ-সম্পদ রাখা না হয়, সে জন্যও সুপারিশ করবে।

জানা গেছে, গত রোববার রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলার একেবারে পূর্বপ্রান্তে তিনটি নিরাপত্তা স্তর পার হয়ে সর্বোচ্চ সুরক্ষিত বিশাল আকারের ‘কয়েন ভল্ট’ কক্ষে প্রবেশ করেছিলেন দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান, উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন, উপসহকারী পরিচালক সাবরিনা জামান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা সালেহা নূর। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে এই প্রথম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বাইরে কেউ ওই ভল্ট কক্ষে প্রবেশ করেছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই ভল্ট কক্ষের ভেতরে আরেকটি ভল্ট কক্ষ রয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রের মালিকানাধীন স্বর্ণ এবং চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা স্বর্ণ মজুত রাখা হয়েছে। এ ভল্ট কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ডাবল লক-সংবলিত লকার রাখা হয়েছে। যার যার লকারে প্যাকেট ও কৌটায় কাপড় মুড়ে সেলাই করে সিলগালা করে অর্থ-সম্পদ রাখা হয়। রেজিস্টারে প্যাকেট/কৌটার সংখ্যা উল্লেখ থাকে। সেগুলোর ভেতরে কী আছে, তা উল্লেখ করা হয় না। প্যাকেট/কৌটার ভেতরে কী রাখা হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংককেও জানানো হয় না।

আদালতের অনুমতি নিয়ে গত রোববার এস কে সুরের লকারে তিনটি সেফ ডিপোজিট নম্বরে মোট ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৯ টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে দুদক। লকারে ৫৫ হাজার ইউরো, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ ডলার, এফডিআরের ৭০ লাখ টাকা ও ৮৬.২২ ভরি (১০০৫.৪ গ্রাম) স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। গত ১৯ জানুয়ারি দুদক এস কে সুরের ঢাকার ধানমন্ডির বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে। এস কে সুর বর্তমানে কারাগারে আছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আমজাদ হোসেনের মোবাইল নম্বরে বারবার কল করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেনের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মোবাইল নম্বরে কল করলেও সাড়া মেলেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট কক্ষের ভেতরে ব্যক্তিগত লকার রাখায় মূল ভল্টের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটছে কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক (বিআরপিডি) মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী সমকালকে বলেন, এটাকে লকার বলে না। এটা একটা আলমারির মতো। সেখানে ছোট কৌটার মধ্যে মূল্যবান অর্থসম্পদ রাখা হয়। এটি মূলত সেফ ডিপোজিটের মতো একটি বিষয়। এদিকে ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুদককে দেওয়া এক চিঠিতে মূল্যবান সম্পদ রাখার ওই ব্যবস্থাকে ‘লকার (সেফ ডিপোজিট)’ উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মূলত দুটি চাবি দিয়ে খোলার একটি বিশেষ লকার। একটি চাবি থাকে মুদ্রানীতি বিভাগে, আরেকটি থাকে ক্যাশ শাখায়।

তিনি আরও বলেন, গ্রাহক তার সেফ ডিপোজিটগুলো নিজে সিলগালা করে রাখেন। সেখানে কী কী রাখা হয়েছে, সেগুলো বলা হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিষিদ্ধ কোনো পণ্য রাখা হয় না। এদিকে কী কী পণ্য মজুত রাখা হলো, সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চেক করা হয় না। নিষিদ্ধ কোনো সামগ্রী রাখা হয় না– এটা বলেছেন তাঁর বিশ্বাস থেকে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্থানে এ ধরনের বিশ্বাসের কোনো সুযোগ আছে কিনা– এ নিয়ে সন্দেহের জন্ম দেয়।

লকারে রাখা অর্থসম্পদগুলো তাদের আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয় কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে বিআরপিডি পরিচালক বলেন, সেফ ডিপোজিটের নামে যেগুলো রাখা হয়, সেগুলো আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করার কথা। যিনি উল্লেখ করেননি, সেটা তার দায়িত্ব। এর ব্যত্যয় ঘটলে তিনি নিজেই শাস্তিযোগ্য অপরাধের মধ্যে পড়েছেন। কোনো ফি ছাড়াই ২০ বছরের জন্য সম্পদ রাখার সুযোগ কেন দেওয়া হলো– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংকিং রেগুলেটরি পলিসি বাজেল কোর প্রিন্সিপালে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুদক বলেছে, যে কোনো নীতিই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির অপ্রদর্শিত সম্পদ লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। গোপন রাখা হলে সেটা ফৌজদারি অপরাধ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ভল্ট কক্ষের আয়তন অনেক বড়– এই কক্ষের এক পাশে সেফ ডিপোজিটের অর্থসম্পদ রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার কোনো বিষয় নেই। প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ওই ভল্ট কক্ষে প্রবেশ করে তাদের সম্পদ রেখে আসেন। আবার ভেতরে গিয়ে সেগুলো বের করে আনেন।

দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভল্টের নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিচালক শাহরিয়ার সিদ্দিকী আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক স্বর্ণ যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে।

জনপ্রিয়

পটুয়াখালী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

অপ্রদর্শিত অর্থ-সম্পদ রাখার সন্দেহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লকার তল্লাশি চায় দুদক

প্রকাশিত: ১০:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট কক্ষে রয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। এই কক্ষে রাষ্ট্রের মজুত স্বর্ণ, চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা স্বর্ণ, ছাপানো টাকা ও বাজার থেকে প্রত্যাহার করা পুরোনো টাকা রাখা হয়। এখানে সাবেক ডেপুটি গভর্নরের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর গোপন লকার খুলে দেখতে চাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ নিরাপদ ভল্ট কক্ষে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিশেষ লকার দেখেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সব লকারে কোটি কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ মজুত রয়েছে। দুদক মনে করছে, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ-সম্পদ লকারে রাখা হয়েছে। লকার মালিকদের নামের তালিকাও দেখেছেন এই পরিচালক।

এস কে সুরের অর্থ-সম্পদ উদ্ধারের পর সেগুলো আপাতত বাংলাদেশ ব্যাংকের হেফাজতে রাখা হয়েছে। অন্যদের সম্পদের বিষয়টি জানানো হলে লকারের সম্পদ কীভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, তা অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গোপন লকারগুলোতে সংশ্লিষ্টরা বিপুল পরিমাণ অপ্রদর্শিত আয় মজুত রেখেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়। এ মুহূর্তে লকারে রাখা অর্থ-সম্পদ তুলে নেওয়া বন্ধ না করা হলে তাদের আইনের আওতায় আনা কঠিন হবে। লকারের কোনো অর্থ-সম্পদ যাতে সরিয়ে না নেওয়া হয়, সে জন্য দুদক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবে। এ বিষয়ে দুদক স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবে।

লকারের সম্পদ সংরক্ষণ করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় যেন বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে জানায়, সে জন্য চিঠি দেবে দুদক। ভল্টের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আর যাতে কোনো ব্যক্তির অর্থ-সম্পদ রাখা না হয়, সে জন্যও সুপারিশ করবে।

জানা গেছে, গত রোববার রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলার একেবারে পূর্বপ্রান্তে তিনটি নিরাপত্তা স্তর পার হয়ে সর্বোচ্চ সুরক্ষিত বিশাল আকারের ‘কয়েন ভল্ট’ কক্ষে প্রবেশ করেছিলেন দুদক পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান, উপপরিচালক নাজমুল হুসাইন, উপসহকারী পরিচালক সাবরিনা জামান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দা সালেহা নূর। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে এই প্রথম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বাইরে কেউ ওই ভল্ট কক্ষে প্রবেশ করেছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই ভল্ট কক্ষের ভেতরে আরেকটি ভল্ট কক্ষ রয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রের মালিকানাধীন স্বর্ণ এবং চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা স্বর্ণ মজুত রাখা হয়েছে। এ ভল্ট কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ডাবল লক-সংবলিত লকার রাখা হয়েছে। যার যার লকারে প্যাকেট ও কৌটায় কাপড় মুড়ে সেলাই করে সিলগালা করে অর্থ-সম্পদ রাখা হয়। রেজিস্টারে প্যাকেট/কৌটার সংখ্যা উল্লেখ থাকে। সেগুলোর ভেতরে কী আছে, তা উল্লেখ করা হয় না। প্যাকেট/কৌটার ভেতরে কী রাখা হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংককেও জানানো হয় না।

আদালতের অনুমতি নিয়ে গত রোববার এস কে সুরের লকারে তিনটি সেফ ডিপোজিট নম্বরে মোট ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৯ টাকা মূল্যের বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে দুদক। লকারে ৫৫ হাজার ইউরো, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ ডলার, এফডিআরের ৭০ লাখ টাকা ও ৮৬.২২ ভরি (১০০৫.৪ গ্রাম) স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। গত ১৯ জানুয়ারি দুদক এস কে সুরের ঢাকার ধানমন্ডির বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে। এস কে সুর বর্তমানে কারাগারে আছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আমজাদ হোসেনের মোবাইল নম্বরে বারবার কল করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেনের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মোবাইল নম্বরে কল করলেও সাড়া মেলেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্ট কক্ষের ভেতরে ব্যক্তিগত লকার রাখায় মূল ভল্টের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটছে কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক (বিআরপিডি) মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী সমকালকে বলেন, এটাকে লকার বলে না। এটা একটা আলমারির মতো। সেখানে ছোট কৌটার মধ্যে মূল্যবান অর্থসম্পদ রাখা হয়। এটি মূলত সেফ ডিপোজিটের মতো একটি বিষয়। এদিকে ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দুদককে দেওয়া এক চিঠিতে মূল্যবান সম্পদ রাখার ওই ব্যবস্থাকে ‘লকার (সেফ ডিপোজিট)’ উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মূলত দুটি চাবি দিয়ে খোলার একটি বিশেষ লকার। একটি চাবি থাকে মুদ্রানীতি বিভাগে, আরেকটি থাকে ক্যাশ শাখায়।

তিনি আরও বলেন, গ্রাহক তার সেফ ডিপোজিটগুলো নিজে সিলগালা করে রাখেন। সেখানে কী কী রাখা হয়েছে, সেগুলো বলা হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিষিদ্ধ কোনো পণ্য রাখা হয় না। এদিকে কী কী পণ্য মজুত রাখা হলো, সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চেক করা হয় না। নিষিদ্ধ কোনো সামগ্রী রাখা হয় না– এটা বলেছেন তাঁর বিশ্বাস থেকে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্থানে এ ধরনের বিশ্বাসের কোনো সুযোগ আছে কিনা– এ নিয়ে সন্দেহের জন্ম দেয়।

লকারে রাখা অর্থসম্পদগুলো তাদের আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয় কিনা– এ প্রশ্নের জবাবে বিআরপিডি পরিচালক বলেন, সেফ ডিপোজিটের নামে যেগুলো রাখা হয়, সেগুলো আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করার কথা। যিনি উল্লেখ করেননি, সেটা তার দায়িত্ব। এর ব্যত্যয় ঘটলে তিনি নিজেই শাস্তিযোগ্য অপরাধের মধ্যে পড়েছেন। কোনো ফি ছাড়াই ২০ বছরের জন্য সম্পদ রাখার সুযোগ কেন দেওয়া হলো– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংকিং রেগুলেটরি পলিসি বাজেল কোর প্রিন্সিপালে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুদক বলেছে, যে কোনো নীতিই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির অপ্রদর্শিত সম্পদ লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। গোপন রাখা হলে সেটা ফৌজদারি অপরাধ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ভল্ট কক্ষের আয়তন অনেক বড়– এই কক্ষের এক পাশে সেফ ডিপোজিটের অর্থসম্পদ রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার কোনো বিষয় নেই। প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ওই ভল্ট কক্ষে প্রবেশ করে তাদের সম্পদ রেখে আসেন। আবার ভেতরে গিয়ে সেগুলো বের করে আনেন।

দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভল্টের নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিচালক শাহরিয়ার সিদ্দিকী আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক স্বর্ণ যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে।