ঢাকা , বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
তেহরানে ৪০০ বাংলাদেশিকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধে অনুমতি ছাড়াই ডলার পরিশোধের সুযোগ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে অধ্যাদেশ জারি সমান আচরণ করছে সরকার, দাবি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের জুলাই মাসের মধ্যেই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত হবে: ড. আলী রীয়াজ বাংলাদেশিদের জন্য অনলাইনে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা আবেদন চালু: ঢাকায় হাইকমিশনার নৈতিক স্খলনের অভিযোগে সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ, সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা রিজার্ভে স্বর্ণের গুরুত্ব বাড়াচ্ছে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নেত্রকোনায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের আড়ালে কোটি টাকার প্রতারণা, দুই ভাই আটক এনআইডি সংশোধনের পুরাতন আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ নির্বাচন কমিশনের

চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতালে নেই করোনার বিশেষ প্রস্তুতি

চট্টগ্রামে আবারও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ছয় দিনে মোট ৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। যেকোনো সময় রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অথচ ঘোষিত দুই করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে আইসোলেশন বেড প্রস্তুত করা ছাড়া আর কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তবে হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কোনো বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। টিকিট কাউন্টার, ল্যাব, জরুরি বিভাগ, ডাক্তারের কক্ষ, ঔষধাগার সব জায়গায় রোগীদের ভিড়। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। তা ছাড়া কারও কারও মুখে মাস্কও নেই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৭টির ভেন্টিলেটর নষ্ট। মাত্র একটি সচল থাকলেও মাঝে মধ্যে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। অথচ ২০২০ সালে করোনা মহামারির শুরুতে এখানে প্রথমে ১০টি, পরে আরও ৮টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়। মোট ১৮টি নিবিড় পরিচর্যা বেড স্থাপন করলেও এখন সেগুলোর যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়ে আছে। এগুলো মেরামতের জন্য ঢাকা থেকে লোক আসবে। সেগুলো দ্রুত মেরামতের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৮টিতে রোগী ভর্তি করা হলেও মাত্র একটির ভেন্টিলেটর চালু আছে। বেশির ভাগ মনিটর নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সেবা চালু থাকলে হাইফ্লো নজেল অক্সিজেন ও অন্য যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। হাসপাতালে সরকার অনুমোদিত পদের সংখ্যা সব মিলিয়ে ২৪২টি। বর্তমানে সংযুক্তি, ওএসডি, নিয়মিতসহ ১২৬ জন ডাক্তার আছেন। নার্স আছেন ১৩৪ জন। চিকিৎসক, নার্স, স্টাফসহ মোট জনবল আছে ৩৫৬ জন। তবে সবাই নিয়মিত নয়। ২০২০ সালে করোনা রোগীদের জন্য এখানে ২২ জন চিকিৎসককে আনা হলেও বর্তমানে তারা কেউই নেই। সবাইকে ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে। ২০২৪ সালের কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালে ১৭৭ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৪২ জন। এর মধ্যে ২০ জন চিকিৎসক বিভিন্ন বিভাগে প্রশাসনিক পালন করছেন। সে জন্য রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন না।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. একরাম হোসেন বলেন, ‘মেডিসিন ওয়ার্ডে ২০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য ৫টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি সব আইসিইউ শিগগিরই প্রস্তুত হয়ে যাবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ডাক্তার, নার্সসহ জনবল বাড়ানোর জন্য অধিদপ্তরে বলেছি। করোনা পরীক্ষার জন্য ২ হাজার কিটের জন্য আমরা চাহিদা পাঠিয়েছিলাম। সেগুলো আসা শুরু হয়েছে। শিগগিরই আমরা করোনা পরীক্ষা শুরু করতে পারব।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের ৪০ হাজার কিটের চাহিদা দেওয়া আছে। আপাতত ১ হাজার কিট এসেছে। আমরা যেখানে যত প্রয়োজন কিট দেব। বেশি প্রয়োজন হলেও আনা যাবে। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন, সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করছি।’

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আওতাধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মাতৃসদন ও শিশু হাসপাতাল (মেমন-২) এর পরিস্থিতিও একই। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ডাক্তার আছেন মাত্র ৪ জন ও নার্স আছেন ১৪ জন। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. হুসনে আরা বলেন, ‘আমাদের ১০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তত রাখা হয়েছে। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো প্রস্তুতি নেই। ঈদের ছুটি থাকায় আপাতত রোগীর সংখ্যা কম। চসিক মেয়র বলেছেন করোনা পরীক্ষার জন্য আমাদের কিট কিনে দেওয়া হবে। এরপর আমরা পরীক্ষা শুরু করব। আমাদের হাসপাতালে অক্সিজেন আছে; কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা, আইসিইউ ব্যবস্থা নেই। বাইরে থেকে করোনা পরীক্ষা করে আমাদের এখানে আইসোলেট করা যাবে।’

জনপ্রিয়

তেহরানে ৪০০ বাংলাদেশিকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু

চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতালে নেই করোনার বিশেষ প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ৪ ঘন্টা আগে

চট্টগ্রামে আবারও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ছয় দিনে মোট ৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। যেকোনো সময় রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অথচ ঘোষিত দুই করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে আইসোলেশন বেড প্রস্তুত করা ছাড়া আর কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তবে হাসপাতালসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কোনো বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে না। টিকিট কাউন্টার, ল্যাব, জরুরি বিভাগ, ডাক্তারের কক্ষ, ঔষধাগার সব জায়গায় রোগীদের ভিড়। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। তা ছাড়া কারও কারও মুখে মাস্কও নেই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৭টির ভেন্টিলেটর নষ্ট। মাত্র একটি সচল থাকলেও মাঝে মধ্যে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। অথচ ২০২০ সালে করোনা মহামারির শুরুতে এখানে প্রথমে ১০টি, পরে আরও ৮টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়। মোট ১৮টি নিবিড় পরিচর্যা বেড স্থাপন করলেও এখন সেগুলোর যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়ে আছে। এগুলো মেরামতের জন্য ঢাকা থেকে লোক আসবে। সেগুলো দ্রুত মেরামতের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ১৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৮টিতে রোগী ভর্তি করা হলেও মাত্র একটির ভেন্টিলেটর চালু আছে। বেশির ভাগ মনিটর নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সেবা চালু থাকলে হাইফ্লো নজেল অক্সিজেন ও অন্য যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। হাসপাতালে সরকার অনুমোদিত পদের সংখ্যা সব মিলিয়ে ২৪২টি। বর্তমানে সংযুক্তি, ওএসডি, নিয়মিতসহ ১২৬ জন ডাক্তার আছেন। নার্স আছেন ১৩৪ জন। চিকিৎসক, নার্স, স্টাফসহ মোট জনবল আছে ৩৫৬ জন। তবে সবাই নিয়মিত নয়। ২০২০ সালে করোনা রোগীদের জন্য এখানে ২২ জন চিকিৎসককে আনা হলেও বর্তমানে তারা কেউই নেই। সবাইকে ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে। ২০২৪ সালের কাঠামো অনুযায়ী হাসপাতালে ১৭৭ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৪২ জন। এর মধ্যে ২০ জন চিকিৎসক বিভিন্ন বিভাগে প্রশাসনিক পালন করছেন। সে জন্য রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন না।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. একরাম হোসেন বলেন, ‘মেডিসিন ওয়ার্ডে ২০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য ৫টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। বাকি সব আইসিইউ শিগগিরই প্রস্তুত হয়ে যাবে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ডাক্তার, নার্সসহ জনবল বাড়ানোর জন্য অধিদপ্তরে বলেছি। করোনা পরীক্ষার জন্য ২ হাজার কিটের জন্য আমরা চাহিদা পাঠিয়েছিলাম। সেগুলো আসা শুরু হয়েছে। শিগগিরই আমরা করোনা পরীক্ষা শুরু করতে পারব।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের ৪০ হাজার কিটের চাহিদা দেওয়া আছে। আপাতত ১ হাজার কিট এসেছে। আমরা যেখানে যত প্রয়োজন কিট দেব। বেশি প্রয়োজন হলেও আনা যাবে। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন, সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করছি।’

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) আওতাধীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মাতৃসদন ও শিশু হাসপাতাল (মেমন-২) এর পরিস্থিতিও একই। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ডাক্তার আছেন মাত্র ৪ জন ও নার্স আছেন ১৪ জন। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. হুসনে আরা বলেন, ‘আমাদের ১০টি আইসোলেশন বেড প্রস্তত রাখা হয়েছে। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো প্রস্তুতি নেই। ঈদের ছুটি থাকায় আপাতত রোগীর সংখ্যা কম। চসিক মেয়র বলেছেন করোনা পরীক্ষার জন্য আমাদের কিট কিনে দেওয়া হবে। এরপর আমরা পরীক্ষা শুরু করব। আমাদের হাসপাতালে অক্সিজেন আছে; কিন্তু সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা, আইসিইউ ব্যবস্থা নেই। বাইরে থেকে করোনা পরীক্ষা করে আমাদের এখানে আইসোলেট করা যাবে।’