রাজশাহীর প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী সম্প্রতি ভারতের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। দুদকের দুর্নীতি মামলার আসামি ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অবস্থায় তার এই বিদেশ গমন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
জানা গেছে, ফারুক বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। রাজশাহীর আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে জানান, সম্প্রতি ফারুক মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ভারতের কোথাও চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান। যদিও দেশটির নাম তিনি প্রকাশ করেননি।
অভিযোগ রয়েছে, ফারুক চৌধুরী দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, বালুমহাল দখল, মাদক ব্যবসায়ীদের থেকে মাসোহারা আদায়সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। রাজশাহী ও ঢাকায় তার রয়েছে বহুতল ভবন, দামি প্লট, বিপণিবিতান, বাগান, ফ্ল্যাট, শত শত বিঘা জমি ও পুকুর।
তার সম্পদের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপি নেতা রশিদুজ্জামান মিল্লাতের ছেলে এবং ফারুকের জামাতা শাহাদাত বিন জামান শোভন। শোভন রাজশাহীর ‘থিম ওমর প্লাজা’সহ তার অন্যান্য সম্পত্তি থেকে মাসিক কয়েক কোটি টাকার ভাড়া সংগ্রহ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে শোভনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে ফারুকের বড় মেয়ে নাজিফা দাবি করেছেন, শোভন সম্পদ দেখভাল করেন না; পরিবার থেকেই সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ফারুক ও তার স্ত্রী নিগার চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ব্যাংক লেনদেনে জালিয়াতির অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও।
এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদনে তাকে হেরোইন ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গোদাগাড়ীর একাধিক চিহ্নিত মাদক কারবারীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং মাসোহারা নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এক যুবলীগ নেতা জানান, ফারুক মাদক ব্যবসা থেকে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা আদায় করেছেন। এসব টাকার বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাচার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মালয়েশিয়ায় তার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
ফারুক নিজেও নিশ্চিত করেছেন তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন, তবে কোন দেশে আছেন তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তার দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের কল রিসিভ করলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেননি।