বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীকে চীনে পাচারের সময় বিমানবন্দর থেকে তাকে উদ্ধার করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই চীনা নাগরিক ও এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—চীনা নাগরিক হু জুন জুন (৩০), ঝাং লেইজি (৫৪) এবং বাংলাদেশি মো. নয়ন আলী (৩০)। সোমবার (২৬ মে) রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানায় এপিবিএন।
বুধবার (২৯ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এপিবিএন জানায়, সোমবার রাতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীনে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা এক তরুণী (১৯) নিজেই মানব পাচারের অভিযোগ করে পুলিশের কাছে সাহায্য চান। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার ফাউজুল কবীর মঈনের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়।
তরুণীর অভিযোগ, চীনা নাগরিক হু জুন জুন ও ঝাং লেইজি তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচারের পরিকল্পনা করেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে নয়ন আলীকে গ্রেফতার করা হয়। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্য পাচারকারীরা পালিয়ে যান।
এপিবিএনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেফতারকৃত চীনা নাগরিকেরা এক বছর আগে বাংলাদেশে এসে স্থানীয় দালালদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর নয়ন আলীর সহযোগিতায় তরুণীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করা হয়। এমনকি চলতি বছরের মার্চ মাসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে তরুণীর সঙ্গে হু জুন জুনের বিয়েও সম্পন্ন করা হয়। পুরো বিয়ের নাটকে সহযোগিতা করেন ঝাং লেইজি ও নয়ন আলী।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, তরুণীকে না জানিয়ে ঝাং লেইজি তার চীনের বিমান টিকিট কিনে দেন এবং জোর করে বিমানবন্দরে নিয়ে যান। তবে বিমান ছাড়ার আগেই তরুণী সাহস করে বিষয়টি পুলিশকে জানালে পাচারচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
তরুণীর মা (৪৩) বিমানবন্দর থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এপিবিএনের পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, “শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানব পাচারের ঘটনায় এটিই দ্বিতীয়বার চীনা নাগরিক গ্রেফতারের ঘটনা। চক্রটি গ্রামের সহজ-সরল, দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের টার্গেট করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করার চেষ্টা করে।”
তিনি আরও জানান, এই ধরনের পাচারচেষ্টার পেছনে দেশি-বিদেশি দালাল ও চক্র সক্রিয় রয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পাচার চক্রের অন্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।