ঢাকা , সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কি আদৌ সম্ভব?

 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র পাওয়া না পাওয়া বিষয়ে বক্তব্যের জেরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দুদিন আগে এই জাতীয় বক্তব্য প্রকাশের পর এই আন্দোলনের আহ্বান জানান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, হাসনাত আব্দুল্লাহ।

 

 

কিন্তু এখানে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে এবং অন্য কোনো কারণে যদি এই পদ শূন্য হয়, তাহলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হবেন?—এ নিয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে।

 

 

এই ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব বিষয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

 

 

সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ড. শাহদীন মালিক, গণমাধ্যমকে বলেন, “সংবিধানের বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে পারে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর সংসদ বাতিল করে দেওয়ায় সেই সুযোগ আর নেই। আবার রাষ্ট্রপতি চাইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করতে পারেন।”

 

তিনি আরো বলেন, “কিন্তু স্পিকার পদত্যাগ করেছেন এবং ডেপুটি স্পিকার কারাগারে থাকায় সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি উঠলেও সেটি সংবিধান অনুযায়ী হওয়া সম্ভব নয়।”

 

শাহদীন মালিক বলেন, “রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে সংসদ। কিন্তু সেটি বাতিল করা হয়েছে। আবার তার পদত্যাগের সুযোগও নেই। সে কারণে সংবিধান ও আইনগতভাবে তাকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

 

স্বৈরাচারী সরকারের বিদায়ের পর, সবকিছু তো সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই নিয়ম বা সংবিধানের প্রশ্ন অবান্তর; বরং জন আকাঙ্ক্ষার আলোকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা সরকার চাইলে করতেই পারে। ”

 

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বলেন, “রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন বা অন্য কোনো কারণে এই পদ শূন্য হয়ে যায়, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, এখন যে সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে, সেটি জন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে। ফলে এই সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা নিয়োগের বিষয়ে জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলিত হবে।

 

তিনি বলেন, “প্রশ্ন উঠতে পারে, রাষ্ট্রপতি কীভাবে পদত্যাগ করবেন আবার পদ শূন্য হলে নিয়োগ পাওয়া নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাবেন কে? এখানেই জন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবকিছু হবে।”

 

উল্লেখ্য, এসব কিছুর সূত্রপাত ঘটে মানবজমিন পত্রিকার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির সাথে হওয়া এক সাক্ষাৎকার থেকে। উক্ত সাক্ষাৎকারে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছিলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে নেই।”

 

রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি বহুবার পদত্যাগপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। হয়ত তার সময় হয়নি।”

 

সাক্ষাৎকারটি গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়েছে। এরপর থেকেই রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। তারা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।

জনপ্রিয়

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কি আদৌ সম্ভব?

প্রকাশিত: ০২:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র পাওয়া না পাওয়া বিষয়ে বক্তব্যের জেরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দুদিন আগে এই জাতীয় বক্তব্য প্রকাশের পর এই আন্দোলনের আহ্বান জানান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, হাসনাত আব্দুল্লাহ।

 

 

কিন্তু এখানে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে এবং অন্য কোনো কারণে যদি এই পদ শূন্য হয়, তাহলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হবেন?—এ নিয়ে আলোচনার অবকাশ রয়েছে।

 

 

এই ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব বিষয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

 

 

সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ড. শাহদীন মালিক, গণমাধ্যমকে বলেন, “সংবিধানের বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে পারে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর সংসদ বাতিল করে দেওয়ায় সেই সুযোগ আর নেই। আবার রাষ্ট্রপতি চাইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করতে পারেন।”

 

তিনি আরো বলেন, “কিন্তু স্পিকার পদত্যাগ করেছেন এবং ডেপুটি স্পিকার কারাগারে থাকায় সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি উঠলেও সেটি সংবিধান অনুযায়ী হওয়া সম্ভব নয়।”

 

শাহদীন মালিক বলেন, “রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে সংসদ। কিন্তু সেটি বাতিল করা হয়েছে। আবার তার পদত্যাগের সুযোগও নেই। সে কারণে সংবিধান ও আইনগতভাবে তাকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

 

স্বৈরাচারী সরকারের বিদায়ের পর, সবকিছু তো সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই নিয়ম বা সংবিধানের প্রশ্ন অবান্তর; বরং জন আকাঙ্ক্ষার আলোকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা সরকার চাইলে করতেই পারে। ”

 

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বলেন, “রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন বা অন্য কোনো কারণে এই পদ শূন্য হয়ে যায়, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, এখন যে সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে, সেটি জন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে। ফলে এই সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা নিয়োগের বিষয়ে জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলিত হবে।

 

তিনি বলেন, “প্রশ্ন উঠতে পারে, রাষ্ট্রপতি কীভাবে পদত্যাগ করবেন আবার পদ শূন্য হলে নিয়োগ পাওয়া নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাবেন কে? এখানেই জন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবকিছু হবে।”

 

উল্লেখ্য, এসব কিছুর সূত্রপাত ঘটে মানবজমিন পত্রিকার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির সাথে হওয়া এক সাক্ষাৎকার থেকে। উক্ত সাক্ষাৎকারে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছিলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে নেই।”

 

রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি বহুবার পদত্যাগপত্র সংগ্রহের চেষ্টা করেছি, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। হয়ত তার সময় হয়নি।”

 

সাক্ষাৎকারটি গত শনিবার (১৯ অক্টোবর) পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন সংস্করণ ‘জনতার চোখ’-এ প্রকাশিত হয়েছে। এরপর থেকেই রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। তারা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।