সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে ফাঁদ পেতে সমাজের প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেইল করছে একটি চক্র। শুধু দেশেই নয়, এই চক্রের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে রয়েছে দেশের বাইরেও। যৌন সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করে কোটি টাকার চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে তারা। বিদেশি কূটনীতিকরাও বাদ যাচ্ছেন না এ চক্রের টার্গেট থেকে।
জানা গেছে, অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্রের সদস্যরা প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এরপর প্রেমের সম্পর্ক, এবং একপর্যায়ে ভিডিও কলে নগ্ন আলাপচারিতা—যা গোপনে ধারণ করে ভুক্তভোগীকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। অনেকে রুম ডেটের নামে ডেকে নিয়ে সরাসরি জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে।
ফাঁদে আটকে সর্বস্ব হারাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা
ঢাকার দোহারের সৌদি প্রবাসী সোহেল মৃধা জানিয়েছেন, “ইমোতে আঁখি আক্তার নামের এক নারীর সঙ্গে পরিচয়ের পর ভিডিও কলে খোলামেলা আলাপ করি। পরে সে ভিডিও ধারণ করে চার লাখ টাকা আদায় করেছে।”
বরিশালের এক ভুক্তভোগী জানান, ‘লাভারস ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি সাইট থেকে নারীর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর নিয়ে শুরু হয় কথোপকথন। পরবর্তীতে যৌথ ব্যবসার নামে এনআইডি ও টাকা হাতিয়ে নিয়ে তার নগ্ন ছবি তৈরি করে চক্রটি।
সামাজিক মর্যাদার ভয়ে অভিযোগ আনতে চান না অধিকাংশ
সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, মাসে গড়ে ৩০টি গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে বাস্তবে ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। বেশিরভাগই সামাজিক ও পারিবারিক মর্যাদা রক্ষার আশঙ্কায় আইনি পদক্ষেপ নিতে চান না।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, চক্রটি প্রধানত ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের টার্গেট করে। তারা ফেসবুক, ইমো, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক ও ইউটিউবের শর্ট ভিডিও ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে।
অপরাধীরা পার পাচ্ছে প্রযুক্তির ফাঁক গলে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অধিকাংশ প্রতারক ভুয়া সিম ও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা আদায় করে। পরে হুন্ডি বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অর্থ বিদেশে পাচার করে দেয়।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, “শুধু আইন প্রয়োগ করেই হানি ট্র্যাপ ঠেকানো সম্ভব নয়। প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের সচেতন হওয়াটাই সবচেয়ে জরুরি।”
চক্র ভাঙতে চাই সচেতনতা ও কড়া নজরদারি
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হানি ট্র্যাপ একটি ক্রমবর্ধমান সাইবার অপরাধ। এর শিকার হচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, এমনকি আইনজীবীরাও। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।