বহুজাতিক ব্যবসা পরিচালনাকারী এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে অবৈধ বিনিয়োগ, সম্পদ জবরদখল ও বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগে ব্যাপক তদন্ত চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে এ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত এস আলম গ্রুপের নামে দেশের ভেতরে ৬ হাজার ২৩১ বিঘা জমির খোঁজ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে চট্টগ্রামেই রয়েছে প্রায় ৫ হাজার বিঘা। এছাড়া চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিলাসবহুল ১৭টি ফ্ল্যাটের সন্ধান মিলেছে। সব মিলিয়ে এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা ঋণের নামে সংগ্রহ করে এস আলম গ্রুপ সেই অর্থের একটি অংশ বিদেশে পাচার করে, কিছু অংশ শিল্পে বিনিয়োগ এবং অন্য অংশ দিয়ে জমি কেনা ও দখলের মাধ্যমে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। বাণিজ্যিক ঋণ নিয়ে জমি কেনা নিষিদ্ধ হলেও তারা সেই আইন ভঙ্গ করেছে।
বিএফআইইউ’র তদন্তে আরও জানা গেছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডা, সাইপ্রাস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে এস আলম গ্রুপের বিনিয়োগ ও সম্পদের অস্তিত্ব রয়েছে। বিভিন্ন দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় খুঁজে পাওয়া গেছে। এসব তথ্য বর্তমানে দুদক ও সিআইডি বিশদভাবে পর্যালোচনা করছে।
জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে এস আলম গ্রুপ একাধিক ব্যাংক দখলে নিয়ে আমানতকারীদের অর্থ লুট করে। তদন্তকারীদের দাবি, এই অর্থ লুটপাটের সুবিধাভোগীদের মধ্যে সরকারি উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
যৌথ তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এস আলম গ্রুপের নামে কেনা কোম্পানির প্রায় ২৫ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশে সংযুক্ত করা হয়েছে ১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা মূল্যমানের ১৭টি ফ্ল্যাট এবং ১ হাজার ২৩১ বিঘা জমি।
এছাড়াও, ১৬ হাজার ৮০৭ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার, ৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকাসহ ২১২টি ব্যাংক হিসাব, ৬৩৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা ১৯৮ কোটি টাকা এবং ১ লাখ ৫৮ হাজার ডলার, ২৪টি বিও অ্যাকাউন্টে থাকা ৪২৬ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। মোট ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার অতিরিক্ত শেয়ার সংক্রান্ত তথ্যও দুদকের হাতে এসেছে।
সিআইডি ও দুদক যৌথভাবে আরও দুটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক জমির মালিকানা দলিল ও অন্যান্য নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে, যা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্পূর্ণ তদন্ত শেষে এস আলম গ্রুপ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।