ঢাকা , শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
বিডিআর হত্যাকাণ্ড: সহায়ক তথ্য আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫০৬ জন অভিবাসী আটক ইভ্যালির অর্থ আত্মসাৎ: গ্রাহকদের মানববন্ধন ও রাসেলের গ্রেফতারের দাবি কক্সবাজার-মহেশখালী রুটে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো সি-ট্রাক সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় শাহে আলম মুরাদ ও আনিসুর রহমান ৪ দিনের রিমান্ডে বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির চট্টগ্রামের চকবাজারে নালায় পড়ে ৬ মাসের শিশু নিখোঁজ ১৮ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা: সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে রাখাইনদের প্রাচীন ‘জলকেলি’ উৎসব: মিলন, আত্মশুদ্ধি আর মানবিকতার বার্তা জুলাই আন্দোলনে শহীদ ইমনের মরদেহ উত্তোলন: আদালতের নির্দেশে নতুন তদন্তের সূচনা

ইতিকাফ: মুসলিমগণের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত

  • রেজোয়ানা আরেফীন
  • প্রকাশিত: ০৭:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
  • ১৯৯৫৮ বার পড়া হয়েছে

ইতিকাফ শব্দটি আরবি শব্দ “আকফ” থেকে এসেছে, যার অর্থ অবস্থান করা বা আবদ্ধ থাকা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, ইতিকাফ হলো মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়া। এটি রমজান মাসের শেষ দশকে বিশেষভাবে পালন করা হয়, কারণ এই সময়ে লাইলাতুল কদর (মহিমান্বিত রাত) পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

রমজান মাসে ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি এমন একটি আমল যার মাধ্যমে বান্দা দুনিয়ার সব মোহ-মায়া ত্যাগ করে, একান্তভাবে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়। ইতিকাফের অর্থ হলো নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা। পরিভাষায়, ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজেকে মসজিদ বা নির্ধারিত স্থানে আবদ্ধ রাখাকে ইতিকাফ বলে। যিনি ইতিকাফ করেন, তাকে ‘মুতাকিফ’ বলা হয়।

রমজান এবং ইতিকাফ একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই রমজানের একটি ফরজ—এক মাস রোজা রাখা; দুটি ওয়াজিব—সদকাতুল ফিতর দেওয়া ও ঈদের নামাজ আদায় করা; পাঁচটি সুন্নত—সেহরি খাওয়া, ইফতার করা, তারাবী পড়া, কোরআন করিম তিলাওয়াত করা ও ইতিকাফ করা।

 

মসজিদের বিশেষ আমল হলো, ইতিকাফ। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আমি ইব্রাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু–সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৫)

 

২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে, সবাই দায়মুক্ত হবেন। কিন্তু কেউ ইতিকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবেন। তবে যিনি বা যাঁরা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তাঁরাই সওয়াবের অধিকারী হবেন।

 

হজরত উম্মে ছালামাহ (রা:) বর্ণনা করেছেন: “রাসুলুল্লাহ (সা:) তিনটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি—তাহাজ্জুদ নামাজ, প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’-এর রোজা পালন ও রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা।” (জামিউস সগির ও সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)

 

নবীজি (সা:) জীবনে কখনো রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ ছাড়েননি। আয়েশা (রা:) বর্ণনা করেন: ‘নবী করিম (সা:) আজীবন রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের পরেও তাঁর স্ত্রীরা ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি নবী মুহাম্মদ (সা:)-এর একটি সুন্নত, যা তিনি নিয়মিত পালন করতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে: নবী (সা:) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং তাঁর পরেও সাহাবায়ে কেরামও এই আমল চালু রেখেছিলেন।

ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে আমরা সহজেই জানতে পারি, মহানবী সা: এর ইতিকাফের প্রতি গুরুত্বারোপের উপর। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “আমি কদরের রাতের সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। এরপর ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে।”এরপর মানুষ রাসুল (সা:) এর সঙ্গে ইতিকাফে শরিক হয়। (মুসলিম, হাদিস: ১,৯৯৪)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক নফল ইবাদত করতেন আবার কখনো ছেড়ে দিতেন; কিন্তু মদিনায় হিজরতের পর জীবদ্দশায় রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ কখনো ছাড়েননি। (সহিহ বুখারি : ২০২৬)

 

নবীজি (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালন করার সওয়াব দেওয়া হবে।’ (শুয়াবুল ঈমান)

 

ইতিকাফের মাধ্যমে মুসলমানগণ লাইলাতুল কদর পাবার সুযোগ পায়, যা হাজার মাসের ইবাদত থেকে উত্তম। এছাড়াও ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের সুযোগ তৈরি হয়। এটি আত্মিক প্রশান্তি ও শান্তি অর্জনের একটি মাধ্যম।

ইতিকাফ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ দেয়। ইতিকাফ আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়ার একটি অনন্য অনুশীলন। ইতিকাফের মাধ্যমে মুসলমানগণ নিজেদের অন্তর পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা।

জনপ্রিয়

বিডিআর হত্যাকাণ্ড: সহায়ক তথ্য আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি

ইতিকাফ: মুসলিমগণের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত

প্রকাশিত: ০৭:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

ইতিকাফ শব্দটি আরবি শব্দ “আকফ” থেকে এসেছে, যার অর্থ অবস্থান করা বা আবদ্ধ থাকা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, ইতিকাফ হলো মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়া। এটি রমজান মাসের শেষ দশকে বিশেষভাবে পালন করা হয়, কারণ এই সময়ে লাইলাতুল কদর (মহিমান্বিত রাত) পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।

রমজান মাসে ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি এমন একটি আমল যার মাধ্যমে বান্দা দুনিয়ার সব মোহ-মায়া ত্যাগ করে, একান্তভাবে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়। ইতিকাফের অর্থ হলো নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা। পরিভাষায়, ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজেকে মসজিদ বা নির্ধারিত স্থানে আবদ্ধ রাখাকে ইতিকাফ বলে। যিনি ইতিকাফ করেন, তাকে ‘মুতাকিফ’ বলা হয়।

রমজান এবং ইতিকাফ একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই রমজানের একটি ফরজ—এক মাস রোজা রাখা; দুটি ওয়াজিব—সদকাতুল ফিতর দেওয়া ও ঈদের নামাজ আদায় করা; পাঁচটি সুন্নত—সেহরি খাওয়া, ইফতার করা, তারাবী পড়া, কোরআন করিম তিলাওয়াত করা ও ইতিকাফ করা।

 

মসজিদের বিশেষ আমল হলো, ইতিকাফ। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আমি ইব্রাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু–সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৫)

 

২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে, সবাই দায়মুক্ত হবেন। কিন্তু কেউ ইতিকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবেন। তবে যিনি বা যাঁরা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তাঁরাই সওয়াবের অধিকারী হবেন।

 

হজরত উম্মে ছালামাহ (রা:) বর্ণনা করেছেন: “রাসুলুল্লাহ (সা:) তিনটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি—তাহাজ্জুদ নামাজ, প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’-এর রোজা পালন ও রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা।” (জামিউস সগির ও সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)

 

নবীজি (সা:) জীবনে কখনো রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ ছাড়েননি। আয়েশা (রা:) বর্ণনা করেন: ‘নবী করিম (সা:) আজীবন রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের পরেও তাঁর স্ত্রীরা ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি নবী মুহাম্মদ (সা:)-এর একটি সুন্নত, যা তিনি নিয়মিত পালন করতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে: নবী (সা:) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং তাঁর পরেও সাহাবায়ে কেরামও এই আমল চালু রেখেছিলেন।

ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে আমরা সহজেই জানতে পারি, মহানবী সা: এর ইতিকাফের প্রতি গুরুত্বারোপের উপর। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন: “আমি কদরের রাতের সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। এরপর ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে।”এরপর মানুষ রাসুল (সা:) এর সঙ্গে ইতিকাফে শরিক হয়। (মুসলিম, হাদিস: ১,৯৯৪)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক নফল ইবাদত করতেন আবার কখনো ছেড়ে দিতেন; কিন্তু মদিনায় হিজরতের পর জীবদ্দশায় রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ কখনো ছাড়েননি। (সহিহ বুখারি : ২০২৬)

 

নবীজি (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালন করার সওয়াব দেওয়া হবে।’ (শুয়াবুল ঈমান)

 

ইতিকাফের মাধ্যমে মুসলমানগণ লাইলাতুল কদর পাবার সুযোগ পায়, যা হাজার মাসের ইবাদত থেকে উত্তম। এছাড়াও ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের সুযোগ তৈরি হয়। এটি আত্মিক প্রশান্তি ও শান্তি অর্জনের একটি মাধ্যম।

ইতিকাফ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ দেয়। ইতিকাফ আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়ার একটি অনন্য অনুশীলন। ইতিকাফের মাধ্যমে মুসলমানগণ নিজেদের অন্তর পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা।