ভারতকে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে পাকিস্তান। এজন্য ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে পরমাণু অস্ত্রসহ সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘পিটিআই’ এই খবর জানিয়েছে।
সম্প্রতি ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা ও এর প্রেক্ষিতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার পর পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। যুদ্ধবিরতি চললেও একে অপরের বিরুদ্ধে হুমকি-পাল্টা হুমকি অব্যাহত রেখেছে উভয় পক্ষ।
এমন বাস্তবতায় গতকাল রোববার মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (ডিআইএ) ‘অ্যানুয়াল থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরমাণু শক্তিধর ভারতকে পাকিস্তান তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে এবং এই হুমকি মোকাবিলায় দেশটি ‘তার সামরিক শক্তি আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘পাকিস্তান তার পরমাণু অস্ত্রাগার আধুনিকীকরণ করছে। সেই সঙ্গে দেশটি তার পরমাণু উপকরণ ও পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখছে। পাশাপাশি পাকিস্তান প্রায় নিশ্চিতভাবেই বিদেশি সরবরাহকারী ও মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে ‘ওয়েপন অব মাস ডেস্ট্রাকশন বা ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করছে।’
প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, আগামী বছরগুলোতে আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে। পাশাপাশি পরমাণু আধুনিকীকরণ তাদের শীর্ষ অগ্রাধিকারের বিষয় থাকবে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রতিবেদনকে ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’ও বলা হয়ে থাকে। এতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কও তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান মূলত চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক অনুদান নিয়ে থাকে এবং দুই দেশের বাহিনী প্রতি বছর একাধিক সম্মিলিত সামরিক মহড়া পরিচালনা করে। তবে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট চীনা শ্রমিকদের লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলা দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কে কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
চীনের ব্যাপারে সতর্ক করে মার্কিন এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পূর্ব এশিয়ায় প্রধান শক্তিধর দেশ হওয়ার কৌশলগত লক্ষ্য বজায় রেখেছে চীন। তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ড চীনের সঙ্গে একীভূত করা, চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্থিতিস্থাপকতাকে এগিয়ে নেয়া এবং মধ্য শতাব্দীর মধ্যে প্রযুক্তিগতভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশটি বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জও জানাচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেয়ার জন্য চীন কোনো কোনো অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতির কার্যক্রম শুরু করেছে এবং কোন দেশগুলোতে কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করছে, সেটাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের চীন অংশের ‘গ্লোবাল মিলিটারি অপারেশনস’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘চীনে থেকেই টানা লম্বা সময় কার্যক্রম চালানোর জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত করছে দেশটি।
এছাড়া চীন শক্তিশালী বিদেশি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘দেশটি সেনাদের আরো বেশি দূরত্বে মোতায়েন বজায় রাখার জন্য অবকাঠামো তৈরি করছে। এই প্রচেষ্টা মার্কিন বৈশ্বিক কার্যক্রম কিংবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চীন সম্ভবত মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কিউবা, কেনিয়া, গিনি, সেশেলস, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, নামিবিয়া, মোজাম্বিক, গ্যাবন, বাংলাদেশ, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও তাজিকিস্তানে পিএলএ-এর সামরিক উপস্থিতির কথাও বিবেচনা করছে।’