ঢাকা , সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আগের সতর্কবার্তা স্মরণ করালেন খামেনি ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা যুদ্ধের শুরু: হুতির হুঁশিয়ারি হাজারীবাগে ট্যানারির গুদামে আগুন দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মতিন সরকার রাজধানী থেকে গ্রেফতার অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে গেল উখিয়ার বিশেষায়িত হাসপাতাল নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে রোববার ড. ইউনূসের ওপর ফিনল্যান্ড সরকারের নিষেধাজ্ঞার দাবি ভুয়া: রিউমার স্ক্যানার সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মৎস্য উন্নয়নে ৫৬ জেলায় মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার

ইউজিসির নীতিমালা তৈরির আগেই পিএইচডি চালু ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে

লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ডক্টর অব ফিলোসফি (পিএইচডি) প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি’। এ উপলক্ষে সোমবার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়; যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রের তথ্য, এখনো পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর জন্য কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করেনি ইউজিসি। ফলে প্রশ্ন উঠছে— ইউজিসি নীতিমালা প্রণয়ন করার আগেই কীভাবে অনুমোদন দেওয়া হলো? সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি ভবিষ্যতে একটি খারাপ নজির স্থাপন করতে পারে।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে এই প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে তদারক সংস্থা তথা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং এর কোনো নীতিমালা তাতে স্থান পায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বলা যায়— ইউজিসিকে অনেকটা পাস কাটিয়েই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এই প্রোগ্রামটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‌‌‌’অনুমোদনের জন্য ইউজিসি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। তারা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়েছে।’

তবে ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম জানান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে পিএইচডি অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি ১৬ জুন সকালেই জেনেছেন তিনি। যদিও কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ঈদুল আযহার বন্ধের দুই-তিন আগে ১ জুন তাদেরকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ড. ফখরুল বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অনুমোদনের নীতিমালা এখনও তৈরি হয়নি। এ বিষয়ে ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির জন্য একটি সাব-কমিটি কাজ করছে।’

জানতে চাইলে ওই সাব-কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে। গত সপ্তাহেও একটি সভা হয়েছে। আমরা কমিটির সুপারিশগুলো ইউজিসিকে দেব। এরপর তারা সেটি নীতিমালা আকারে প্রকাশ করবে। তিনি বলেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির অধীনে। ব্র্যাকও এর আওতাধীন। সুতরাং এই নিয়ম-নীতির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ কীসের ভিত্তিতে এই অনুমোদন হলো— বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করার কথা বলেন তিনি।

সূত্রের তথ্য, ২০২৪ সালের জুন মাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর করতে কাজ শুরু করে ইউজিসি। সে সময় এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করতে কমিটি গঠন করা হলেও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এ কমিটি ভেঙ্গে যায়। পরে আবার নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করে ইউজিসি সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে এ কমিটির নীতিমালা প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এতে ইউজিসি সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও দায়িত্বশীলরা রয়েছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমোদন পায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা-১ এর সহকারী সচিব মো. সুলতান আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অনুমোদন চিঠিতে দেখা যায়, গত ৭ জানুয়ারির ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিঠির বিপরীতে এ অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়।

চিঠিতে বলা হয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (সোয়াস), ইউনিভার্সিটি লন্ডনের সাথে একটি যৌথ পিএইচডি প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠার অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হলো। এছাড়া চিঠিতে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পিএইচডি চালুর লক্ষ্যে প্রণীতব্য নীতিমালার সাথে ভবিষ্যতে এতদসংক্রান্ত কোনো বিষয় সংঘর্ষ হলে তা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেনে চলতে বাধ্য থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়-১) মোছা. রোখছানা বেগম বলেন, ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি অনুমোদনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি যখন ছুটিতে ছিলাম, তখন এ সংক্রান্ত অনুমোদন হয়েছে। কীভাবে হয়েছে সেটি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।’

তবে একই বিভাগের সহকারী সচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- ১) মো. সুলতান আহমেদ বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর জন্য আবেদন করেছিল। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমাদের উপদেষ্টা এ সংক্রান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সিনিয়র সচিব এবং উপদেষ্টা ভালো বলতে পারবেন। আমাদের পর্যায় থেকে কোনো কিছুর অনুমোদন হয় না।

তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি চালুর সুযোগ থাকলেও ১৯৯২ সাল থেকে চালু হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তা নেই। এক সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তবে বর্তমানে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান তুলনামূলক ভালো। এই বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছরের শেষে দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি চালু করতে ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি করে ইউজিসি। বর্তমানে ওই কমিটির নীতিমালা তৈরির বিষয়ে সুপারিশের কাজ শেষের দিকে।

এদিকে নীতিমালা তৈরির আগেই এমন সুপারিশ ও অনুমোদনকে ভিন্ন চোখে দেখছেন ইউজিসি সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। তারা বলছেন, নীতিমালা ছাড়াই অনুমোদন দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা বুঝতে পারে না যে তারা কীভাবে কাজ করবে, কোন নিয়ম মেনে চলবে বা দায়িত্ব-কর্তব্য কী? এছাড়া দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের ঝুঁকি, আইনি জটিলতা, অসামঞ্জস্য ও দ্বৈত নীতির উদ্ভব, দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা সৃষ্টিসহ জবাবদিহিতা কমে যাওয়া শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তারা। আগামীতে পিএইচডি চালুর বিষয়ে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও এমন সুযোগ নিতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। যদিও বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কেউই খোলামেলা কথা বলতে রাজি হননি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন নীতিমালা তৈরির আগেই পিএইচডির সুপারিশ এবং অনুমোদন বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি চেয়্যারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

একই পরামর্শ দেন ইউজিসির সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম। তার ভাষ্য, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। তবে অনুমোদনের বিষয়ে ইউজিসির সুপারিশ লাগে। সুপারিশ ব্যতীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুসারে কোনো প্রোগ্রাম চালুর সুযোগ নেই। আইনে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের কথা বলা হয়েছে; পিএইচডির কথা উল্লেখ নেই।

ড. ফখরুল বলেন, পিএইচডি অনুমোদন দেওয়ার জন্য আমাদের নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে; সেখানে কাদেেকে এই অনুমোদন দেওয়া হবে, কী দেখে দেওয়া হবে, যোগ্যতা, ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ এবং পাবলিকেশনসহ সকল বিষয় এই নীতিমালার আওতাভুক্ত। এরপরই পিএইচডি অনুমোদনের বিষয়টি আসে। পরে বিষয়টি তিনি ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘আমরা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তারা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়েছে। নীতিমালার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি সোয়াস ইউনিভার্সিটির নীতিমালা। এটি আমাদের কোনো নীতিমালা নয়। সোয়াস ইউনিভার্সিটির নীতিমালা কী হবে— এটা আমরা বলে দিতে পারি না। এটা হচ্ছে একটা রিসার্চ প্রোগ্রাম, পিএইচডি প্রোগ্রাম— যেটি ব্র্যাক তাদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে করবে।’

এ সময় ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যদি নীতিমালা নিয়ে যদি ঘুরতে থাকি; তাহলে আগামী ১০-১৫ বছরেও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হবে না।’ সোয়াস ইউনিভার্সিটির জন্য কোনো নীতিমালা তৈরির যোগ্যতাও ইউজিসি রাখে না বলেও জানান গুণী এই অধ্যাপক।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় যেকোনো ধরনের কার্যক্রম বা প্রোগ্রাম চালু করতে চাইলে অবশ্যই ইউজিসির সুপারিশ প্রয়োজন। শুধু দেশিয় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা এর প্রোগ্রাম নয়, দেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতেও ইউজিসির বিধিমালা মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তরা।

জনপ্রিয়

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আগের সতর্কবার্তা স্মরণ করালেন খামেনি

ইউজিসির নীতিমালা তৈরির আগেই পিএইচডি চালু ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে

প্রকাশিত: ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ডক্টর অব ফিলোসফি (পিএইচডি) প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি’। এ উপলক্ষে সোমবার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়; যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রের তথ্য, এখনো পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর জন্য কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করেনি ইউজিসি। ফলে প্রশ্ন উঠছে— ইউজিসি নীতিমালা প্রণয়ন করার আগেই কীভাবে অনুমোদন দেওয়া হলো? সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি ভবিষ্যতে একটি খারাপ নজির স্থাপন করতে পারে।

জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে এই প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে তদারক সংস্থা তথা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এবং এর কোনো নীতিমালা তাতে স্থান পায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বলা যায়— ইউজিসিকে অনেকটা পাস কাটিয়েই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এই প্রোগ্রামটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‌‌‌’অনুমোদনের জন্য ইউজিসি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। তারা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়েছে।’

তবে ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম জানান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে পিএইচডি অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি ১৬ জুন সকালেই জেনেছেন তিনি। যদিও কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ঈদুল আযহার বন্ধের দুই-তিন আগে ১ জুন তাদেরকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ড. ফখরুল বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অনুমোদনের নীতিমালা এখনও তৈরি হয়নি। এ বিষয়ে ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির জন্য একটি সাব-কমিটি কাজ করছে।’

জানতে চাইলে ওই সাব-কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে। গত সপ্তাহেও একটি সভা হয়েছে। আমরা কমিটির সুপারিশগুলো ইউজিসিকে দেব। এরপর তারা সেটি নীতিমালা আকারে প্রকাশ করবে। তিনি বলেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির অধীনে। ব্র্যাকও এর আওতাধীন। সুতরাং এই নিয়ম-নীতির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ কীসের ভিত্তিতে এই অনুমোদন হলো— বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করার কথা বলেন তিনি।

সূত্রের তথ্য, ২০২৪ সালের জুন মাসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর করতে কাজ শুরু করে ইউজিসি। সে সময় এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করতে কমিটি গঠন করা হলেও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এ কমিটি ভেঙ্গে যায়। পরে আবার নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু করে ইউজিসি সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে এ কমিটির নীতিমালা প্রণয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এতে ইউজিসি সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও দায়িত্বশীলরা রয়েছেন বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমোদন পায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা-১ এর সহকারী সচিব মো. সুলতান আহমেদ স্বাক্ষরিত এক অনুমোদন চিঠিতে দেখা যায়, গত ৭ জানুয়ারির ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিঠির বিপরীতে এ অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়।

চিঠিতে বলা হয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (সোয়াস), ইউনিভার্সিটি লন্ডনের সাথে একটি যৌথ পিএইচডি প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠার অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হলো। এছাড়া চিঠিতে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পিএইচডি চালুর লক্ষ্যে প্রণীতব্য নীতিমালার সাথে ভবিষ্যতে এতদসংক্রান্ত কোনো বিষয় সংঘর্ষ হলে তা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেনে চলতে বাধ্য থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়-১) মোছা. রোখছানা বেগম বলেন, ‘ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি অনুমোদনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি যখন ছুটিতে ছিলাম, তখন এ সংক্রান্ত অনুমোদন হয়েছে। কীভাবে হয়েছে সেটি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।’

তবে একই বিভাগের সহকারী সচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- ১) মো. সুলতান আহমেদ বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর জন্য আবেদন করেছিল। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমাদের উপদেষ্টা এ সংক্রান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সিনিয়র সচিব এবং উপদেষ্টা ভালো বলতে পারবেন। আমাদের পর্যায় থেকে কোনো কিছুর অনুমোদন হয় না।

তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি চালুর সুযোগ থাকলেও ১৯৯২ সাল থেকে চালু হওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তা নেই। এক সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। তবে বর্তমানে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান তুলনামূলক ভালো। এই বিষয়টি মাথায় রেখে গত বছরের শেষে দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি চালু করতে ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি করে ইউজিসি। বর্তমানে ওই কমিটির নীতিমালা তৈরির বিষয়ে সুপারিশের কাজ শেষের দিকে।

এদিকে নীতিমালা তৈরির আগেই এমন সুপারিশ ও অনুমোদনকে ভিন্ন চোখে দেখছেন ইউজিসি সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ। তারা বলছেন, নীতিমালা ছাড়াই অনুমোদন দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থা বুঝতে পারে না যে তারা কীভাবে কাজ করবে, কোন নিয়ম মেনে চলবে বা দায়িত্ব-কর্তব্য কী? এছাড়া দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের ঝুঁকি, আইনি জটিলতা, অসামঞ্জস্য ও দ্বৈত নীতির উদ্ভব, দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা সৃষ্টিসহ জবাবদিহিতা কমে যাওয়া শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তারা। আগামীতে পিএইচডি চালুর বিষয়ে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও এমন সুযোগ নিতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। যদিও বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কেউই খোলামেলা কথা বলতে রাজি হননি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন নীতিমালা তৈরির আগেই পিএইচডির সুপারিশ এবং অনুমোদন বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে তিনি বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি চেয়্যারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

একই পরামর্শ দেন ইউজিসির সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম। তার ভাষ্য, বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। তবে অনুমোদনের বিষয়ে ইউজিসির সুপারিশ লাগে। সুপারিশ ব্যতীত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুসারে কোনো প্রোগ্রাম চালুর সুযোগ নেই। আইনে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের কথা বলা হয়েছে; পিএইচডির কথা উল্লেখ নেই।

ড. ফখরুল বলেন, পিএইচডি অনুমোদন দেওয়ার জন্য আমাদের নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে; সেখানে কাদেেকে এই অনুমোদন দেওয়া হবে, কী দেখে দেওয়া হবে, যোগ্যতা, ল্যাব ফ্যাসিলিটিজ এবং পাবলিকেশনসহ সকল বিষয় এই নীতিমালার আওতাভুক্ত। এরপরই পিএইচডি অনুমোদনের বিষয়টি আসে। পরে বিষয়টি তিনি ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ‘আমরা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তারা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়েছে। নীতিমালার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি সোয়াস ইউনিভার্সিটির নীতিমালা। এটি আমাদের কোনো নীতিমালা নয়। সোয়াস ইউনিভার্সিটির নীতিমালা কী হবে— এটা আমরা বলে দিতে পারি না। এটা হচ্ছে একটা রিসার্চ প্রোগ্রাম, পিএইচডি প্রোগ্রাম— যেটি ব্র্যাক তাদের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে করবে।’

এ সময় ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যদি নীতিমালা নিয়ে যদি ঘুরতে থাকি; তাহলে আগামী ১০-১৫ বছরেও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হবে না।’ সোয়াস ইউনিভার্সিটির জন্য কোনো নীতিমালা তৈরির যোগ্যতাও ইউজিসি রাখে না বলেও জানান গুণী এই অধ্যাপক।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় যেকোনো ধরনের কার্যক্রম বা প্রোগ্রাম চালু করতে চাইলে অবশ্যই ইউজিসির সুপারিশ প্রয়োজন। শুধু দেশিয় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা এর প্রোগ্রাম নয়, দেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতেও ইউজিসির বিধিমালা মানার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তরা।