ঢাকা , সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আগের সতর্কবার্তা স্মরণ করালেন খামেনি ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা যুদ্ধের শুরু: হুতির হুঁশিয়ারি হাজারীবাগে ট্যানারির গুদামে আগুন দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মতিন সরকার রাজধানী থেকে গ্রেফতার অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে গেল উখিয়ার বিশেষায়িত হাসপাতাল নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে রোববার ড. ইউনূসের ওপর ফিনল্যান্ড সরকারের নিষেধাজ্ঞার দাবি ভুয়া: রিউমার স্ক্যানার সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মৎস্য উন্নয়নে ৫৬ জেলায় মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার

ইসরায়েলি অবরোধে গাজায় ৩৩০ জনের মৃত্যু, ৩ শতাধিক গর্ভপাত

ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ চলছে ৮০ দিনের বেশি সময় ধরে। এই সময়ে অঞ্চলটিতে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য কোনো রসদ প্রবেশ করতে পারেনি। আর এই মাশুল চুকিয়েছে গাজাবাসী, তাদের প্রাণ দিয়ে। গাজার জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে এই সময়ে ৩৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে অনাহারে। একই সময়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য সুবিধার অভাবে ৩ শতাধিক নারীর গর্ভপাত হয়েছে।

তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি গাজার জনসংযোগ বিভাগের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, ইসরায়েলের ৮০ দিনের অবরোধে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রায় ৩৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩০০ টিরও বেশি গর্ভপাত ঘটেছে। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল অঞ্চলটিতে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করে গণহত্যা চালাচ্ছে।

গাজার জনসংযোগ বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি দখলদারদের গাজায় চাপিয়ে দেওয়া অনাহার নীতিতে অপুষ্টি, খাদ্য ও ওষুধের অভাবে ৩২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ৮০ দিনে ৩০০ টিরও বেশি গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছে।’ গাজার মানবিক পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে তারা এবং ইসরায়েলকে ‘পরিকল্পিত অনাহার নীতি’ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করেছে।

গাজা সরকারের এই বিভাগ এই পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যার শামিল একটি সম্পূর্ণ অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। একই সঙ্গে ২৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিদের জীবন হুমকির মুখে বলে সতর্ক করেছে। জনসংযোগ বিভাগ নিশ্চিত করেছে, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল মানবিক সাহায্য, চিকিৎসা সামগ্রী এবং জ্বালানি প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৪৪ হাজার ট্রাক সাহায্যের প্রয়োজন। ৮০ দিনের অবরোধে মৃতের সংখ্যার বিষয়ে জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, অপুষ্টিতে ৫৮ জন, এবং খাদ্য ও ওষুধের অভাবে ২৪২ জন মারা গেছেন, যাদের বেশির ভাগই বয়স্ক। এ ছাড়া, ২৬ জন কিডনি রোগী সঠিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মারা গেছেন।

গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের তীব্র ঘাটতির কারণে ৩০০ টিরও বেশি গর্ভপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অপুষ্টির বিষয়ে জনসংযোগ বিভাগ উল্লেখ করেছে যে, বাসিন্দাদের দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে রক্তদান অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে। আহত রোগীদের জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের রক্ত ইউনিটের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে। শত শত হাজার নাগরিকের জীবন বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

গাজার জন্য প্রতিদিন ৫০০ ট্রাক সাহায্য এবং ৫০ ট্রাক জ্বালানির প্রয়োজন, যা অত্যাবশ্যকীয় এবং চিকিৎসা সুবিধার জন্য জরুরি। ইসরায়েল ২ মার্চ থেকে গাজার সমস্ত ক্রসিং বন্ধ করে এবং সীমান্তে জমা হওয়া সাহায্য আটকে রেখে ২৪ লাখ ফিলিস্তিনিকে পরিকল্পিতভাবে অনাহার দিচ্ছে। এতে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে স্থল অভিযান ঘোষণার মাধ্যমে তাদের গণহত্যা আরও তীব্র করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় বর্বর হামলা চালাচ্ছে। এতে প্রায় ৫৩ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

জনপ্রিয়

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আগের সতর্কবার্তা স্মরণ করালেন খামেনি

ইসরায়েলি অবরোধে গাজায় ৩৩০ জনের মৃত্যু, ৩ শতাধিক গর্ভপাত

প্রকাশিত: ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ চলছে ৮০ দিনের বেশি সময় ধরে। এই সময়ে অঞ্চলটিতে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য কোনো রসদ প্রবেশ করতে পারেনি। আর এই মাশুল চুকিয়েছে গাজাবাসী, তাদের প্রাণ দিয়ে। গাজার জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে এই সময়ে ৩৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে অনাহারে। একই সময়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য সুবিধার অভাবে ৩ শতাধিক নারীর গর্ভপাত হয়েছে।

তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি গাজার জনসংযোগ বিভাগের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, ইসরায়েলের ৮০ দিনের অবরোধে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় প্রায় ৩৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৩০০ টিরও বেশি গর্ভপাত ঘটেছে। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল অঞ্চলটিতে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করে গণহত্যা চালাচ্ছে।

গাজার জনসংযোগ বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি দখলদারদের গাজায় চাপিয়ে দেওয়া অনাহার নীতিতে অপুষ্টি, খাদ্য ও ওষুধের অভাবে ৩২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ৮০ দিনে ৩০০ টিরও বেশি গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছে।’ গাজার মানবিক পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে তারা এবং ইসরায়েলকে ‘পরিকল্পিত অনাহার নীতি’ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করেছে।

গাজা সরকারের এই বিভাগ এই পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যার শামিল একটি সম্পূর্ণ অপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। একই সঙ্গে ২৪ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিদের জীবন হুমকির মুখে বলে সতর্ক করেছে। জনসংযোগ বিভাগ নিশ্চিত করেছে, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল মানবিক সাহায্য, চিকিৎসা সামগ্রী এবং জ্বালানি প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৪৪ হাজার ট্রাক সাহায্যের প্রয়োজন। ৮০ দিনের অবরোধে মৃতের সংখ্যার বিষয়ে জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, অপুষ্টিতে ৫৮ জন, এবং খাদ্য ও ওষুধের অভাবে ২৪২ জন মারা গেছেন, যাদের বেশির ভাগই বয়স্ক। এ ছাড়া, ২৬ জন কিডনি রোগী সঠিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মারা গেছেন।

গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের তীব্র ঘাটতির কারণে ৩০০ টিরও বেশি গর্ভপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অপুষ্টির বিষয়ে জনসংযোগ বিভাগ উল্লেখ করেছে যে, বাসিন্দাদের দুর্বল স্বাস্থ্যের কারণে রক্তদান অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে। আহত রোগীদের জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের রক্ত ইউনিটের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে। শত শত হাজার নাগরিকের জীবন বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

গাজার জন্য প্রতিদিন ৫০০ ট্রাক সাহায্য এবং ৫০ ট্রাক জ্বালানির প্রয়োজন, যা অত্যাবশ্যকীয় এবং চিকিৎসা সুবিধার জন্য জরুরি। ইসরায়েল ২ মার্চ থেকে গাজার সমস্ত ক্রসিং বন্ধ করে এবং সীমান্তে জমা হওয়া সাহায্য আটকে রেখে ২৪ লাখ ফিলিস্তিনিকে পরিকল্পিতভাবে অনাহার দিচ্ছে। এতে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে স্থল অভিযান ঘোষণার মাধ্যমে তাদের গণহত্যা আরও তীব্র করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় বর্বর হামলা চালাচ্ছে। এতে প্রায় ৫৩ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।