ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আগের সতর্কবার্তা স্মরণ করালেন খামেনি ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা যুদ্ধের শুরু: হুতির হুঁশিয়ারি হাজারীবাগে ট্যানারির গুদামে আগুন দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মতিন সরকার রাজধানী থেকে গ্রেফতার অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে গেল উখিয়ার বিশেষায়িত হাসপাতাল নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে রোববার ড. ইউনূসের ওপর ফিনল্যান্ড সরকারের নিষেধাজ্ঞার দাবি ভুয়া: রিউমার স্ক্যানার সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মৎস্য উন্নয়নে ৫৬ জেলায় মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার

হাসিনা সরকার পতনের পরেও থামছে না তাণ্ডব—আকবর আলীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

পঞ্চগড় সদর উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক আকবর আলী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এলাকায় দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় আকবর গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে—ভূমি দখল, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়, এবং সাধারণ মানুষকে মারধর করাই ছিল তার নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড। সরকার পতনের পর অন্যান্য নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়লেও আকবর এখনো বহাল তবিয়তে এলাকায় রয়ে গেছেন এবং আগের মতোই দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন।

আকবর আলী পঞ্চগড়ের সাতমেরা ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং সাকিমুল হকের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক পদে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী সরকারের পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে সরকারি ডিলারশিপ (সার, চাল, টিসিবি) নিজের দখলে নেন এবং এসব ডিলারশিপ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, সেনা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আকবর তার ৯ বিঘা জমি জবরদখল করে রেখেছে। জমি ফিরিয়ে নিতে গেলে আকবর আলী সন্ত্রাসী কায়দায় তাকে মারধর করেন। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে তরিকুলকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি হতে হয়। থানায় মামলা হলেও পুলিশ তার গ্রেপ্তারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ।

অন্যদিকে, একই এলাকার রুস্তম আলী জানান, আকবর জোর করে তাদের পরিবারের ৩০ শতাংশ জমি দখল করে রেখেছেন। আরেক বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, আকবর আলী তার সাড়ে তিন বিঘা জমি এবং আব্দুস সোবহানের বাবার ৪০ শতাংশ জমি জবরদখল করে রেখেছেন।

আকবর আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই, কিন্তু প্রশাসনিক পদক্ষেপ ছিল দীর্ঘদিন সীমিত। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে এবং তারা তার দ্রুত বিচার দাবি করছেন।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আকবর আলী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জমি নিয়ে কিছু মানুষের সঙ্গে ঝামেলা আছে, তারাই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।” তিনি সরকারি ডিলারশিপে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন, তবে জানান—তিনি অন্যের নামে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল্লাহিল আজিম জানান, “আকবর আলীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। জমিজমাসংক্রান্ত বিষয়ে মামলা রয়েছে এবং তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

আকবর আলীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা চায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পদ ও প্রভাব গড়ে তোলা এ ধরনের নেতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।

জনপ্রিয়

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আগের সতর্কবার্তা স্মরণ করালেন খামেনি

হাসিনা সরকার পতনের পরেও থামছে না তাণ্ডব—আকবর আলীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

পঞ্চগড় সদর উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক আকবর আলী দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এলাকায় দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় আকবর গড়ে তুলেছেন সন্ত্রাসী বাহিনী। অভিযোগ রয়েছে—ভূমি দখল, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়, এবং সাধারণ মানুষকে মারধর করাই ছিল তার নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড। সরকার পতনের পর অন্যান্য নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়লেও আকবর এখনো বহাল তবিয়তে এলাকায় রয়ে গেছেন এবং আগের মতোই দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন।

আকবর আলী পঞ্চগড়ের সাতমেরা ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং সাকিমুল হকের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক পদে রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী সরকারের পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে সরকারি ডিলারশিপ (সার, চাল, টিসিবি) নিজের দখলে নেন এবং এসব ডিলারশিপ থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, সেনা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আকবর তার ৯ বিঘা জমি জবরদখল করে রেখেছে। জমি ফিরিয়ে নিতে গেলে আকবর আলী সন্ত্রাসী কায়দায় তাকে মারধর করেন। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে তরিকুলকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি হতে হয়। থানায় মামলা হলেও পুলিশ তার গ্রেপ্তারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ।

অন্যদিকে, একই এলাকার রুস্তম আলী জানান, আকবর জোর করে তাদের পরিবারের ৩০ শতাংশ জমি দখল করে রেখেছেন। আরেক বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, আকবর আলী তার সাড়ে তিন বিঘা জমি এবং আব্দুস সোবহানের বাবার ৪০ শতাংশ জমি জবরদখল করে রেখেছেন।

আকবর আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই, কিন্তু প্রশাসনিক পদক্ষেপ ছিল দীর্ঘদিন সীমিত। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে এবং তারা তার দ্রুত বিচার দাবি করছেন।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আকবর আলী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জমি নিয়ে কিছু মানুষের সঙ্গে ঝামেলা আছে, তারাই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।” তিনি সরকারি ডিলারশিপে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন, তবে জানান—তিনি অন্যের নামে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল্লাহিল আজিম জানান, “আকবর আলীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। জমিজমাসংক্রান্ত বিষয়ে মামলা রয়েছে এবং তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

আকবর আলীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা চায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পদ ও প্রভাব গড়ে তোলা এ ধরনের নেতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।