ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা, ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন প্রস্তাব দিলো ইসরায়েল ৪৪তম থেকে ৪৭তম বিসিএস: পিএসসির নতুন সময়সূচি প্রকাশ শেরপুর সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু “জুলাই-আগস্টে ঢাকায় আওয়ামী লীগের মৃত্যু, দাফন দিল্লিতে” — সালাহউদ্দিন আহমেদ কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার, ৪ মে থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালু তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুর খবর গুজব, তিনি সুস্থ আছেন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার ‘আপন কফি হাউজ’-এর সামনের মারধরের ঘটনায় তরুণীর খোঁজ মেলেনি, মামলা পুলিশের

জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন করার প্রস্তুতি সরকারের

জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন করার লক্ষ্যে বৈঠক হয়েছে গতকাল শনিবার। সব সংস্কার কমিশনের প্রধান ও প্রতিনিধিদের নিয়ে দিনব্যাপী বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। এতে কমিশনগুলোর মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় হয়। পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান ও সংস্কারকাজ কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ধানমন্ডি কার্যালয়ে বৈঠকে প্রথম ধাপের তিনটি কমিশনের প্রতিবেদন সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত পর্যালোচনা করা হয়। এরপর দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অন্য তিনটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে চারজন উপদেষ্টা, সাতটি সংস্কার কমিশনের প্রধান ও চারটি সংস্কার কমিশনের প্রধানদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
একটি সংস্কার কমিশনের প্রধান সমকালকে বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিতে সভা হয়েছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনার ফাঁকে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন উপদেষ্টারা। দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা কমিশনগুলো প্রথম ধাপের কমিশনগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে।

জানা যায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের দপ্তর থেকে সংস্কার কমিশনের প্রধানদের গতকালের বৈঠকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে পুরো সময় উপস্থিত ছিলেন রিজওয়ানা হাসান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কিছু সময় উপস্থিত ছিলেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ছয়টি ও দ্বিতীয় ধাপে পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন করা হবে। এ জন্য প্রথম ধাপের কমিশনগুলোর প্রতিবেদন নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। এসব কমিশনের প্রধান ও প্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তাদের প্রতিবেদনের পর্যালোচনা ও অভিজ্ঞতার আলোকে দ্বিতীয় ধাপের সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বৈঠক শেষে গতকাল রাতে বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরকার জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন করবে। তাই সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের অবশ্যই একটা লিঙ্ক আছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের সংস্কার কমিশনগুলো কাজ শুরু করার পর গতকাল প্রথম একসঙ্গে সবার বৈঠক হয়েছে। এখানেও জাতীয় ঐকমত্যের একটা বিষয় আছে।’ তিনি আরও বলেন, কমিশনগুলো গঠনের পর থেকে যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছে। এই পর্যায়ে মনে হয়েছে, কমিশনগুলোর মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়, কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয় দরকার। কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেসব ক্ষেত্র নিয়ে কাজ হচ্ছে, সেগুলোর বিষয়ে কীভাবে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান করা যায়, সেসব বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সংস্কার কমিশনপ্রধান এবং উপস্থিত উপদেষ্টাদের মধ্যে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। একটি কমিশনের কাজ অন্য কমিশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হলে সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা করা হবে। কার্যক্রম এগিয়ে নিতে প্রথম ধাপে গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের সবকটিরই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, বৈঠকে প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের প্রধানরা তাদের কাজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন। অনেকে ঢাকার বাইরে গেছেন, অনেকে যাননি। কয়েকটি কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে নানাভাবে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয় আমরা পর্যালোচনা করেছি। শিক্ষণীয় বিষয়গুলো পরবর্তী কমিশনের প্রধানদের কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম ধাপের কমিশনগুলো ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। দ্বিতীয় ধাপের পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠনের পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

একজন উপদেষ্টা সমকালকে বলেছেন, ‘কমিশনগুলো স্বাধীন। তারা তাদের মতো কথা বলেছে। অতীতে কাজ করতে যেসব প্রতিকূলতা এসেছে, তা জানিয়েছে। নতুন যেসব কমিশন হয়েছে, সেগুলো তা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়েছে। সংস্কারকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে।’
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় নতুন কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছিলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। এ কমিশনের কাজ হবে রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করা। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপন হবে, সেগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে সুপারিশ করবে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন।

এদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পেয়েছে। আর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছিল ৩ অক্টোবর। এই পাঁচ কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। সে হিসাবে ২ জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমার কথা ছিল। আর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল ৬ অক্টোবর। ৫ জানুয়ারির মধ্যে এ কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। গত ৪ নভেম্বর প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এতে কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়। ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। গত ৩ অক্টোবর গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন, শ্রম সংস্কার কমিশন এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য নিয়োগ করা হয়।

জনপ্রিয়

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা, ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন করার প্রস্তুতি সরকারের

প্রকাশিত: ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন করার লক্ষ্যে বৈঠক হয়েছে গতকাল শনিবার। সব সংস্কার কমিশনের প্রধান ও প্রতিনিধিদের নিয়ে দিনব্যাপী বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। এতে কমিশনগুলোর মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় হয়। পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান ও সংস্কারকাজ কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ধানমন্ডি কার্যালয়ে বৈঠকে প্রথম ধাপের তিনটি কমিশনের প্রতিবেদন সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত পর্যালোচনা করা হয়। এরপর দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অন্য তিনটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে চারজন উপদেষ্টা, সাতটি সংস্কার কমিশনের প্রধান ও চারটি সংস্কার কমিশনের প্রধানদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
একটি সংস্কার কমিশনের প্রধান সমকালকে বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতিতে সভা হয়েছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনার ফাঁকে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন উপদেষ্টারা। দ্বিতীয় ধাপে গঠন করা কমিশনগুলো প্রথম ধাপের কমিশনগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে।

জানা যায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের দপ্তর থেকে সংস্কার কমিশনের প্রধানদের গতকালের বৈঠকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে পুরো সময় উপস্থিত ছিলেন রিজওয়ানা হাসান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কিছু সময় উপস্থিত ছিলেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ছয়টি ও দ্বিতীয় ধাপে পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এসব কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন করা হবে। এ জন্য প্রথম ধাপের কমিশনগুলোর প্রতিবেদন নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। এসব কমিশনের প্রধান ও প্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তাদের প্রতিবেদনের পর্যালোচনা ও অভিজ্ঞতার আলোকে দ্বিতীয় ধাপের সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বৈঠক শেষে গতকাল রাতে বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সরকার জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন করবে। তাই সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের অবশ্যই একটা লিঙ্ক আছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের সংস্কার কমিশনগুলো কাজ শুরু করার পর গতকাল প্রথম একসঙ্গে সবার বৈঠক হয়েছে। এখানেও জাতীয় ঐকমত্যের একটা বিষয় আছে।’ তিনি আরও বলেন, কমিশনগুলো গঠনের পর থেকে যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছে। এই পর্যায়ে মনে হয়েছে, কমিশনগুলোর মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়, কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয় দরকার। কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যেসব ক্ষেত্র নিয়ে কাজ হচ্ছে, সেগুলোর বিষয়ে কীভাবে পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান করা যায়, সেসব বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সংস্কার কমিশনপ্রধান এবং উপস্থিত উপদেষ্টাদের মধ্যে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে। একটি কমিশনের কাজ অন্য কমিশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হলে সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা করা হবে। কার্যক্রম এগিয়ে নিতে প্রথম ধাপে গঠিত ছয় সংস্কার কমিশনের সবকটিরই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, বৈঠকে প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের প্রধানরা তাদের কাজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন। অনেকে ঢাকার বাইরে গেছেন, অনেকে যাননি। কয়েকটি কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে নানাভাবে আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয় আমরা পর্যালোচনা করেছি। শিক্ষণীয় বিষয়গুলো পরবর্তী কমিশনের প্রধানদের কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম ধাপের কমিশনগুলো ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। দ্বিতীয় ধাপের পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠনের পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ করার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

একজন উপদেষ্টা সমকালকে বলেছেন, ‘কমিশনগুলো স্বাধীন। তারা তাদের মতো কথা বলেছে। অতীতে কাজ করতে যেসব প্রতিকূলতা এসেছে, তা জানিয়েছে। নতুন যেসব কমিশন হয়েছে, সেগুলো তা থেকে অভিজ্ঞতা নিয়েছে। সংস্কারকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে।’
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় নতুন কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছিলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। এ কমিশনের কাজ হবে রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করা। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপন হবে, সেগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে সুপারিশ করবে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন।

এদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পেয়েছে। আর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছিল ৩ অক্টোবর। এই পাঁচ কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। সে হিসাবে ২ জানুয়ারির মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমার কথা ছিল। আর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল ৬ অক্টোবর। ৫ জানুয়ারির মধ্যে এ কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। গত ৪ নভেম্বর প্রথম ধাপের ছয় কমিশনের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এতে কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়। ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। গত ৩ অক্টোবর গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন, শ্রম সংস্কার কমিশন এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য নিয়োগ করা হয়।