গাজা এখন মানবিক বিপর্যয়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। রেডক্রস প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক একে আখ্যা দিয়েছেন “পৃথিবীর দোযখ” হিসেবে। তিনি জানিয়েছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে গাজায় চালু থাকা অস্থায়ী হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কারণ চিকিৎসাসামগ্রীসহ জরুরি রসদ ফুরিয়ে আসছে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পোলজারিক বলেন, “মানুষ বিদ্যুৎ, পানি, খাবার—কোনো কিছুই পাচ্ছে না। এটা কল্পনাতীত দুঃস্বপ্ন।”
সম্পূর্ণ অবরোধের শিকার গাজা
গত ২ মার্চ থেকে ইসরাইল গাজায় পূর্ণ অবরোধ জারি করে। এর ফলে ত্রাণ সরবরাহ, খাবার, ওষুধ ও জ্বালানি প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। রেডক্রস জানিয়েছে, গত ছয় সপ্তাহে গাজায় কোনো ধরনের সহায়তা প্রবেশ করতে পারেনি।
ইসরাইল দাবি করেছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় তারা ২৫ হাজার ট্রাক ত্রাণ পাঠিয়েছে, যা হামাস তাদের পুনর্গঠনে ব্যবহার করেছে। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, এই ত্রাণে সাধারণ মানুষের প্রয়োজন মেটেনি।
নতুন করে বিমান হামলা, বাড়ছে প্রাণহানি
১৮ মার্চ রাত থেকে ইসরাইল নতুন করে তীব্র বিমান হামলা শুরু করে গাজায়, যেখানে এক রাতেই প্রাণ হারান ৪০০-র বেশি ফিলিস্তিনি। এরপর থেকে আরও এক হাজার ৫২২ জন নিহত এবং তিন হাজার ৮০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইসরাইলের এই অভিযান কার্যত জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করেছে। গত ১৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে তা আবার ভেঙে ফেলে।
বাস্তুচ্যুতি ও ধ্বংসের চিত্র ভয়াবহ
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলমান আক্রমণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্মরণে ৭ অক্টোবরের হামলা
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১,১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০-র বেশি মানুষকে গাজায় বন্দি করে নেওয়া হয়। এরপরই ইসরাইল সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে গাজায়, যা এখন পর্যন্ত থামেনি।
মানবিক বিপর্যয়ের সমাধানে আন্তর্জাতিক আহ্বান
বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘ গাজার এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিরসনে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। রেডক্রসের মতে, যদি অবিলম্বে সহায়তা পৌঁছানো না যায়, তবে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে এবং হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।
এই মুহূর্তে গাজার জন্য জরুরি ভিত্তিতে মানবিক করিডোর খোলা ও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ছাড়া বিকল্প নেই বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।