আসন্ন অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নের প্রাক্কালে স্থানীয় সরকার ও পানি-স্যানিটেশন খাতে ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিতের লক্ষ্যে এক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে স্থানীয় সরকার ও পানি-স্যানিটেশনে টেকসই ও ন্যায্য বাজেট বরাদ্দের আহ্বান জানান বক্তারা।
শনিবার বিকাল ৩টায় সিরডাপ মিলনায়তনে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উন্নয়ন সংস্থা ডর্প-এর আয়োজনে এবং হেলভেটাস বাংলাদেশ-এর সহায়তায় আয়োজিত এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও কমিশনের প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী, উন্নয়নকর্মী এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. তোফায়েল আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জিল্লুর রহমান, ব্যাংক সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য সাব্বির আহমেদ, অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর, দ্বিতীয় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডর্প-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এএইচএম নোমান। মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরেরঅতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ত) মীর আব্দুস সাহিদ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) (অতি.দা.) এহতেশামুল রাসেল খান এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদকমাইনুল হাসান সোহেল। এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও অংশীজনরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন ডর্প-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন। তিনি সভাপতির বক্তব্যে ডর্প-এর বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন এবং স্থানীয় সরকার বাজেট বৃদ্ধি এবং সঠিক ব্যবহার এর মাধ্যমে দেশের পানি ও স্যানিটেশন এর সমস্যা সমাধান করার দাবি তুলে ধরেন।মূল প্রবন্ধে ড. মাহফুজ কবীর দেশের পানি ও স্যানিটেশন খাতে সঠিক বাজেট বরাদ্ধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তবে ড. তোফায়েল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদভিত্তিক জনপ্রতি বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সেবা গ্রহণ করতে পারে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেট ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে বাজেট সংলাপ আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের বাস্তব চাহিদা বাজেটে প্রতিফলিত করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সিটি কর্পোরেশনসমূহে বাজেট বৃদ্ধি পেলেও গ্রামীণ এলাকায় সে তুলনায় বরাদ্দ আশানুরূপ নয়। এই বাজেট বৈষম্য দূর করে সমতাভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই বাজেট নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোর জন্য পানি ও স্যানিটেশন অবকাঠামো উন্নয়নে পর্যাপ্ত ও ন্যায্য বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। বক্তারা জলবায়ু বাজেটের সঠিক ব্যবহার, বরাদ্দের স্বচ্ছতা এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
বক্তারা উল্লেখ করেন যে, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক করতে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার নিকট একটি সুপারিশমালা জমা দিয়েছে এবং আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানের প্রতি সুপারিশ করেন যেন তিনি আসন্ন বাজেটে মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা ও বৈষম্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখেন।