ঢাকা , শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আগের সতর্কবার্তা স্মরণ করালেন খামেনি ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা যুদ্ধের শুরু: হুতির হুঁশিয়ারি হাজারীবাগে ট্যানারির গুদামে আগুন দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মতিন সরকার রাজধানী থেকে গ্রেফতার অর্থ সংকটে বন্ধ হয়ে গেল উখিয়ার বিশেষায়িত হাসপাতাল নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে রোববার ড. ইউনূসের ওপর ফিনল্যান্ড সরকারের নিষেধাজ্ঞার দাবি ভুয়া: রিউমার স্ক্যানার সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মৎস্য উন্নয়নে ৫৬ জেলায় মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে থমথমে অবস্থা, সতর্ক টহলে বিজিবি

 

শনিবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশি কৃষকের ফল বাগান নষ্ট ও হামলার ঘটনার পর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে। তবে এসব এলাকায় সতর্ক টহল অব্যাহত রেখেছে বিজিবি।

রোববার সারাদিন সীমান্তে উত্তেজনা বা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সরেজমিন এই দুই সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সীমান্তের দূরবর্তী এলাকার জমিতে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন। তবে তা সংখ্যায় অনেক কম ছিল। কৃষকদের অভিযোগ চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্ত সংলগ্ন জমিতে রোববার চাষাবাদ ও ফল বাগানগুলো পরিচর্যা করতে যেতে পারেননি তারা। বিএসএফ তাদের এসব এলাকার জমিতে প্রবেশে বাধা দেওয়ায় তারা জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কায় জমি ও ফল বাগানগুলোতে যাননি।

কৃষক বিশারত আলী জানান, সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় তার জমি। এই এলাকায় তিনি দীর্ঘদিন যাবত চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত।

শনিবার বিএসএফের ইন্ধনে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশের জমি ও ফল বাগানের হামলা বিষয়ে তিনি জানান, তারা দীর্ঘদিন থেকে আমাদের ফসলের ক্ষতি করে আসছে। বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের বরই বাগান থেকে জোর করে বরই পেড়ে নিয়ে যায়। এছাড়া আম মৌসুমের গাছ থেকে আম পেড়ে নিয়ে যায়। আমরা ভয়ে কখনও তাদের বাধা দিতে পারি না। এসব অত্যাচার সহ্য করে দিনের পর দিন এখানে আমাদের চাষাবাদ করতে হয়।

কৃষক মহসীন আলীও একই অভিযোগ করে বলেন, শনিবারের ঘটনার পর আমি ভয়ে জমিতে যেতে পারিনি। আজকে গিয়েছিলাম কিন্তু বিজিবি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। সীমান্তে আমাদের এভাবে ভয় ও শঙ্কা নিয়ে চাষাবাদ করতে হচ্ছে।

মুরসালিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, শনিবার বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে তারা আমাদের বরই, পেয়ারা বাগান ও আমগাছ কেটে ফেলেছে। এছাড়া সরিষা ভুট্টাসহ প্রায় শতাধিক বিঘা জমির ফসল নষ্ট করে ফেলেছে। এছাড়া কৃষক ও এলাকবাসীর ওপর হামলা চালিয়ে ৫-৬ জনকে গুরুতর আহত করেছে। আমরাও তাদের পালটা হামালার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু বিজিবির অনুরোধে পিছু হটে আসি।

রাসেল আলী নামে অপর এক কৃষক জানান, চৌকা সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় আমাদের জমি ও ফল বাগান রয়েছে। এর আগে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের ফসলের ক্ষতি করেছে। বিগত কিছু দিন আগেও এখানে তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আমার পানির শ্যালোইঞ্জিন নিয়ে যায়। পরে বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকের পর তা ফেরত দেয়; কিন্তু শ্যালোইঞ্জিনের ভেতর কোনো যন্ত্রাংশ ছিল না, শুধুমাত্র বাইরের বডি আমাদের ফেরত দেয়। এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সীমান্তবর্তী ভারতীয় নাগরিকদের অত্যাচারের শিকার হচ্ছি।

সীমান্তের কৃষক তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শনিবার আমি সীমান্তের জমিতে কাজ করছিলাম। এ সময় হঠাৎ দেখি বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা আমার দুই ভাতিজার ওপর হামলা করছে। এ সময় আমি তাদের বাঁচাতে গেলে তারা আমার ওপরও হামলা করে। তাদের নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে আমার পায়ে গুরুতর আঘাত পাই। পরে পাশের কৃষকরা এগিয়ে আসলে আমি ও আমার ভাতিজারা প্রাণে রক্ষা পায়। তারা সীমান্তের পাশে অনেক পাথরের স্তূপ করে রেখেছে। এসব পাথর দিয়ে তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। কয়েক দিন আগে এই সীমান্তে অবৈধভাবে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করে। বিজিবির কঠোর প্রতিবাদের কারণে তারা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। আমাদের শঙ্কা এসব পাথর ব্যবহার করে তারা আবারও এখানে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করবে। আবারও তারা সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবে।

মাহমুদুল হাসান জয় নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, শনিবার বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের উপর হাঁসুয়া, পাথর, তীর-ধনুক এবং বোমা হামলা চালায়। বিএসএফের ইন্ধনে তারা এভাবে আমাদের ওপর বর্বর হামলা চালায়, যা আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।

৫৯ মহানন্দা বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের জানান, শনিবার আমি পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে দুটি অনুরোধ জানিয়েছি। প্রথমটি, যেহেতু ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উস্কানি দিচ্ছে, সেই কারণে ভারতীয় জনগণকে সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়টি হলো- সীমান্তে মোতায়েনকৃত অতিরিক্ত বিএসএফ জওয়ান সরিয়ে নেওয়ার জন্য। বিএসএফ আমার এ অনুরোধ দ্রুত বাস্তবায়ন করেছে। সুতরাং সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আমাদের নাগরিকদেরও সীমান্ত এলাকা থেকে দূরে চলে যাওয়ার অনুরোধ করি। তারাও সরে এসেছে কিন্তু অতিরিক্ত জনসমাগমের কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিএসএফ ও বিজিবি সীমান্তে নিয়মিত টহল করছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি সীমান্তে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণকে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।

জনপ্রিয়

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আগের সতর্কবার্তা স্মরণ করালেন খামেনি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে থমথমে অবস্থা, সতর্ক টহলে বিজিবি

প্রকাশিত: ১২:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

 

শনিবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশি কৃষকের ফল বাগান নষ্ট ও হামলার ঘটনার পর থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে। তবে এসব এলাকায় সতর্ক টহল অব্যাহত রেখেছে বিজিবি।

রোববার সারাদিন সীমান্তে উত্তেজনা বা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সরেজমিন এই দুই সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সীমান্তের দূরবর্তী এলাকার জমিতে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন। তবে তা সংখ্যায় অনেক কম ছিল। কৃষকদের অভিযোগ চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্ত সংলগ্ন জমিতে রোববার চাষাবাদ ও ফল বাগানগুলো পরিচর্যা করতে যেতে পারেননি তারা। বিএসএফ তাদের এসব এলাকার জমিতে প্রবেশে বাধা দেওয়ায় তারা জীবনের নিরাপত্তার শঙ্কায় জমি ও ফল বাগানগুলোতে যাননি।

কৃষক বিশারত আলী জানান, সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় তার জমি। এই এলাকায় তিনি দীর্ঘদিন যাবত চাষাবাদের সঙ্গে জড়িত।

শনিবার বিএসএফের ইন্ধনে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশের জমি ও ফল বাগানের হামলা বিষয়ে তিনি জানান, তারা দীর্ঘদিন থেকে আমাদের ফসলের ক্ষতি করে আসছে। বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের বরই বাগান থেকে জোর করে বরই পেড়ে নিয়ে যায়। এছাড়া আম মৌসুমের গাছ থেকে আম পেড়ে নিয়ে যায়। আমরা ভয়ে কখনও তাদের বাধা দিতে পারি না। এসব অত্যাচার সহ্য করে দিনের পর দিন এখানে আমাদের চাষাবাদ করতে হয়।

কৃষক মহসীন আলীও একই অভিযোগ করে বলেন, শনিবারের ঘটনার পর আমি ভয়ে জমিতে যেতে পারিনি। আজকে গিয়েছিলাম কিন্তু বিজিবি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। সীমান্তে আমাদের এভাবে ভয় ও শঙ্কা নিয়ে চাষাবাদ করতে হচ্ছে।

মুরসালিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, শনিবার বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে তারা আমাদের বরই, পেয়ারা বাগান ও আমগাছ কেটে ফেলেছে। এছাড়া সরিষা ভুট্টাসহ প্রায় শতাধিক বিঘা জমির ফসল নষ্ট করে ফেলেছে। এছাড়া কৃষক ও এলাকবাসীর ওপর হামলা চালিয়ে ৫-৬ জনকে গুরুতর আহত করেছে। আমরাও তাদের পালটা হামালার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু বিজিবির অনুরোধে পিছু হটে আসি।

রাসেল আলী নামে অপর এক কৃষক জানান, চৌকা সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় আমাদের জমি ও ফল বাগান রয়েছে। এর আগে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের ফসলের ক্ষতি করেছে। বিগত কিছু দিন আগেও এখানে তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আমার পানির শ্যালোইঞ্জিন নিয়ে যায়। পরে বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকের পর তা ফেরত দেয়; কিন্তু শ্যালোইঞ্জিনের ভেতর কোনো যন্ত্রাংশ ছিল না, শুধুমাত্র বাইরের বডি আমাদের ফেরত দেয়। এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সীমান্তবর্তী ভারতীয় নাগরিকদের অত্যাচারের শিকার হচ্ছি।

সীমান্তের কৃষক তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শনিবার আমি সীমান্তের জমিতে কাজ করছিলাম। এ সময় হঠাৎ দেখি বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা আমার দুই ভাতিজার ওপর হামলা করছে। এ সময় আমি তাদের বাঁচাতে গেলে তারা আমার ওপরও হামলা করে। তাদের নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে আমার পায়ে গুরুতর আঘাত পাই। পরে পাশের কৃষকরা এগিয়ে আসলে আমি ও আমার ভাতিজারা প্রাণে রক্ষা পায়। তারা সীমান্তের পাশে অনেক পাথরের স্তূপ করে রেখেছে। এসব পাথর দিয়ে তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। কয়েক দিন আগে এই সীমান্তে অবৈধভাবে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করে। বিজিবির কঠোর প্রতিবাদের কারণে তারা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। আমাদের শঙ্কা এসব পাথর ব্যবহার করে তারা আবারও এখানে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করবে। আবারও তারা সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবে।

মাহমুদুল হাসান জয় নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, শনিবার বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকরা আমাদের উপর হাঁসুয়া, পাথর, তীর-ধনুক এবং বোমা হামলা চালায়। বিএসএফের ইন্ধনে তারা এভাবে আমাদের ওপর বর্বর হামলা চালায়, যা আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।

৫৯ মহানন্দা বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের জানান, শনিবার আমি পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে দুটি অনুরোধ জানিয়েছি। প্রথমটি, যেহেতু ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উস্কানি দিচ্ছে, সেই কারণে ভারতীয় জনগণকে সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়টি হলো- সীমান্তে মোতায়েনকৃত অতিরিক্ত বিএসএফ জওয়ান সরিয়ে নেওয়ার জন্য। বিএসএফ আমার এ অনুরোধ দ্রুত বাস্তবায়ন করেছে। সুতরাং সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য আমাদের নাগরিকদেরও সীমান্ত এলাকা থেকে দূরে চলে যাওয়ার অনুরোধ করি। তারাও সরে এসেছে কিন্তু অতিরিক্ত জনসমাগমের কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিএসএফ ও বিজিবি সীমান্তে নিয়মিত টহল করছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি সীমান্তে স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণকে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।