পাল্টা শুল্কের জবাবে বাংলাদেশ আমদানিতে ছাড় দিতে চায়

আপলোড সময় : ১৯-০৭-২০২৫ ০৮:১৯:৪৩ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৯-০৭-২০২৫ ০৮:১৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ককে আরো জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে সরকার। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পণ্যে গড়ে ৬ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হলেও, তা কমিয়ে আনার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এমন উদ্যোগ মূলত ওয়াশিংটনের সঙ্গে আসন্ন তৃতীয় দফা বাণিজ্য আলোচনার প্রেক্ষাপটে নেওয়া হচ্ছে।
 
তৃতীয় দফার আলোচনার আগে নানামুখী প্রস্তুতি নিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আলোচনায় সহায়তার জন্য দেশের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এখনো চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারিত হয়নি। আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
 
গত ৮ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশের জন্য পালটা শুল্ক ৩৫ শতাংশ নির্ধারণ করেন, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়, ফলে মোট শুল্ক বেড়ে দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। এ অবস্থায় আমদানি পণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়ে ভারসাম্য রাখার কৌশল নিতে চাইছে বাংলাদেশ।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম, এলএনজি, উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ ও ভোজ্য তেলের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া বেসরকারিভাবে তুলা আমদানির সুযোগও তৈরি করা হচ্ছে।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আলোচনার সময় মার্কিন ব্র্যান্ড ও আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে সহযোগিতা চাইবেন দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। পরে তাদের পরামর্শ নিয়ে সরকার নিজ দলের কৌশল নির্ধারণ করবে। এ উদ্দেশ্যে একজন প্রবাসী সাবেক কূটনীতিকের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। 
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) করায় সরকারি দলের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একত্রে আলোচনায় অংশগ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। তবুও পরামর্শের জন্য বিকল্প পদ্ধতিতে যুক্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও গবেষকরা।
 
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা সফল করতে নানা কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে অনলাইন বৈঠকে যুক্ত হন বাণিজ্য উপদেষ্টা। সংস্থাটি বিশ্ব জুড়ে মার্কিন গম বিক্রিতে সহায়তা করে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০-৩০ ডলার বেশি দামে হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম কিনবে। একই সঙ্গে শেভরন ও এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানই জ্বালানি সরবরাহে বাংলাদেশে কাজ করছে। এলএনজি আমদানির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে এক্সিলারেটের সঙ্গে।
 
আর ২২ জুলাই আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (এএএফএ) সঙ্গে বৈঠক, যারা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক ও জুতা আমদানিকারক মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে।
 
১৩ জুলাই দেশে ফিরে আসার পর থেকেই বাণিজ্য উপদেষ্টা তৃতীয় দফার আলোচনার প্রস্তুতি জোরদার করেছেন। ১৪ জুলাই ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মতামত নেওয়া হয় এবং ১৬ জুলাই একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে সরকারি অবস্থান নির্ধারণের কাজ এগিয়েছে। খাদ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন। তবে তৃতীয় দফা আলোচনার নির্দিষ্ট সময়সূচি এখনো জানানো হয়নি।
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া খসড়া চুক্তিতে বাংলাদেশের মতামত পাঠানোর পরেই ইউএসটিআর থেকে সময়সূচি জানানো হবে। তবে ২১ জুলাই প্রতিনিধিদলের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সম্ভাব্য যাত্রার তারিখ ধরে বিমানের টিকিট বুকিং দেওয়া হয়েছে।
 
নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমাদের শুল্কের পরিমাণ যেন ভারত ও ভিয়েতনামের কাছাকাছি থাকে। তাহলে আমরা এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পারব।’ তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্যারিফ আলোচনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে যে আলোচনা হয়েছে সেটি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যা অবহিত করা হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাবে এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানানো হয়নি।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]