সাক্ষাৎকার: মাহবুব আহমেদ সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)

আপলোড সময় : ১০-০৭-২০২৫ ০১:০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১০-০৭-২০২৫ ০১:০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
প্রতিবেদক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেটে কোন বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
 
মাহবুব আহমেদ: আমার মতে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে পূর্ণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ দেওয়া জরুরি। বিশেষভাবে আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ অস্থির আর্থিক খাত অর্থনীতির অগ্রযাত্রায় বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা উন্নয়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে খাতওয়ারি বরাদ্দের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে আমি মনে করি।
 
প্রতিবেদক: আমরা দেখছি, এবার বাজেটের আকার বাড়ছে না। এটা বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত হবে কি?
 
মাহবুব আহমেদ: হ্যাঁ, বাস্তবতা হলো—আমরা অতীতে ১৫% জিডিপির সমান বাজেট ঘোষণা করলেও তা রাজস্বের মাধ্যমে তুলতে পারিনি এবং বড় অংশ অপচয় হয়েছে। সে বিবেচনায় বাজেটের আকার না বাড়ানোই যুক্তিসঙ্গত। তবে দীর্ঘ সময় সংকোচনমূলক ফিসক্যাল পলিসি রাখা যাবে না। প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বিবেচনায় এ বিষয়ে ভারসাম্য প্রয়োজন।
 
প্রতিবেদক: বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার কার্যকর পদক্ষেপ কী হতে পারে?
 
মাহবুব আহমেদ: এটা জটিল একটি বিষয়। বিএফআইইউ, দুর্নীতি দমন কমিশন, সিআইডি এবং এনবিআর—এই চারটি সংস্থা এর সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে। আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামো জেনে, বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে, আমরা যদি সুনির্দিষ্ট কৌশলে এগোই, তাহলে কিছুটা সফলতা আশা করা যায়।
 
 
প্রতিবেদক: আইএমএফের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব নিয়ে কী বলবেন?
 
মাহবুব আহমেদ: দূরত্ব এখন অনেকটা কমেছে। সরকার আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু সংস্কার গ্রহণ করেছে—যেমন ডলারের দাম বাজারে ছেড়ে দেওয়া এবং এনবিআরকে দুটি বিভাগে ভাগ করা। আইএমএফও ইতোমধ্যে দুটি কিস্তিতে ১৩০ কোটি ডলার ছাড় করেছে। আমি মনে করি, এ সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
 
প্রতিবেদক: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কী করণীয়?
 
মাহবুব আহমেদ: আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমেছে, অভ্যন্তরে চলছে সংকোচনমূলক নীতিমালা। বাজেটেও খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত এসেছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে, মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমেছে। ধারাবাহিকভাবে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
 
প্রতিবেদক: জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমানো কি সঠিক সিদ্ধান্ত?
 
মাহবুব আহমেদ: হ্যাঁ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা যুক্তিসঙ্গত। সংকোচনমূলক রাজস্বনীতি জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এই হার কম থাকলে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বাড়বে। তাই উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য থাকা উচিত, তবে বণ্টনের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
 
প্রতিবেদক: বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে বাজেটে কী করা উচিত?
 
মাহবুব আহমেদ: বর্তমানে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে ধীরগতি রয়েছে। এর পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমাদের উচিত হবে বিদ্যমান শিল্পে দক্ষতা বৃদ্ধি করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখা।
 
প্রতিবেদক: ব্যাংক খাতের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে কমিশন গঠনের প্রয়োজন আছে কি?
 
মাহবুব আহমেদ: এ নিয়ে অনেক দিন আলোচনা চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে পলিসি ও গভর্নেন্স ক্ষেত্রে কিছু সংস্কার নিয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিস্তারিত সুপারিশ রয়েছে। এসব বাস্তবায়ন হলে কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা কতটা আছে, সেটা বোঝা যাবে।
 
প্রতিবেদক: আপনি কর ফাঁকি রোধ ও করদাতা সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলেছেন। এর ব্যাখ্যা দিন।
 
মাহবুব আহমেদ: আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত খুবই কম। কিছু ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে বিপুল সম্পদ জমা হয়েছে, কিন্তু তাদের কাঙ্ক্ষিত হারে কর দেওয়া হচ্ছে না। শুধু এনবিআর ডিজিটাল হলেই চলবে না, ব্যবসা-বাণিজ্যও ডিজিটালাইজ করতে হবে। ডিজিটাল ট্রানজ্যাকশন নিশ্চিত করতে পারলে কর ফাঁকি অনেকটাই রোধ করা যাবে। একই সঙ্গে করের আওতা বাড়াতে হবে। আশা করছি আসন্ন বাজেটে এই বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
 
মাহবুব আহমেদের দৃষ্টিতে আসন্ন বাজেটে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, প্রযুক্তিনির্ভরতা এবং বাস্তবমুখী রাজস্বনীতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাজেটের আকার না বাড়িয়ে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]