দেশে ক্যান্সারের ওষুধে বিপ্লব: ৪০ হাজার টাকার ইনজেকশন এখন ৪ হাজারে

আপলোড সময় : ০৯-১১-২০২৫ ০৯:৫২:৩১ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৯-১১-২০২৫ ১০:৩২:৪৫ অপরাহ্ন
বাংলাদেশে ক্যান্সারের ওষুধ এখন আগের তুলনায় কয়েকগুণ সাশ্রয়ী। আগে যেসব ইনজেকশন ও ক্যান্সার কেয়ার ড্রাগ ৪০–৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এখন দেশীয় উৎপাদনের কারণে তা মাত্র ৪–৫ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর এই সক্ষমতা শুধু চিকিৎসা খরচ কমায়নি, বরং ক্যান্সার চিকিৎসায় বিদেশ নির্ভরতা থেকেও দেশকে মুক্ত করেছে।
একসময় ক্যান্সারের চিকিৎসা ছিল ধনীদের সাধ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিদেশি ওষুধ আমদানির ওপর নির্ভরশীলতায় বছরে এক হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হতো, যা অধিকাংশ রোগীর পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু গত এক দশকে দৃশ্যপট বদলে গেছে। দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো এখন দেশের ক্যান্সারের ওষুধের প্রায় ৯৫ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে।
 
বর্তমানে বীকন, ইনসেপ্টা, রেনেটা, হেলথ কেয়ারসহ ১৮টি প্রতিষ্ঠান ক্যান্সারের বিভিন্ন ড্রাগ ও ইনজেকশন উৎপাদন করছে। এই অগ্রগতির ফলে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় নাটকীয়ভাবে কমেছে। উদাহরণ হিসেবে, ‘পেগফিলগ্রাস্টিম’ নামের ইনজেকশন, যার দাম একসময় ছিল ৪০ হাজার টাকা, এখন পাওয়া যাচ্ছে ৪–২০ হাজার টাকায়। একইভাবে ‘ফিলগ্রাস্টিম’ ওষুধের দাম ৬০ হাজার থেকে নেমে এসেছে ৪ হাজার টাকায়।
 
বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট এস. এম. মাহমুদুল হক পল্লব জানান, দেশে এখন প্রায় সব ধরনের ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে, যার ৯০ শতাংশই বীকনের নিজস্ব সক্ষমতার আওতায়। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে তারা এখন শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মিয়ানমারে রপ্তানি করছে।
 
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান বলেন, “দেশীয় উৎপাদন বাড়ায় ক্যান্সারের ওষুধের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর ফলে নিম্ন আয়ের রোগীরাও সহজে চিকিৎসা নিতে পারছেন।”
 
ওষুধের মান বজায় রাখতে অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি হাসপাতাল বা রোগীর কাছে সরবরাহ করছে, যাতে নকল বা ভেজাল ওষুধের ঝুঁকি না থাকে। সরকারের পক্ষ থেকেও ক্যান্সার ওষুধ উৎপাদনে কর ও শুল্ক মওকুফসহ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মার্চে ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়।
 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এসব কর ছাড় ও সরকারের নীতিগত সহায়তায় দেশব্যাপী ক্যান্সার চিকিৎসা সহজলভ্য হয়েছে। এখন মাসে প্রায় ৫০–৫৫ কোটি টাকার ক্যান্সার ওষুধ বিক্রি হয়, যা আগের মতো আমদানি করলে বছরে এক হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হতো।
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন, আর মৃত্যুবরণ করছেন ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি। বাড়তে থাকা এই সংখ্যাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাপক বিনিয়োগে উৎসাহিত করছে। রেনেটা, এসিআই, ওয়ান ফার্মা ও অন্যান্য কোম্পানি এখন বায়োসিমিলার ও ইমিউনোথেরাপি ওষুধ উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে।
 
ওয়ান ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে. এস. এম. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ১০টির মধ্যে ৯টি ওষুধই বায়োসিমিলার। আমরা ইতোমধ্যেই এ খাতে বিনিয়োগ করেছি এবং আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে রপ্তানি চুক্তি করেছি।”
 
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে হলে স্থানীয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং এপিআই (Active Pharmaceutical Ingredient) উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, “দেশে উৎপাদিত ওষুধের মান ভালো হলেও লোকাল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অপরিহার্য। পাশাপাশি সরকারকে স্থানীয় এপিআই উৎপাদনে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।”
 
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা আর বিলাসিতা নয়—বরং নাগরিক অধিকারের অংশ হয়ে উঠছে।

সম্পাদকীয় :

লাইসেন্স নং: TRAD/DNCC/013106/2024 বার্তা বিভাগ: [email protected] অফিস: [email protected]

অফিস :

যোগাযোগ: মিরপুর, শেওড়াপাড়া হটলাইন: 09638001009 চাকুরী: [email protected]