চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর, গত ১৫ অক্টোবর। নির্বাচনের পর শপথ অনুষ্ঠানও সম্পন্ন হয়েছে। তবে নির্বাচনের ২৪ দিন সময় পেরিয়ে গেলেও নব–নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এখনো বুঝে পাননি তাদের নিজস্ব কার্যালয়। ফলে কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হচ্ছেন বিকল্প স্থানে। প্রশাসনিকভাবে এক বছর মেয়াদি এই সংসদের দায়িত্বভার গ্রহণের সময়। অথচ তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় পরও ভবনের সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় অফিস কক্ষগুলোর তালা খোলেনি। অফিস না থাকায় কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রথম সাধারণ সভাও অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটকক্ষে।
সরেজমিনে চাকসু ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের তৃতীয় তলায় সংসদের জন্য বরাদ্দ ছয়টি কক্ষই অচল অবস্থায় পড়ে আছে। সবগুলো রুম ধুলাবালিতে ভরা, শ্রমিকেরা দেয়াল রং ও ইলেকট্রিকের কাজ করছেন। টুংটাং আওয়াজে চলছে সংস্কারের কাজ, কিন্তু কবে শেষ হবে জানেন না কেউ।
প্রথম কক্ষটি সাধারণ সম্পাদকের জন্য বরাদ্দ। সেখানে ইট–পাথর ছড়ানো, দরজার ওপরে ঝুলছে ম্লান হয়ে যাওয়া একটি নামফলক। পাশের কক্ষটিতে নতুন তার ঝোলানো হচ্ছে, সুইচবোর্ড লাগানো বাকি। টেবিল–চেয়ার ভাঙাচোরা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। উত্তর দিকের আরেকটি কক্ষ এখনো সাংবাদিক সমিতির ব্যবহারে রয়েছে, যা শিগগিরই অন্যত্র সরিয়ে ফাঁকা করে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
শুধু কেন্দ্রীয় সংসদই নয়, কোনো কোনো হল সংসদেও একই চিত্র। মেয়েদের অধিকাংশ হলে অফিস কক্ষ বুঝিয়ে দেওয়া হলেও ছেলেদের হলে বিষয়টি অসম্পূর্ণ। খালেদা জিয়া হলের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তাদের অফিস কক্ষ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শাহজালাল হলের ভিপি আলাউদ্দিন সন্দ্বীপী বলেন, ‘আমরা অফিস কক্ষ বুঝে পেয়েছি।’ কিন্তু সোহরাওয়ার্দী হলের ভিপি নেয়ামত উল্লাহ ফারাবি বলেন, ‘আমাদেরকে এখনো কার্যালয় দেওয়া হয়নি, তবে প্রভোস্ট স্যার বলেছেন কার্যালয় সংস্কারের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের কাজও চলমান। কাজ শেষ হলে আমাদেরকে কার্যালয় বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’ অধিকাংশ হল সংসদগুলোর কার্যালয় এখনও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ ৩৫ বছর নির্বাচন না হওয়ায় কার্যালয়গুলো অচল অবস্থায় পড়েছিলো। এখন নির্বাচনের পর সবগুলো কার্যালয়ের সংস্কার চলছে। তবে সংস্কার কাজে প্রশাসনের গাফিলতির কারণে দেরি হচ্ছে বলে ধারণা করছেন চাকসু ও হলসংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। কেন্দ্রীয় সংসদের সহ–সভাপতি (ভিপি) ইব্রাহিম রনি বলেন, ‘ছাত্র সংসদ মাত্র এক বছরের জন্য। কিন্তু নির্বাচনের ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও অফিস বুঝে পাইনি। ভিসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন, ১০ নভেম্বরের মধ্যে আসবাবপত্রসহ অফিস বুঝিয়ে দেবেন।’ একইভাবে সহ–সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) আইয়ুবুর রহমান তৌফিক বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হয়েছে, শপথও হয়েছে। কিন্তু এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অফিস বুঝিয়ে দেয়নি। তবে অফিসে কি কি লাগবে তার চাহিদা আমাদের থেকে নিয়েছে। প্রশাসন বলেছে চাকসুর জন্য নতুন করে বাজেট অনুমোদন এবং কার্যালয় সংস্কারের পর দ্রুত বুঝিয়ে দেবে। আসলে প্রশাসনের গাফিলতির কারণেই এখনো চাকসুর অফিস অধরাই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াহইয়া আখতার বলেন, ‘এখনো কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে শিগগিরই বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ১৫ বছর ধরে স্থবির থাকা অতীশ দীপঙ্কর হলের নির্মাণকাজ শেষ করে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটা নিয়ে তো কেউ কিছু বলে না। মাত্র ২৪ দিন হয়েছে, তাতেই আপনারা রিপোর্ট শুরু করে দিয়েছেন।’