দীর্ঘ তিন দশকের অপেক্ষার পর অবশেষে প্রশস্ত হচ্ছে খাগড়াছড়ি–দীঘিনালা–সাজেক সড়ক। সরু ও আঁকাবাঁকা নকশার কারণে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ঘটনাপ্রবণ এই সড়কটি ছিল স্থানীয়দের কাছে এক প্রকার ‘মরণফাঁদ’। এবার প্রায় ৩৫ কোটি টাকার প্রকল্পে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ শুরু করেছে। সবকিছু অনুকূলে থাকলে প্রকল্পটি ২০২৬ সালের মার্চে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন দীঘিনালা, বাঘাইছড়ি, লংগদু ও সাজেকগামী যাত্রী ও পর্যটকরা চলাচল করেন। ১৯৮০ সালে নির্মিত এ সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার, যার প্রশস্ততা মাত্র ১২ ফুট। ভৌগলিক গঠনের কারণে সড়কে রয়েছে ৫০টিরও বেশি বাঁক। ফলে বড় যানবাহন চলাচল ও গাড়ি ক্রসিং প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে দুর্ঘটনা ও যানজট ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সরু রাস্তা ও বিপজ্জনক বাঁকের কারণে বহুবার ট্রাক, বাস ও পর্যটকবাহী জিপ খাদে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। দীঘিনালা নয়মাইল এলাকার বাসিন্দা গণেশ ত্রিপুরা বলেন, “রাস্তা এতটাই সরু যে, বড় কোনো গাড়ি এলে রাস্তা থেকে নামতে হয়। রাস্তাটি প্রশস্ত হলে আমাদের ভয় ও ভোগান্তি দুটোই কমবে।” একইভাবে স্কুলশিক্ষিকা প্রতিভা ত্রিপুরা জানান, “শিশুদের নিয়ে স্কুলে যাওয়া–আসায় সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়। হাঁটার জায়গা নেই বললেই চলে।”
স্থানীয় চালকরা বলছেন, সড়কটি দুই পাশে ছয় ফুট করে বড় করা হলে দুর্ঘটনার হার কমবে ও যাতায়াত স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে। তাদের মতে, বর্তমানে এই রাস্তায় জেলার অন্যান্য সড়কের তুলনায় যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেশি।
খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. আসলাম কালু বলেন, “জেলা মহাসড়ক সাধারণত ১৮ ফুট প্রশস্ত হওয়া উচিত, কিন্তু এই রাস্তাটি মাত্র ১২ ফুট। প্রশস্ত করলে বাঁকও কিছুটা কমবে, ফলে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।”
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান জানান, “খাগড়াপুর থেকে দীঘিনালা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। এতে রাস্তার প্রস্থ হবে ১৮ ফুট, ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বর্তমানে কাজ চলছে, এবং সাময়িকভাবে যান চলাচলে কিছু অসুবিধা হলেও এটি শেষ হলে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমে আসবে।”
প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে সাজেকগামী পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের যাতায়াত সহজ হবে, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।