চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ কাঠামো নিয়ে ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের অসন্তোষ দূর করতে আগামী সোমবার (১০ নভেম্বর) বৈঠকে বসছেন নৌ পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের আয়োজনে এ বৈঠকে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশে ৩৯ বছর পর নতুন ট্যারিফ কাঠামো কার্যকর করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আলোচনাবিহীনভাবে একতরফা সিদ্ধান্তে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে, যা পণ্যের আমদানি ব্যয় ৪১ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, প্রতি কেজি আমদানি পণ্যে মাত্র ১২ পয়সা বৃদ্ধি করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে এর প্রভাব পড়েছে পণ্য পরিবহন খরচে। গেট ভাড়া বৃদ্ধির পর ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছিল বন্দর কার্যক্রম।
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, “স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। ধাপে ধাপে তা নির্ধারণ করা হলে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিতে পারতেন।”
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, ১০ নভেম্বরের বৈঠকে নৌ উপদেষ্টা ট্যারিফ, চার্জসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ে স্টেকহোল্ডারদের মতামত শুনবেন।
এদিকে ২১টি বেসরকারি অফডক প্রতিষ্ঠানও গত সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ থেকে ৬২ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনকে (বিকডা) এ বিষয়ে জবাব দিতে আগামী ৯ নভেম্বর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে ডাকা হয়েছে। বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, ট্যারিফ সমন্বয়ের বৈধতা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হবে।
দেশের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে আড়াই লাখ কোটি টাকারও বেশি পণ্য ওঠানামা হয়, যা থেকে বন্দর ও অফডকগুলোর মুনাফা হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। তবু ট্যারিফ বৃদ্ধির ফলে আমদানি-রফতানি খরচ বাড়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এমএসসি শিপিংয়ের অপারেশন প্রধান আজমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, আগে একটি এলসিএল কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে খরচ ছিল ২৯২ ডলার, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,৫৮৪ ডলারে—যা অস্বাভাবিকভাবে বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্দর ও অফডকের নতুন ট্যারিফ দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে চাপ সৃষ্টি করছে এবং নিত্যপণ্যের বাজারেও প্রভাব ফেলছে। তবে নৌ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনাকে তারা সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।